অরুন সরকার রানা : ঢাকা, ৩ এপ্রিল ২০২২। শুভ জন্মদিন আলমগীর ভাই। চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির এই মহিরুহ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখার জন্য প্রয়োজন একটি বিশাল পরিসরের গ্রন্থ। এই ছোট্ট প্রতিবেদনে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা সম্ভব নয়। খুব ছোট্ট করে বলতে গেলে, লিখতে হয় তাই, যা আগেও লিখেছি। তবে, সুবিধা হলো, তাঁর সম্পর্কে জানেন প্রায় সকলেই। পুরো নাম মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর। অভিনয় শিল্পী, কন্ঠ শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। “বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট” এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সভাপতি। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর আদর্শের কথা বলা দূরের কথা, তাঁর নাম উচ্চারণেই সামরিক সরকার রুষ্ট, চলচ্চিত্রে জাতির পিতার ছবি স্ক্র্যাচ করে দেয়া হতো, ঠিক সেই সময়ে আলমগীর কুমকুমের সঙ্গে আলাপ করে, বেশ কয়েকজন সমমনাকে নিয়ে, নিজ অফিসে রাতে এক গোপন বৈঠক করেন নায়ক আলমগীর।
ওই বৈঠকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর কথা ও আদর্শ নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় “বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট”। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর কুমকুম আর প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়ার সহ সভাপতি নায়ক আলমগীর সাধারণ সম্পাদক সারাহ বেগম কবরী। তখন বাম ঘরানা সংস্কৃতিকর্মীরা তৎকালীন সরকারের সাথে গোপনে আঁতাত করেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে এগিয়ে আসেনি। সরাসরি বঙ্গবন্ধুর কথা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেনি। বুদ্ধিজীবী শিল্পী সাহিত্যিক আইনজীবি, শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র “মুখ ও মুখোশ” নির্মানের জন্য, তাঁর পিতা, কলিম উদ্দিন আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া, প্রথম অর্থ প্রদান করেন। কিশোর বেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি দূর্নিবার আকর্ষণ ছিলো অভিনেতা আলমগীরের। কলেজ জীবনে নাটক করেছেন অনেক। প্রথমে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, পড়াশোনা শেষ করার পর পৈত্রিক ব্যাবসার প্রতি বিশেষ কোন আকর্ষণ ছিল না তাঁর। শুধুমাত্র আকর্ষণ ছিলো অভিনয়ের প্রতি।
প্রখ্যাত পরিচালক প্রয়াত আলমগীর কুমকুম, ১৯৭৩ সালে তাঁকে “আমার জন্মভূমি” ছবিতে অন্যতম নায়ক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করেন। ওই ছবির শুটিং চলার সময়ই আরও প্রায় সাতটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন আলমগীর। নিজের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই শিল্পীকে। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক হিসেবেও সফল হয়েছেন। আলমগীর পরিচালিত প্রথম ছবি “নিস্পাপ”। ব্যাবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি, একজন দক্ষ নির্মাতা হিসেবেও তিনি যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর পরিচালনার সর্বশেষ ছবি “একটি সিনেমার গল্প”, ঋদ্ধ দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। ১৯৮০ দশকের গোড়ার দিক থেকে ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পের সামাজিক ব্যাবসায়িক ছবির মূল চালিকা শক্তি ছিলেন আলিমগীর এবং আলমগীর শাবানা জুটি। আলমগীর অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ২৩০ টি। কলকাতায় টলিউডের অভিনীত ছবি মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় ২৩৫ টি। কেবলমাত্র আলমগীর শাবানা জুটির ছবির সংখ্যা ১০৪ টি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বাধিক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতাও তিনি। পাশাপাশি জাতীয় পুরস্কারে পেয়েছেন “আজীবন সম্মাননা” ( life time achievement)। পৈত্রিক ঠিকানা ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবিনগর হলেও ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এই মহান অভিনেতা আলমগীর। জন্মদিনে ঐকান্তিক শুভেচ্ছা আলমগীর ভাইয়ের প্রতি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন জীবনের প্রতিটি বছর।
Be First to Comment