স্মরণঃ হ রী ন্দ্র না থ চ ট্টো পা ধ্যা য়
ব্রররররর গুররররর ফিঁইইশশশশশ,
নিরুউউউশশশশ,
গুররররর গুশশশশ…
বাবলু ভট্টাচার্য : এ রকমই আশ্চর্য উদ্ভট ভাষায় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলত বরফি, ‘গুগাবাবা’-র সেই বিখ্যাত জাদুকর৷ আর ‘বরফি’-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যিনি, তিনি হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
১৮৯৮ সালের ২ এপ্রিল তেলেঙ্গানায় জন্মেছিলেন হরীন্দ্রনাথ। তাঁর দিদি বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতের নাইটিঙ্গেল সরোজিনী নাইডু, অন্যদিকে দাদা বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ভারতের বামপন্থী রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

হরীন্দ্রনাথ নিজেও বাম মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভায় তিনি সংসদ সদস্য হন৷ জিতেছিলেন তখনকার মাদ্রাজ রাজ্যের বিজয়ওয়াড়া কেন্দ্র থেকে৷ ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন৷ নির্দল প্রার্থী হিসাবে জিতলেও তাঁকে সমর্থন করেছিল তখনকার অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি৷
মাত্র দশ বছর বয়সে শুনেছেন হরীন্দ্রনাথ ক্ষুদিরামের ফাঁসির সংবাদ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরামের মৃত্যু গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর মনে। ইংরেজি ভাষায় ঐ বয়সেই একটা আস্ত কবিতা লিখে ফেললেন হরীন্দ্রনাথ, নাম দিলেন ‘ডাইং প্যাট্রিয়ট’।

১১ বছর বয়সে লিখে ফেলেছেন একটা গোটা নাটক– ‘আবুল হাসান’, সেই নাটক আবার মঞ্চস্থও হচ্ছে সেই বছর। তবে ব্যক্তিস্বার্থে সেই নাটক করেননি তিনি, নাটকের টিকিট বিক্রির টাকা পুরোটাই বালক হরীন্দ্রনাথ তুলে দিয়েছিলেন অ্যানি বেসান্তের হাতে তাঁর জাতীয় শিক্ষা তহবিলের জন্য।
পারিবারিক আবহ এভাবেই গড়ে তুলেছিল তাঁকে। ইংরেজি ভাষায় সেই যে প্রথম কবিতা লিখে ফেলেছিলেন তিনি, সেই চর্চা থামিয়ে দেননি হরীন্দ্রনাথ। এমনকি কেমব্রিজে পড়ার সময় তাঁর কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথও ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। কেমব্রিজের একটি কলেজে উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ফিস্ট অফ ইউথ’। দেশ বিদেশের বহু পত্র- পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। দ্য কফিন, এনসিয়েন্ট উইং, ডার্ক ওয়েল, দ্য ডিভাইন ভ্যাগাবন্ড, ব্লাড অফ স্টোনস, স্প্রিং ইন উইন্টার, দ্য উইজার্ড মাস্ক, ফাইভ প্লেজ ইত্যাদি অজস্র রচনা রয়েছে ইংরেজি ভাষায়।
বিখ্যাত ‘ইন্টারন্যাশনাল’ সংগীতের হিন্দি তর্জমা করেছেন, লিখেছেন সিনেমার প্রচুর গান। নিজেও সংগীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৪৪ সালে গণনাট্য কর্মীরা কলকাতায় তাঁকে দিয়ে একটি অনুষ্ঠান করায় সেখানে এককভাবে গান, হারমোনিয়াম বাদন, কবিতা আবৃত্তি করেন।
বোম্বাইতে থাকাকালীন চিত্রপরিচালক হৃষিকেশ মুখার্জির সাথে ঘনিষ্ঠতা জন্মে। তাঁর বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন হরীন্দ্রনাথ; যেমন, ‘আশীর্বাদ’, ‘সাহেব বিবি অউর গুলাম’, ‘রাত অউর দিন’, ‘তেরে ঘর কে সামনে’, ‘চল মুরারী হিরো বননে’, ‘বাবুর্চি’, ‘গৃহপ্রবেশ’ ইত্যাদি। ‘আজাদ’ নামে একটি ছবির প্রযোজনাও করেন তিনি।
সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘সোনার কেল্লা’য় অভিনয় করেছেন। শেষোক্ত ছবিতে সিধু জ্যাঠার চরিত্রে বাঙালির কাছে তিনি বহুল পরিচিত।

পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হন হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ১৯৯০ সালের আজকের দিনে (২৩ জুন) মুম্বাইতে মৃত্যুবরণ করেন।


























Be First to Comment