সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় / গোপাল দেবনাথ : ১২ এপ্রিল ২০২২। গত সোমবার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, আসন্ন গ্লোবাল বিজনেস সামিটে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসতে চলেছে। সামিটে যোগ দিচ্ছে প্রায় ১৪ টি দেশ। তিনি আরও জানান, বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে জমির পরিমাণ ২২.৩৫একর। ২লক্ষ বর্গফুট জায়গা। তিন লাখ মানুষের জমায়েত হতে পারে। থাকছে দুটি বড় মাপের প্যাভিলিয়ন, ফুড কোর্ট ও ফুড প্লাজা, ব্যাংক, অফিস, একজিবিশন এলাকা, লবি প্রভৃতি। আশেপাশে রয়েছে বেশকিছু হোটেল। এই মুহূর্তে রাজ্যের পাখির চোখ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান।
সোমবার বিকেলে কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড এসোসিয়েশনের উদ্যোগে মেলা প্রাঙ্গণের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এক সাততারা বিশিষ্ট বিলাসবহুল হোটেলের বলরুমে উদ্বোধন হলো বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের (বি জি বি এস) এর লোগো। প্রদীপপ্রজ্জ্বলন এর মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার প্রথম নাগরিক ফিরহাদ হাকিম সাথে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বোস, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা সংগঠনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার সহ বিশিষ্টজন।
উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে ৭০টি সংগঠনে ও ১৫লক্ষ ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী সদস্যের এবং পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার ঘোষণা করেন , দেশের পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়িক সার্বিক প্রসারের স্বার্থে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির কথা। সুশীল পোদ্দার আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে সংগঠন হাওড়ার আমতায় ৪০০ একর জমির ওপর ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি শিল্প ও লজিস্টিক পার্ক তৈরি করছে। জমি ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। রাজারহাটেও ১ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গফুট এলাকায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে অন্য একটি অত্যাধুনিক বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।
রাজ্যে এই প্রথম কোনও এক ব্যবসায়িক সংগঠন একটি অঞ্চলের সার্বিক ব্যবসায়িক প্রসারে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে নজির সৃষ্টি করল। আমতা’র প্রকল্পে কর্মীদেরও থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে অঞ্চলের সমস্ত ব্যবসায়ীদের পরিকাঠামোগত সরঞ্জামের প্রয়োজন মেটানো সহজ হয়। রাজারহাটের প্রকল্পে দুটি ব্যবসায়িক সংস্থার লেনদেনে প্রতিবেশী দেশ সহ দূরের দেশের সংস্থাগুলিকেও যুক্ত করা হবে।
সুপারট্রনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং নির্বাহী অধিকর্তা ও সংগঠনের উপদেষ্টা ভি কে ভান্ডারী বলেন, পূর্ব ভারতে বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংগঠনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের সভাপতি ও সংগঠনের অন্যতম পরামর্শদাতা এন কে কাপাডিয়া বলেন, বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে যোগ দেওয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের বাণিজ্যিক চুক্তি সংগঠিত করতে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে।পারস্পরিক যোগসূত্রের কাজ করবে কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ।
সংগঠনের সহ সভাপতি রাজেশ ভাটিয়া বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পসংস্থাগুলি যাতে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন সে বিষয়ে পরামর্শ ব্যবসায়িক প্রসারে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রায় সংযুক্ত ব্যবসায়িক সংগঠন। ব্যবসায়িক সংগঠনের সাম্মানিক সাধারণ সম্পাদক সি কে বরদারাজন বলেন, পূর্ব ভারতে ব্যবসা ও বাণিজ্যের সার্বিক উত্তরণে একটি বলিষ্ঠ কাঠামো যেভাবে গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে যা লক্ষ্যপূরণের ক্ষেরে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
একসময়ে মাদ্রাজের মুদ্রার নাম ছিল প্যাগোডা।বাংলাকে বলা হতো প্যাগোডা ট্রি। এই গাছটিকে শেকড় থেকে উপড়ে দেওয়ার প্রয়াস ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু। পরবর্তী সময়েও বাংলার শিল্পের জন্য বিভিন্ন নেতিবাচক বিমাতৃসুলভ সিদ্ধান্তে বাংলা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে। ১৯৫১ সালে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার দেশের শিল্প উৎপাদক সংস্থা সম্পর্কে একটি সমীক্ষা করে। সেখানে দেখা যায়,পশ্চিমবঙ্গে রেজিস্ট্রিকৃত শিল্প সংস্থা ছিল ১৪২৯টি। যা ভারতে সর্বাধিক। কিন্তু ছয়ের দশকের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে থাকে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক রিসার্চ এস্টিমেটস অফ স্টেট এর হিসেব বলেছিল, ১৯৫০ সালে পণ্য উৎপাদনে বাংলা ছিল দ্বিতীয় রাজ্য।জনসংখ্যার ভিত্তিতে মাথাপিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলা ছিল প্রথম। ট্রেড ইউনিয়নের নামে একটি গণতান্ত্রিক শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি বিপথে পরিচালিত করে বাম নেতৃত্বের অজ্ঞানতা, মাশুল সমীকরণ নীতির অস্বচ্ছতা ও বাঙালির ব্যবসা না করার এক প্রবণতা। আজ কিন্তু অবস্থা অনেকটাই বদলেছে। বাংলার নতুন প্রজন্মের অনেকেই ব্যবসায় এগিয়ে এসেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। কিন্তু পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
জোরদার কায়েমী স্বার্থের এক দল বাঙালি ব্যবসায় বিমুখ প্রচার চালাচ্ছে। এমনই মত জানালেন সোমবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়িক সংগঠনের অনুষ্ঠানে হাজির এক বাঙালি ব্যবসায়ী অ্যাসেন্সিভ গ্রুপের চেয়ারম্যান অভিজিৎ চ্যাটার্জি। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের সরকার আর আর্থিক সংগঠন ও ব্যাংকগুলির ঋণদানের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বাঙালি ব্যবসার জগতে হারিয়ে যাওয়া সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারবেই
সুতরাং রাজ্যের শাসক দলের এক দায় থেকে যায়, বাঙালির ব্যবসায় উৎসাহিত করার কাজে সহযোগিতা করা। তাহলে বাংলা আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। বাংলার শিল্পবান্ধব মুখ্যমন্ত্রী নতুন বাংলার রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন।
Be First to Comment