মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, দু চার বছর নয়, টানা পঁয়ত্রিশ বছরের আইনী লড়াইয়ে ছিলেন তিনি ন্যায্য বিচারের আশায়। হ্যাঁ, অবশেষে বিচার পেলেন তিনি এক লহমায়। সৌজন্যে এই মুহূর্তে ন্যায় বিচারদানে নির্ভীক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। হ্যাঁ, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এক বয়স্কা শিক্ষিকার বহু প্রতীক্ষিত বকেয়া প্রাপ্য মেটানোর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। পঁচিশ বছরের বেতন বাকি ছিল এক স্কুল শিক্ষিকার ।এদিন কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, -‘ অবিলম্বে সুদআসলে ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার বেতন মিটিয়ে দিতে হবে’। এদিন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই রায়ের পর আবেগময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এই শিক্ষিকা।আদালতের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা জানাবার কোন ভাষা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। আদালত সুত্রে প্রকাশ, এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকার নাম শ্যামলী ঘোষ। বর্তমানে তিনি ৭৬ এর দোরগোড়ায় । হাওড়ার শ্যামপুরের একটি স্কুলে গত ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতার চাকরি পান । সেসময় শিক্ষক নিয়োগের সমস্ত নিয়মবিধি মেনে ইন্টারভিউ দিয়েই চাকরি স্থায়ী হয়েছিল তাঁর। তবে ঠিক চার বছরের মাথায় তাঁকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, -‘ তাঁর চাকরি আর নেই’। কেন, কি জন্য চাকরি গেল? তা অবশ্য জানানো হয়নি এই স্কুল শিক্ষিকা কে। গত ১৯৮০ সালের পর থেকে ওই শিক্ষিকাকে আর স্কুলে ঢোকার অনুমতি দেননি তৎকালীন প্রধান শিক্ষক। কোনও কারণ না দেখিয়েই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় -‘স্কুলে আর আসতে হবে না’। এরপর গত ২০০৫ সালে তাঁর অবসরের সময় পর্যন্ত টানা ২৫ বছর কোনও বেতনও পাননি তিনি। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানিয়ে দেয় – ‘বকেয়া ওই ২৫ বছরের বেতন ১০ শতাংশ সুদ-সহ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে শিক্ষিকাকে’। এ ব্যাপারে স্কুল পরিদর্শক এবং শিক্ষা দফতরকে একটি নির্দেশ দিয়ে আদালত জানিয়ে দেয় , -‘ আট সপ্তাহের মধ্যেই যেন বকেয়া বেতন মেটানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়’।এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার মামলাটি লড়েছেন আইনজীবী রবিলাল মৈত্র। আইনজীবী জানিয়েছেন, -‘ টানা ৩৫ বছর ধরে নিজের দাবি নিয়ে মামলা চালিয়া যাওয়া সহজ ছিল না। পদে পদে নিরাশ হয়েছেন শ্যামলী। তবু থেমে যাননি। লড়াই জারি রেখেছেন। ১৯৮০ সালে ওই ঘটনার পরই শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। তাঁর যোগ্যতার নিরিখে অর্জিত শিক্ষকতার চাকরি কেন কেড়ে নেওয়া হল? তা জানতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কাছে। কিন্তু শিক্ষা দফতর সেই আবেদনের কোনও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।এরপর ১৯৮৬ সালে আদালতের দ্বারস্থ হন শ্যামলী। সেখানেও মামলাটি চলতে থাকে দীর্ঘদিন। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট তাঁর পেনশনের ব্যবস্থা করলেও বকেয়া বেতনের ব্যাপারে কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর তাঁর আবেদনে সাড়া দিল আদালত’। এই দীর্ঘ আইনি লড়াই লড়তে এই শিক্ষিকার সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে গেছে বলা যায়।তবে দমে যাননি তিনি । হারও মানেননি। অবশেষে জিতলেন শিক্ষিকা শ্যামলী বসু। ৩৫ বছর ধরে লড়াই চালানোর পর সফল হলেন তিনি। জানা গেছে এই লড়াইয়ে মানবিক দিক দিয়ে সর্বদা পাশে ছিলেন বা রয়েছেন তাঁর আইনজীবী রবিলাল মৈত্র।
টানা ৩৫ বছরের আইনী লড়াইয়ে সুবিচার পেলেন ৭৬ এর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা….।

More from CourtMore posts in Court »
- মাত্র দেড় মাসে অপরাধ দমনে অনন্য নজির গুসকারা বিট হাউস পুলিশের…।
- স্নাতকোত্তরে ল’ কোর্স শুরু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে….।
- এটিএম কার্ড ফিরিয়ে দিল মঙ্গলকোটের ‘নিখোঁজ’ যুবক কে!….
- প্রয়াত বিচারকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোওয়ার আসর….।
- তিন দিন ব্যাপী আইন নিয়ে সেমিনার আয়োজিত হলো কিংস্টন কলেজে….।
- Historic Step Towards Legal Inclusivity: Constitution of India in Braille Version…..
Be First to Comment