মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ২৯ মে ২০২২। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ওয়ার্ল্ড নো টোব্যাকো ডে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এবছর সিগারেট বর্জন করে স্বাস্থ্যের সঙ্গে পরিবেশের সুরক্ষা বজায় রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ধূমপান বিরোধী দিবস উপলক্ষে নারায়ণ সুপার স্পেসালিটি হাসপাতাল হাওড়ার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা গত শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সন্মেলনের মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার ডাক দিলেন।
আজ হয়ত সকলেই জানেন যে তামাক বা সিগারেট, বিড়ি গুটখা বা জর্দার মতো বিভিন্ন তামাকজাত পণ্যর নেশা বিভিন্ন ধরণের ক্যানসারের প্রধান কারণ। কিন্তু সংখ্যাটা ঠিক কত? হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের ৯০% ক্ষেত্রে দায়ী হল এই তামাক। আবার এর মধ্যে প্রধান ওরাল বা মুখের ক্যানসার। ভারতীয় উপমহাদেশেই সব থেকে বেশী জর্দা, গুটখা বা দোক্তার মতো চেবান বা মুখে রাখার মতো তামাকজাত পণ্যের নেশা করা হয় বলে ওরাল ক্যানসারেও আমাদের দেশ একেবারে প্রথম সারিতে।
নারায়ণ সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অংকোলজিস্ট ডাঃ বিবেক আগরওয়াল জানালেন যে ক্যানসার, হার্ট ডিজিজ ও অন্যান্য মারণ অসুখে আমাদের দেশে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১জন, দৈনিক ২২০০ জন এবং বছরে কমপক্ষে ৮ লক্ষ মানুষ মারা যান স্রেফ সিগারেট, বিড়ি আর গুটখা খেয়ে। প্যাসিভ স্মোকিং এর শিকার হয়ে মারা যান বছরে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ ।
এই হাসপাতালেরই অপর সিনিয়র অংকোলজিস্ট ডাঃ আশুতোষ দাগার কাছে জানা গেল স্মোকাররা সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে নিকোটিন ছাড়াও বেঞ্জিন, বিভিন্ন ধরণের নাইট্রোস অ্যামিন, ক্যাডমিয়াম ধাতুর কণার মতো বহু ক্ষতিকর রাসায়ণিক নিজের শরীরে টেনে নেন। এর মধ্যে অন্ততঃ আঠাশটি ‘কারসিনোজেনিক বা ক্যানসার উদ্দীপক। বিড়ি, চুরুট বা হুঁকোর মতো কোন কিছুর নেশাই সিগারটের মতো কম ক্ষতিকারক নয়। আবার গুটখা, জর্দা বা নস্যর মতো মুখে রাখা বা শোঁকার মতো তামাক উপজাতেও থাকে একই রকম ক্ষতিকর রাসায়ণিক দ্রব্য। এই জন্যই স্মোকিং বা জর্দা পান কি গুটখা ক্যানসার, হার্টের রোগ থেকে ইনফার্টিলিটি বহু অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টর বা প্রধান কারণ।
‘তামাক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’ এই বিধি সন্মত সতর্কীকরণ সকলেই জানেন কিন্ত নেশাকারীরা কেউই মানেন না। কারনটাই বোধ হয় বলেছেন আমেরিকান ঔপন্যাসিক মারিও পুজো তাঁর গড ফাদার উপন্যাসে। তাঁর কথায় ধূমপান ক্ষতিকর জেনেও কেউ ছাড়েন না কারন সকলেই জানেন যে সিগারেট খেয়ে কেউ আগামী কাল মারা যাবেন না। কিন্তু তামাকের স্লো পয়জনিং যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটি একজন শেষ পর্যায়ের ক্যানসার রোগীর কষ্ট দেখে বোঝা যায়। তাই উপস্থিত চিকিৎসক ও নারায়ণ সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালের পক্ষ থেকে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দ্রকান্ত এম ভি বিশ্ব ধূমপান বিরোধী দিবসের প্রাক্বালে সকলকে তামাক বর্জনের আহ্বান জানালেন।
Be First to Comment