অর্জুন চক্রবর্তী : বিশিষ্ট অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী
ছেলেবেলা দুষ্টুমিতে ভরা।
বাড়িতে আলাদা জাতের আলাদা হুঁকো,
সবার নলচে মুখে নিয়ে দেখত জাত যায় কিনা !
বাব্বা, বুকের পাটাখানা দেখেছো ছেলেটার ?
তারপর কত ঘাত প্রতিঘাত, অভাব অনটন,
কিন্ত বুকের পাটায় এতটুকু চিড় ধরেনি বরং …!
উপোসী মায়ের মুখ দেখে স্থির থাকতে পারেনি,
দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো সেই মায়ের সামনে, যে সবার মা !
একটা চাকরি , দু মুঠো দু বেলা …।
চাইতে গিয়ে মুখ দিয়ে কথা সরলনা !
ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল মায়ের সামনে !
পেছন থকে উড়ে এল সেই ফোকলা দাঁতের উদাত্ত হাসি!
‘এই পাগলটা কি কোন তুক করল’ ?
“কিরে পারলি চাইতে ? যা যা আবার গিয়ে দাঁড়া, বল মনের কথা” !
সে গিয়ে আবার …! মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল কয়েকটা কথা !
“আমায় গ্যান দাও, বুদ্ধি দাও, বিবেক দাও”!
সেই শব্দ ধ্বনি তে নড়ে উঠল বিশ্ব সংসার, স্তব্ধ পশু পাখিরা !
মায়ের মুখ খানা তেল তেলে লাগছে !
মা কি শুনতে পেল ?
কান্নায় ভেসে যায় ওই ফোকলা মানুষটার মুখ চোখ !
কাঁপা গলায় মানুষ টা…না না মন্ত্র…নাকি মা বললো !
“ওরে তোর মোটা ভাত কাপড়ের অভাব হবেনা কোন দিন” !
ব্যাস ! সেই শুরু হল যাত্রা !
কত পথ অতিক্রম, কত অপমান, অবহেলা !
কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে স্থির সন্যাসী হওয়া ছেলেটা !
বাব্বা, বুকের পাটাখানা দেখেছো ছেলেটার !
সব ছেড়ে দিল কিন্তু মা ? তার দুঃখে কষ্টে ছুটে যায় তার কাছে !
মার কথা শুনলে সব ভুলে যায় !
এ কেমন সন্যাসী যে নিজের কাঁধে সর্বক্ষণ বয়ে বেড়ায় গৃহধর্ম !
সর্বক্ষণ হৃদয় জ্বলছে পবিত্র আগুনে !
আয়ু ক্ষয় হয় হু হু করে !
খুব কম বয়েস, তবে বেঁচে থাকার মত বাঁচা !
“পড়তে হবেনা, পুঁথি পুরান ফেলে দিয়ে খেলার মাঠে নামো,
মানুষের কথা মানুষ হয়ে ভেব তাহলেই সব হবে” !
চলে গেল দুষ্টু ছেলেটা, যাবার দুদিন আগে সবাইকে বলে গেল, “মায়ের যেন কোন কষ্ট না হয়”/
আজ ছেলেটার জন্মদিন !
খুব কষ্ট, চোখ জলে ঝাপসা, আর ভীষণ গর্ব বহন করে
মনে মনে আওড়াই।
“এই দুষ্টু ছেলেটা, আর একবার আয়না রে, তোকে দু চোখ ভরে দেখি,
তোর পা দুখানা জড়িয়ে একটু কাঁদি” !

(Tribute to Swami Vivekananda .)
Be First to Comment