Press "Enter" to skip to content

ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রাণ বাঁচাল ১৬ বছর বয়সী যুবকের, চিকিৎসায় নতুন মাইলফলক তৈরি করল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল….।

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি :  কলকাতা, ২ই জুলাই, ২০২৩। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারী হসপিটাল চেন অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী হল যেখানে বাংলা তথা পূর্ব ভারতের প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন সফলভাবে করা সম্ভব হল। এই প্রতিস্থাপন করা হল ১৬ বছর বয়সী স্বপ্নিল বিশ্বাসের, যে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল দুর্ভাগ্যবশতঃ প্যারাকোয়াট খেয়ে ফেলার জন্য। দেখা গিয়েছে যে প্যারাকোয়াট খুবই বিষাক্ত এবং এই কারণে মৃত্যুহার খুব বেশি এবং এর পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই বললেই চলে।
হসপিটালে এই অস্ত্রোপচার করা হয় গত ২৪শে জুন, যেখানে যুক্ত ছিলেন ডঃ কুণাল সরকার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডঃ দীপাঞ্জন চ্যাটার্জি, ডিরেক্টর ইকমো এবং থোরাসিক অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম, ফিজিশিয়ান, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের কার্ডিওপালমোনারি কেয়ার স্পেশালিস্ট। এছাড়া এই অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিলেন ডঃ সৌমজিত ঘোষ, ডঃ সপ্তর্ষি রায়, ডঃ এম বি দা, ডঃ তনগনিকা কোলে, ডঃ হীরক মজুমদার, ডঃ ঋতুপর্ণা দাস, ডঃ শৈবাল ত্রিপাঠী এবং মি.দেবলাল পণ্ডিত। পুরো রাত ধরে এই অস্ত্রোপচার হয় এবং ২৫শে জুন সকালবেলায় এই অস্ত্রোপচার শেষ হয়।
১৬ বছর বয়সী পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের স্বপ্নিল বিশ্বাসকে গত ২৭শে এপ্রিল একটি স্থানীয় হসপিটালে ভর্তি করা হয় যখন সে ভুল করে প্যারাকোয়াট নামক এক ভয়ঙ্কর বিষ তথা হারবিসাইড খেয়ে ফেলে। ৪ই মে তাকে ডিসচার্জ করে দেওয়ার পর ১৪ই মে নাগাদ তার খুব শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এই অবস্থায় তাকে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়। শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বেড়ে গেলে তাকে ১৮ই মে ইনকিউবেশনে দেওয়া হয়। রিফ্রেকটরি হাইপোক্সিয়ার কারণে তাকে ভেনোভেনাস ইকমো সাপোর্টে রাখা হয় ওই একই দিনে। এরপর চেস্ট সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে যে স্বপ্নিলের ফুসফুস ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফুসফুসে ফাইব্রটিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি যেভাবে গুরুতর হতে থাকে এবং ৩৭ দিন ধরে ভেনোভেনাস ইকমো সাপোর্ট দেওয়ার সত্ত্বেও কোন উন্নতি না হওয়ায়, মেডিক্যাল টিম এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছয় যে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে হবে।

ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য হসপিটাল একটি দেশব্যাপী অনুরোধ করে অঙ্গের জন্য এবং রোটো (ROTTO) পূর্বাঞ্চল খুব দ্রুত এগিয়ে আসে। অঙ্গদানের ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। গত ২৩শে জুন মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল রোটো (ROTTO) এবং নোটো (NOTTO) র থেকে জানতে পারে যে ভুবনেশ্বরের সাম আল্টিমেট হসপিটালে ৪১ বছর বয়সী প্রসেনজিৎ মোহান্তিকে ব্রেন ডেড করা হয়েছে এবং ফুসফুস দান করার ক্ষেত্রে উপযোগী। কোন বিলম্ব না করে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের ফুসফুস প্রতিস্থাপন টিম ২৩ শে জুন পৌঁছে যায় ভুবনেশ্বর এবং ফুসফুস নিয়ে পরের দিন অর্থাৎ ২৪শে জুন হসপিটালে ফিরে আসে।
বর্তমানে, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পর স্বপ্নিল স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ইকমো সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে ভেন্টিলেশনের সাপোর্ট কমিয়ে দেওয়া হবে। মেডিক্যাল টিম প্রতিটি মুহূর্ত নজরে রাখছে এবং উপযুক্ত পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযোগ্য খেয়াল রাখছে যাতে অচিরেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে স্বপ্নিল।
অস্ত্রোপচার নিয়ে বলতে গিয়ে, ডঃ কুণাল সরকার মন্তব্য করেন,” সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বারাসাতের ১৬ বছর বয়সী রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছিল জীবন বাঁচানোর একমাত্র আশা। ছেলেটির সঙ্কটজনক অবস্থা এবং ইকমোতে সাড়া না দেওয়ার ফলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া অন্য বিকল্প ছিল না। আমরা খুবই খুশি যে পুরো পদ্ধতি সাফল্যের সাথে করা গিয়েছে এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ ভাবে সেরে ওঠার পথে রয়েছে ছেলেটি।”
ডঃ দীপাঞ্জন চ্যাটার্জি বলেন,” প্রায় ৩৭ দিনের দীর্ঘ প্রস্তুতির পর আমরা মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে সফলভাবে সর্ব প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। বলাই বাহুল্য, আমরা ভীষণ ভাবে আপ্লুত এবং কৃতজ্ঞ যে সময় মতো কার্যকরী ফুসফুসের বন্দোবস্ত করতে পেরেছি। রোগীর জীবনের ক্ষেত্রে এরকম সাফল্যে আমরা গর্ববোধ করছি এবং সব সময়ের মতো সামনের দিনেও দায়বদ্ধ থাকব মানুষের জীবন বাঁচানোর দিকে।

 

আর উদয়ন লাহিড়ী, সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটালস, বলেন,” এই সাফল্য প্রমাণ করে আমাদের নিরবিচ্ছিন্ন দায়বদ্ধতা বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে। মেডিকার দক্ষ পেশাদাররা, তার সাথে আধুনিক প্রযুক্তি এবং তার সাথে রোগীর লড়াকু মনোভাব এই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে সাহায্য করেছে, যার জন্য আমরা যারপরনাই গর্বিত। আমরা প্রয়াত প্রসেনজিৎ মোহান্তির পরিবারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। স্বপ্নিলের মধ্যে উনি বেঁচে থাকবেন এবং সবাই মনে রাখবেন ওনার এই অবদানের কথা। এর সাথে সাথে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দানের দিকটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সাধারণ মানুষ যদি এরকম ভাবে আরো এগিয়ে আসেন, তাহলে আরো বেশি মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে। আমরা ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ ওডিশা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের কাছে কারণ তাদের সহায়তা ছাড়া ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতা ফুসফুস নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। এছাড়া আমরা কৃতজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে, তাদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য, যা এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।”
অয়নাভ দেবগুপ্ত, সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা হসপিটালস, মন্তব্য করেন,”আমার হসপিটালে আমাদের সব সময়ই প্রচেষ্টা থাকে সমস্যাকে জয় করা এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এগিয়ে সাফল্যের মুখ দেখা। এর জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনকে গ্রহণ করি এবং পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র আপোষ করি না। এই সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপন আবারও প্রমাণ করে যে আমাদের টিম কিভাবে দায়বদ্ধ সমাজে সেই সব মানুষের কাছে যাদের সত্যি প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য যা রোগীর পরিবারকে অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। রোগী এখন সেরে ওঠার পথে। আমাদের স্থির বিশ্বাস, সময়ের সাথে এবং উপযুক্ত দেখভালের সাথে এই রোগী সামনের দিনে অচিরেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।”


মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল ভীষণ গর্বিত এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এবং সব সময়ের মতো ভীষণ ভাবে দায়বদ্ধ রোগীদের বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এই সাফল্য স্বাভাবিক ভাবেই তুলে ধরেছে কিভাবে এই হসপিটাল পূর্ব ভারতে চিকিৎসা পরিষেবায় একাগ্র থেকে এগিয়ে চলেছে।

More from HandicraftsMore posts in Handicrafts »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.