আজ স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার ১৩০ বছর
বাবলু ভট্টাচার্য : আজ সেই ১১ সেপ্টেম্বর৷ ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন৷ ১৮৯৩ সালের আজকের এই দিনে প্রথম বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববাসীকে মুক্তির মন্ত্র দিয়েছিলেন৷
শিকাগোর বিশ্ব ধর্ম মহাসভা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের চারশো বছর পূর্তি উপলক্ষে আমেরিকা এক বিরাট মেলার আয়োজন করেছিল৷ নাম দিয়েছিল কলম্বিয়ান এক্সপোজিসন৷
এই মেলায় অনেকরকম প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল৷ তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ছিল ধর্ম মহাসভা৷ পৃথিবীর ইতিহাসে এইরকম ধর্মসভা সেই প্রথম৷ এই প্রথম পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলো একমঞ্চে মিলিত হবে, তাদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করবে৷ ধর্ম মহাসভার জন্য স্থান নির্বাচিত হয়েছিল শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে৷
১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, সোমবার ধর্ম মহাসভা শুরু হয়৷ ঠিক দশটার সময় আর্ট ইনস্টিটিউটের কলম্বাস হল-এ সমবেত দশটি ধর্মের উদ্দেশ্যে দশটি ঘন্টাধ্বনি হয়৷ দ্বিতীয় অধিবেশনে চারজনের পর স্বামীজী বক্তৃতা দিতে উঠলেন৷ যেই তিনি সম্বোধন করলেন–
‘সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা’। সাত হাজার দর্শক-শ্রোতা উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন সেই তরুণ সন্ন্যাসীকে। দু’ মিনিট ধরে চলল হাততালি। ফলে সেই সন্ন্যাসীর জন্য বরাদ্দ সময় বাড়াতে বাধ্য হলেন উদ্যোক্তারা। আমেরিকা-সহ বিদেশ জয় শুরু হল স্বামী বিবেকানন্দের।
সংক্ষেপে বললেন : ‘আমরা শুধু সকল ধর্মকে সহ্য করি না, সকল ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করি’৷
১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে বসেছিল ‘দ্য পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নস’। সে দিন আমেরিকাবাসীর মন কেড়ে নেওয়ার ফলস্বরূপ ১১ সেপ্টেম্বরের পরে আরও পাঁচ দিন ১৫, ১৯, ২০, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর বক্তৃতা করতে হয়েছিল স্বামীজিকে।
শিকাগোর প্রথম দিনের বক্তৃতাই স্বামীজীকে আমেরিকায় পরিচিত করে তুলল৷ আমেরিকার পত্র-পত্রিকাগুলো তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল৷ ‘দ্য হেরাল্ড’ পত্রিকা লিখল : “ধর্ম মহাসভায় স্বামী বিবেকানন্দই অবিসংবাদিত রূপে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি৷”
স্বামীজীর বক্তৃতার শেষ বাণীটি ছিল- “বিবাদ নয়, সহায়তা৷ বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ৷ মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি”৷
Be First to Comment