Press "Enter" to skip to content

নারী দিবসে প্রেসক্লাবে ডকু ফিচার মীরাস্ মিন্ডারস প্রদর্শিত হলো….।

Spread the love

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : আমেরিকার রোহোড ইসল্যান্ড কলেজের সোশিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তান্নি চৌধুরী পেশাগত অবস্থানের পাশাপাশি মহিলা গৃহকর্মী পরিচালিকাদের জীবনের বারমাস্যা নিয়ে ৪০মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ডকু ফিচার ছবি বানিয়েছেন। ছবির নাম মীরাস মিন্ডারস। এই মুহূর্তে পেশাগত কারণে প্রবাসী হলেও ছবির শুটিং ,সম্পাদনা করেছেন কলকাতাতেই।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরিচালক তান্নি চৌধুরী জানালেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি এই ছবি নির্মাণে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। বাংলার প্রান্তিক পরিবারের মেয়েরা সংসারের অভাব অনটনের সুরাহা করতে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে পথে নেমেছেন। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই কলকাতা শহর থেকে দূরে প্রান্তিক অঞ্চল থেকে বেশিরভাগ মেয়েরা আসেন শহরের বাবুদের বাড়ি। কিছু মহিলা যেমন রান্নার কাজ করেন, তেমন কিছু মহিলা গৃহ পরিচালিকার কাজ করেন। কিন্তু খাটুনির তুলনায় মজুরি যা পান তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। ফলে শিশু বা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পরিষেবা দেওয়ার কাজ বেছে নিয়েছেন অনেকে। প্রধানত আয়া সেন্টার থেকে তাঁরা কাজ পান। একটা মোটা পরিমাণ টাকা পারিশ্রমিক থেকে দিতে হয় সেই সেন্টারের মালিকদের। এছাড়া উপায়ই বা কি? অচেনা অজানা কাউকে বাড়িতে কেই বা ঢুকতে দেবে।

মূলত নারী পরিষেবাকারীরা অসংগঠিত শ্রমশক্তির পরিচয়ে পরিচিত। বাংলার এক বিশাল সংখ্যক প্রান্তিক মহিলারা আয়ার কাজে যুক্ত হয়েছেন। এঁদের কেউ দক্ষ, কেউ বা অর্দ্ধ দক্ষ। কেউবা সম্পূর্ণ অদক্ষ। সেই হিসেবেই তাঁদের দিন প্রতি মজুরি নির্ধারিত হয়। আজকাল একান্নবর্তী পরিবার ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ভবিষ্যত নিরাপত্তার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে দেশের অন্যত্র বা বিদেশে চলে গেছেন। ফলে কিছু বৃদ্ধ বাবা মা’ র স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। আর যাঁরা নিজের নীড়েই থেকে গেছেন তাঁদের ভরসা এই আয়ারা।

এছাড়াও নিত্য মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সংসারের খরচ সামলাতে মেয়েরাও ঘর ছেড়ে বাইরে পা রেখেছেন। শুধু আর্থিক সুরাহা নয়, ব্যক্তি অস্তিত্ব ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নেও শিক্ষিত মেয়েরা রোজগেরে হয়েছেন। ফলে মাতৃত্বকালীন ছুটি ফুরিয়ে যাওয়ার পর সমীক্ষা বলছে , দেশের কর্মরতা মহিলাদের প্রায় ৩৫শতাংশ চাকরি ছেড়ে দেন। বাকিদের ক্ষেত্রে সহায়ক হন আয়ারা। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রান্তিক মহিলাদের একটা বড় অংশ নিজের পরিবারে হিংসার শিকার হন। অনেকের স্বামীর মৃত্যুর কারণে সন্তান পালন ও নিজের খাদ্য সংস্থানের প্রয়োজনে নিরাপত্তাহীন আয়ার কাজে নাম লেখান। শুধু অনিশ্চিত চাকরি নয়, অনেক ক্ষেত্রে চাকরি ক্ষেত্রে যে পরিবারে কাজে যান সেখানে পুরুষ সদস্যের লালসার শিকারেরও ভয় থাকে। তবু জঠরের জ্বালায় সমাজের এক বড় অংশের প্রান্তিক মহিলারা এই পেশায় আসতে বাধ্য হন। অথচ এঁদের সমাজে প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

আয়া সেন্টারগুলি বিষয়টি যতটা ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখেন,তার যৎসামান্য যদি এই আয়াদের ন্যূনতম পেশাগত শিক্ষার ব্যবস্থা করত তাহলে উভয়পক্ষের জন্য ভালো হতো। পরিচালক অধ্যাপক এই ছবিতে তিনটি চরিত্রের অভিজ্ঞতার কথা তাঁদের নিজস্ব বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি কিছু নাট্য মুহূর্ত তৈরি করে দর্শকদের কাছে সহজবোধ্য করার চেষ্টাও করেছেন। মূল ছবিটি ৪০মিনিটের হলেও চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য কিছু অংশ সম্পাদনা করে দৈর্ঘ্য হ্রাস করা হয়েছে। চেষ্টা মহৎ সন্দেহ নেই। কিন্তু ডকু ফিচার বানানোর কিছু সুনির্দিষ্ট সূত্র আছে। তা অনুসরণ না করায় ক্লান্তিকর মনে হয়েছে। ছবির ক্যামেরাও কাঁচা হাতের কাজ মনে হয়েছে। কাহিনী নির্ভর দৃশ্যগুলির সংলাপ বলেছেন অভিনেতা অভিনেত্রীরা বাস্তব অনুশীলন ছাড়াই। তাই কষ্ট কল্পিত হয়ে থাকে। এমন প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। তাই ভবিষ্যতে ছবি তৈরির ক্ষেত্রে একটু পেশাদারী পরিচয় না দিলে পরিশ্রমের সার্থকতা মেলা কষ্টকর হয়ে যাবে।

ছবির ক্যামেরার দায়িত্ব পালন করেছেন সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদনায় অরিজিৎ বসু, আবহ সঙ্গীত ব্রচনা করেছেন নীলাদ্রি ব্যানার্জি, সহকারী পরিচালক নীল নওয়াজ, সিঞ্জন রায়। অভিনয়ে আছেন দেবলীনা সেন, সোমা চট্টোপাধ্যায়, দেবারুন, স্বরাজ, প্রিয়াংকা দে, সাগ্নিক মুখার্জি, সোমা ব্যানার্জি, চন্দন, অপরাজিতা ও তামো। আগামীদিনে এই বিষয়টির ব্যাপ্তি বিশাল আকার ধারণ করবে। তাই অসংগঠিত পরিষেবাগত কর্মীদের নিয়ে কিছু কাজ পেশাদারী দক্ষতার সঙ্গে পরিচালক তান্নি চৌধুরী করবেন এই আশা রইল।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.