Press "Enter" to skip to content

১৯৫২ সালে কুরোসাওয়ার ‘রাশোমন’ চলচ্চিত্র দেখার পর বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় বলেছেন— “আমার উপর এই ফিল্মের প্রভাব ছিল রোমাঞ্চকর….।

Spread the love

স্মরণ : আ কি রা কু রো সা ও য়া

“সারা দুনিয়ার চিত্রনির্মাতাদের ওপর কুরোসাওয়ার প্রভাব এতই গভীর যে তাঁর সঙ্গে আর কারও তুলনা চলে না”।

[ আমেরিকান নির্মাতা মার্টিন স্করসেস ]

বাবলু ভট্টাচার্য : যুদ্ধের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া একটি দেশকে বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই তার সিনেমার অনেকটা জুড়ে আছে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হিংস্রতা, বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি আকিরা কুরোসাওয়া— একজন পারফেকশনিস্ট চলচ্চিত্রকার।

জাপানের এ কিংবদন্তি নির্মাতা সিনেমার চিত্রভাষায় যে অবদান রেখেছেন, তা এককথায় অতুলনীয়।

কুরোসাওয়া ৩০টির মতো ছবি পরিচালনা করেছেন। আরও ৩০টি ছবির চিত্রনাট্য তাঁর লেখা। তাঁর হাতে নির্মিত হয়েছে ‘রশোমন’, ‘ইকিরু’, ‘সেভেন সামুরাই’, ‘থ্রোন অব ব্লাড’, ‘ইওজিম্বো’, ‘দারসু উজালা’, ‘র‍্যান’, ‘কাগেমুশা’র মতো অসাধারণ সব চলচ্চিত্র।

প্রায় সব কটি মর্যাদাকর চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে কুরোসাওয়ার ছবি। ১৯৫১ সালের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রশোমন’ পেয়েছিল গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার। ১৯৫৪ ও ১৯৫৯-এর বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান কুরোসাওয়া।

১৯৭৬ সালে ‘দারসু উজালা’ পায় অস্কারে সেরা বিদেশি ছবির পুরস্কার। ১৯৮০-তে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কাগেমুশা’ জেতে পাম ডিওর। ১৯৮১-তে ‘কাগেমুশা’র জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে কুরোসাওয়া জেতেন বাফটা পুরস্কার। ১৯৮৭-তে বাফটা পায় ‘র‍্যান’। ১৯৯০ সালে কুরোসাওয়াকে দেওয়া হয় সম্মানসূচক অস্কার। এ ছাড়া অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ১৯৪৩ সালের ‘সানশিরো সুগাতা’ এবং শেষ চলচ্চিত্র ১৯৯৩ সালের ‘মাদাদাইয়ো’। তাঁর দু’টি চলচ্চিত্র (রশোমন এবং দারসু উজালা) সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করে।

তিনি একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার, লেজিওঁ দনর সহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। অস্কার’সহ বিশ্বের চলচ্চিত্র সংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানই তাঁকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছেন।

এইখানে বলে রাখা ভাল কুরোসাওয়ার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক অবলম্বনে— ‘দ্য টেম্পেস্ট’, ‘কিং লিয়ার’ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়াও কুরোশাওয়া বিশ্বের অনেক মহান সাহিত্যিকের নাটক ও উপন্যাস নিয়ে কাজ করেছেন— যার মধ্যে দস্তয়ভস্কি ও ম্যাক্সিম গোর্কি অন্যতম।

তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে চলচ্চিত্র দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী চলচ্চিত্রকার ফেদরিকো ফেলিনি বলেছিলেন— “একজন চলচ্চিত্রস্রষ্টা কেমন হওয়া উচিত, কুরোসাওয়া তার জীবন্ত দৃষ্টান্ত।”

তাছাড়াও বর্তমান বিশ্বের চলচ্চিত্রকারদের উপর তাঁর কি বিশাল প্রভাব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৫২ সালে কুরোসাওয়ার ‘রাশোমন’ চলচ্চিত্র দেখার পর বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় বলেছেন— “আমার উপর এই ফিল্মের প্রভাব ছিল রোমাঞ্চকর। আমি পর পর তিনদিন ফিল্মটা দেখি এবং প্রতিবারই অবাক হয়ে ভেবেছি আর কোথাও কী এরকম আরেকটি ফিল্ম আছে যা ফিল্মের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্মাতার নিয়ন্ত্রণের দৃঢ় এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে।”

জাপানে চলচ্চিত্র সম্রাট বলে অভিহিত আকিরা কুরোসাওয়া ১৯১০ সালের ২৩ মার্চ জাপানের রাজধানী টোকিওর শিনাগাওয়া উপশহর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।

এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি কর্তৃক নির্বাচিত সর্বকালের সেরা পরিচালকদের মধ্যে আকিরা কুরোশাওয়ার অবস্থান ষষ্ঠ। শ্রেষ্ঠ ৫০ জন চলচ্চিত্রকারের মধ্যে তিনি একমাত্র এশীয় ও আমেরিকানদের বাইরে তাঁর অবস্থান সবার ওপরে।

আকিরা কুরসাওয়া ১৯৯৮সালের আজকের দিনে (৬ সেপ্ট) জাপানে মৃত্যুবরণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.