নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। জীবনধারণের জন্যে জৈবিক আহারের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক আহারেরও প্রয়োজন মানুষের। এই ধারণা সাধু সন্তদের। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব তাঁর গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম প্রচারের মধ্য দিয়ে কেবল যে প্রেম ও ভক্তির প্রচার করতে চেয়েছিলেন শুধু তাই নয়, সেই আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমেই জগতের মানুষের কল্যাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। মহাপ্রভুর এই মতাদর্শকে পরবর্তীকালে ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদও প্রচার চেয়েছিলেন। নাম প্রচার ও গৌড়ীয় রসাস্বাদন প্রিয় মানুষের মধ্যে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগ্রন্থগুলিকে নবরূপে উপস্থাপন ও রসসম্পৃক্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ পরিবেশনের মাধ্যমেই। গৌড়ীয়, নদীয়া প্রকাশ, সজ্জন তোষণীর মতো পত্রিকাগুলি তারই পরিচয় বহন করছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন পত্র ও পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন গৌড়ীয় প্রবন্ধ, ভক্তজীবন ও সমকালীন বিষয়ক গৌড়ীয় মঠে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উৎসব, ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সঙ্গে বিভিন্ন গুণী ব্যক্তির কথোপকথনও আপামর মানুষের শ্রবণে পৌঁছে দিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের মাহাত্ম্যকে তুলে ধরা এবং গৌড়ীয় সন্ত জীবনী ও বাণীকে আধুনিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বাগবাজার গৌড়ীয় মঠের উদ্যোগে শুরু হল ‘জীবাতু’’ নামে এবার একটি অডিও বুক। জীবাতুর অর্থ হল জীবনধারণের আহার বা রসদ। সাধু সন্তরা মনে করেন, এই অডিও বুক শ্রবনের মাধ্যমে জীব অর্থাৎ মানুষ তার আধ্যাত্মিক আহার বা জীবনধারণের আহার বা রসদ পেয়ে যাবেন।
শুধু তাই নয়, বিশ্বজুড়ে প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যাও বহু। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাকে সামনে রেখে তাঁদের কাছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের বাণী ও কর্মকাণ্ডকে অডিও ফর্মে নতুনভাবে পোঁছে দেওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য। আধুনিক শ্রোতাদের কথা ভেবেই মূল প্রবন্ধের ভাবকে বিকৃত না করে কিছুটা ভাষার সরলীকরণ করে পরিবেশন করা হয়েছে ।
গৌড়ীয় মঠ ও ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে সোমবার এই ‘জীবাতু’ অডিও বুকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গৌড়ীয় মঠের আচার্য্য ও সভাপতি শ্রীমৎ ভক্তি সুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ। তিনি বলেন, ‘জীবাতু’ – দ্বারা আপামর বাংলা ভাষী বা বাংলা জানা মানুষের কাছে গৌড়ীয় সন্তদের জীবনী এবং প্রভুপাদ, গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের কর্মকাণ্ড ও গৌড়ীয় দর্শন পৌঁছে দেওয়া যাবে। মানুষ কর্মব্যাস্ততার মধ্যেও এটি শুনতে পারবেন।
গৌডীয় বৈষ্ণব ধর্মের নানান দিক, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্য, পুরাণ এবং মহাপ্রভুর জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে চলেছে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার। রিসার্চ সেন্টারের ডিন ড. সুমন্ত রুদ্র বলেন,সামনেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই কথা মাথায় রেখেই বাংলা ভাষায় গৌড়ীয় মতাদর্শকে রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
Be First to Comment