” সায়েটিকা ( SCIATICA ) !
—————————————-
ডাঃ দিপালোক বন্দোপাধ্যায় : ১৮ জুন ২০২২। কোমরের পিছন দিক থেকে পা পর্যন্ত ভীষণ ব্যথা ও আড়ষ্ট ভাব ফলে রোগী হাঁটাচলা এবং স্বাভাবিক কাজ করতে কষ্ট পেলে আমরা চিকিৎসকরা প্রথমেই ভাবি উনি “সায়েটিকায় ” ভুগছেন না তো ? আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় ও মোটা স্নায়ু বা নার্ভ হলো সায়েটিক নার্ভ ৷ মানব শরীরের লাম্বার স্পাইনের শেষ দিকের ভাটিব্রা বা কশেরুকা এল ৩,৪,৫ এবং স্যাকরাল স্পাইনের এস -১ থেকে থাই বা উরুর পিছন দিক থেকে হাঁটুর নিচের মাংসপেশী হয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত৷
ঐ নার্ভের উপর চাপ বা আঘাত থেকে যে লোব্যাক পেন বা ব্যথা হয় তাকে সায়েটিকা বলে ৷ডান ও বাঁ দুদিকে থাকে দুটি সায়েটিক নার্ভ ৷ দেখা যায় যেকোন একদিকে কোমরের পিছন থেকে পা পর্যন্ত স্নায়ুর ডিষ্ট্রিবিউশন অনুসারে কোমর থেকে পায়ের আঙুল অবধি তীব্র ব্যথা হয় ৷ অনেক সময় অবশ ভাব চলে আসে ৷ একেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে সায়েটিকা বলে ৷ সাধারণভাবে ২০ বছর বয়সের আগে এইরোগ হয় না ৷ চল্লিশ বছরের পরে ধরা পড়ে ৷ মানুষের শরীরের প্রতিটি ভার্টিব্রার নিচে নরম ইলাস্টিক কুশনের মত ডিস্ক থাকে ৷ এর পিছনে থাকে স্পাইনাল ক্যানাল ৷ এই ক্যানাল দিয়ে স্পাইনাল কর্ড বা স্নায়ুরজ্জু ও কিছু স্নায়ু যায় ৷ কম বয়সীদের ডিস্কে অনেকটা তরল থাকে ৷ যা জল ভরতি কুশনের কাজ করে ৷ কিন্তু বয়স জনিত কারণে ওখানে তরলের পরিমাণ কমে গেলে ডিস্কগুলির চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পায় ৷
কোন কারণে কোন ডিস্ক ফেটে গেলে ভিতরের অংশ বের হয়ে পিছনে স্পাইনাল ক্যানালে চলে এসে নার্ভের ওপর চাপ দেয় ৷ এভাবে সায়েটিকা হতে পারে ৷ লাম্বার হার্নিয়েটেড / স্লিপডিস্ক হলে , ইজমিক স্পনডিলোলিসথেসিস , লাম্বার স্পাইনাল স্টেনসিস, পিরিফর্ম মাংসপেশীর চাপে, স্যাকরোইলিয়াক জয়েন্টে ডিসফাংশান হলে হতে পারে ৷ স্নায়ু গুলো আমাদের মস্তিষ্কে শরীরের অনুভূতি বা সংবেদন এবং নড়াচড়া বা সঞ্চালনের তথ্য আদান প্রদান করে ব্যথা বুঝিয়ে দেয় ৷ অর্থাৎ , কোমরে জোরে আঘাত লাগলে , ভারী বোঝা বইলে , উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে, অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসে বা শুয়ে থাকলে ,গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলার পেট ফোলার জন্য নার্ভে চাপ পড়লে , ফরসেপ প্রসবের পরে, জরায়ুর টিউমারের চাপে , কোষ্ঠকাঠিন্যে ,এমনকি ভিটামিন বি-১, বি-৬, ,বি-১২ এর অভাবে এরোগ হতে পারে ৷
রোগীর ইতিহাস জেনে ক্লিনিকাল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলে অনেক সময় ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এম আর আই করে রোগ নির্ণয় করতে হয় ৷অনেক সময় ব্যথা কোমরের বদলে হাঁটুর নিচে মাংসপেশীতে হয় ৷ তীব্র কখনো কখনো তীক্ষ্ণ ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মত , কখনো জ্বালাপোড়া হয় ৷ হাঁচি কাশি হলে ব্যথা বাড়ে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি পঞ্চাশ জনে একজন জীবনের কোন না কোন সময় সায়েটিকার সমস্যায় ভোগেন ৷ আমরা চিকিৎসকরা সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করতে , ভারী ওজন তুলতে বারণ করি ৷ শক্ত বিছানায় ঘুমাতে বলি ৷ সেঁক দিতে বলি ৷ চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ ও নিয়ম মেনে চললে দরকারে ফিজিওথেরাপি করলে ভালো থাকা যায় ৷ হাঁটাচলা ও বেড়ানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে লাম্বার করসেট বা কোমরে বেল্ট ব্যবহার করতে হয় ৷ ভাঙা রাস্তায় গাড়ীতে চড়তে নেই ৷
গবেষণা বলছে এতে নব্বইভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যান ৷ তবে , সত্তর ভাগ কষ্ট কমলে আমরা চিকিৎসকরা বলি রোগী সুস্থ হয়ে গেছেন ৷ পায়ে অবশ ভাব অর্থাৎ নিউরোলজিকাল সিম্পটম থাকলে অর্থাৎ যদি দেখা যায় রোগীর পা নিজের কথা শুনছে না তখন সারতে বেশ দেরী হয় ৷ তবে ,গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ খেয়ে জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে , বিশ্রাম নিয়ে এবং ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম করে সত্তর ভাগ রোগী একমাসে সুস্থ হয় ৷
আশি ভাগ রোগী নিজের কাজে যেতে পারেন ৷ তবে ৩২% রোগীর একবছর পরে কিছু ব্যথা থাকে ৷ তাদের ইন্টারভেনশন পদ্ধতি নিতে হতে পারে ৷ কোন কোন ক্ষেত্রে সার্জারীরও প্রয়োজন হয় ৷
ছবি সৌজন্যে – গুগুল।
Be First to Comment