সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, বিবেকানন্দ বলেছিলেন, জীবে প্রেম করে যেই জন ,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।কিছু মানুষ আছেন,যারা বিবেকানন্দের সেই বাণী ধার করে একটি শব্দের সামান্য হেরফের করে বলে থাকেন, জিভে প্রেম করে যেই জন ……..। ফ্রান্সএই বক্তব্যে বিশ্বাসী মানুষজনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। গুরমে অর্থাৎ ভোজনবিলাসী,আর গুরমা। অর্থাৎ ভোজন প্রিয়।
বাংলার সইদ মুজতবা আলী লিখেছেন, ভোজন প্রিয় আর ভোজন বিলাসীদের কথা।একদল শুধু খেতে ভালোবাসেন। অনেকটাই।কেউ খাদ্য খান কম পরিমাণে।কিন্তু চব্য চোষ্য,লেহ্য, পেয়’র গন্ধ স্বাদ রং ও খাদ্যের গুণমান বিষয়ে অবগত হয়ে।
পাঠক যে দলেই থাকুন না কেন সবাইকে বলবো ,বন্ধুবান্ধব বা আপনার বিশেষ কাউকে নিয়ে ঘুরে আসুন দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কসংলগ্ন প্রিয়া সিনেমায় রেস্তোরাঁ বার্ন গার্লিকে ।বার্ন গার্লিক।অর্থাৎ পোড়া রসুন।নামেই চমক ।বাঙালির প্রিয় চাইনিজ সব খাদ্যেই রসুনের আধিক্য দেখা যায়।কারণ সারা পৃথিবীর ৬০শতাংশ রসুন উৎপাদন হয় চিনে।ইউরোপীয়ান প্রবাদ, ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ার এর হাত থেকে বাঁচতে ঘরে রসুনের মালা ঝোলানোর রীতি আছে। হোয়াইট ম্যাজিক করতেও রসুনের কথা বলা হয়।মুসলিম ধর্মে অবশ্য রসুন খেয়ে মসজিদে যাওয়ার নিষেধ আছে।হিন্দু ধর্মের পুজোআচ্চায় রসুন ত্যাজ্য। ব্রাত্য রসুন বলতেই পারে ,ভেঙেছ কলসির কানা,তাই বলে কি প্রেম দেবো না?বিজ্ঞান কিন্তু রসুনকে ব্রাত্য করেনি।বরং স্বাস্থের জন্য রসুনকে সমাদর করে।সে কাঁচা হোক,বা পোড়া।মানুষের দেহ জুড়ে ৭৫অংশ আছে অ্যামিনো এসিড।আর রসুনে যা আছে অনেকটাই।মানুষ পৃথিবীতে ৭হাজার বছর আগে থেকে খাদ্যে রসুনের ব্যবহার করছে।গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটস্
সার্জন,এবং দার্শনিক প্যালন বলেছেন,সুদীর্ঘ জীবনের জন্য রসুন অব্যর্থ।সে যুগে যুদ্ধে সৈনিকরা এবং কৃষকেরা প্রাণ প্রাচুর্যের কারণে নিয়মিত রসুন খেতেন।হিন্দু শাস্ত্রে ৬৪ কলার মধ্যে রসুনকে স্থান দিয়েছে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগো লিখে গেছেন রসুন সম্পর্কে।এত গেলো নামকরণের সার্থকতার কথা ।
এবার বলি রেস্তোরাঁর কথা ।আলো আঁধারি পরিবেশ, নেপথ্যে গান,বসার আরামপ্রদ ব্যাবস্থা। ইউজ অ্যান্ড থ্রো কাপড়ের ন্যাপকিন।অভিজাত প্লেট আর বোল । স্টাটার থেকে মেন কোর্স।ডিজার্ট থেকে ককটেল।সব পাবেন।পাবেন দেশীয় বিদেশি সুরা। ন্যায্য দাম ।এখানে যেমন আছে কন্টিনেন্টাল ফুড, তেমন চাইনিজ বার্মিজ,থাই , ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া র সেরা খাদ্য সম্ভার।
চিকেন, ফিশ, সি ফুড যেমন আছে ,তেমনই আছে নিরামিষ খাদ্য। প্রথমেই মনপসন্দ ককটেলের অর্ডার দিন।ককটেলের বয়স মেরে কেটে দুশো বছর।ব্রিটেনের এক মিক্সোলজিস্ট প্রথম অ্যালকোহলে স্প্রাইট মিশিয়ে এক পানীয় পরিবেশন করেছিলেন। মানুষ তা লুফে নেন।এরপর থেকে নানা পদের ককটেল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে।এখানে আখের রস ,লেবুর রস ,ভদকা আর নানা ফলের স্বাদে ককটেল রীতিমত সম্পদ। সংস্থার দ্বায়িত্বে আছেন তরুণ তুর্কি গ্যভিন ব্যাপটিস্ট। তারা তলার প্রতিষ্ঠান থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট শেষ করে পার্ক হোটেলে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং। সেখান থেকে চেন্নাই।আবার ফিরে আসা কলকাতায়। ঝরঝরে বাংলা বলেন।জানালেন, এই রেস্তোরাঁয় খাদ্যে কিম্বা পানীয়তে কোনো সমঝোতা করা হয় না।আমরা প্রয়োজনীয় কাঁচা বাজার করি সেরা জিনিস। ককটেলে কোনও কৃত্রিম ফলের রস নয়,আসল ও টাটকা ফল দিয়ে বানাই। একবার খেলেই বোঝা যায়। বেশ কিছু সিগনেচার ডিশ আছে আমাদের । নতুন প্রজন্মের পছন্দের বার্গার, পাস্তা, পিৎজাও আছে খাদ্য তালিকায়।চেখে দেখতে পারেন মালয়েশিয়ায় নাসি লেমাক।ভাত মুরগির ঝোল ডিম,নারকেল দুধ,আর ছোট সামুদ্রিক মাছের এক অপূর্ব সম্মেলন। খেতে পারেন নাসি মি গোরেং। ফ্রাইড রাইস সুইট সোয়া সস দিয়ে জারানো টফু চিকেন সতে।।এছাড়া স্টাটারে পর্ণ ক্রেকার,বা বেকন ওয়ারপড পর্ণ। গ্যভিন জানান, কন্টিনেন্টাল ও প্রতিটি বিদেশি রান্নার প্রয়োজনীয় মসলা বিদেশ থেকে আনানো হয়। অনেক সুরারসিক আছেন যারা টাকিলা চেখে দেখেননি এখনও।তাদের বলি, দুদিনের জীবনে টাকিলা গলায় না ঢেলে পাপের ভাগী হবেন না ।নির্ভেজাল ব্লু এগভি উদ্ভিজ্জ থেকে টাকিলা তৈরি হয়।সাদা বা সোনালী টাকিলা। যে কোনো একটা চেখে স্বর্গীয় স্বাদ অনুভব করুন।তবে হ্যাঁ,মনে রাখবেন টাকিলা খে তে শুরুর আগে ভুলেও চিয়ার্স বলবেন না ।
পেশাদার সুরাপায়ীরা আপনাকে অশিক্ষিত বলবে।আপনাকে বলতে হবে স্যালুট।আগামী ১৯এপ্রিল,অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের কয়েকদিন পর বিশ্বে পালিত হবে বিশ্ব রসুন দিবস।সেদিন আপনার প্রিয়াকে নিয়ে প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহে দেখে আসুন একটি প্রেমের ছবি।তারপর লাঞ্চ বা ডিনারটা সেরে ফেলুন প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহ সংলগ্ন বার্ন গার্লিক পানশালা আর রেস্তোরাঁয়। গ্যভিন ব্যাপটিস্ট এর উষ্ণ অভ্যর্থনা আর জিভে জল আনা ব্যাপক স্বাদের খাদ্য ও পানীয় আপনাকে ফিদা করে দেবে তা হলফ করে বলতে পারি ।দল বেঁধে যেতে পারেন বা বিশেষ কোনও একজনকে সকলের নজর এড়িয়ে কিছুটা সময় মদিরতায় ভেসে যেতে বার্ন গার্লিক সেরা গন্তব্যস্থল।
Be First to Comment