Press "Enter" to skip to content

বেটোভেন চেয়েছিলেন সংগীতকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে৷ সৃষ্টি করেছেন তিনি সোনাটা, সিম্ফনি, বাজিয়েছেন পিয়ানো অর্কেস্ট্রা…..৷

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ বে টো ভে ন

বাবলু ভট্টাচার্য : তার যখন জন্ম তখন মানুষের কাছে সংগীতের খুব একটা গুরুত্ব ছিলনা৷ কিন্তু বেটোভেন চেয়েছিলেন সংগীতকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে৷ সৃষ্টি করেছেন তিনি সোনাটা, সিম্ফনি, বাজিয়েছেন পিয়ানো অর্কেস্ট্রা৷

তার রচিত কালজয়ী সব সিম্ফনি ও অন্যান্য সংগীত রচনা যুগে যুগে সংগীতকার ও শিল্পীদের প্রণোদিত করেছে, দিয়েছে দিকনির্দেশনা৷ তার নামেই বন শহরে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক বেটোভেন সংগীত উৎসব৷

ছেলেবেলাতেই সংগীতে হাতেখড়ি তার৷ বাবা চেয়েছিলেন মোৎসার্টের মতোই এক অবাক করা শিশু হবেন লুডভিগ৷ তাই সংগীতে কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে কেটেছে তার শৈশব৷ আর জন্মগত প্রতিভা তো ছিলই৷ সংগীতকে তিনি আনতে পেরেছিলেন মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে৷ সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য সোনাটা, সিম্ফনি; বাজিয়েছেন পিয়ানো, অর্কেস্ট্রা৷

তাৎক্ষণিকভাবে সংগীত রচনায় পারদর্শী ছিলেন বেটোভেন৷ মারকুস শিংকেল বেটোভেনকে জ্যাজসংগীতকারের সঙ্গে তুলনা করে বলেন– ‘‘সমসাময়িক অনেক সংগীতস্রষ্টার মতো বেটোভেনও তাৎক্ষণিকভাবে সংগীত রচনায় দক্ষ ছিলেন৷ আগে থেকে ঠিক করা স্বরলিপি ও সুর ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন তিনি বহু সংগীত৷ যেমনটি অনেক জ্যাজ সংগীতকারও করে থাকেন ৷”

সাত বছর বয়সে প্রথম জনসমক্ষে সংগীত পরিবেশন করেন শিশু লুডভিগ৷ ১৭ বছর বয়সে প্রিয় মাকে হারান তিনি৷ মাদকাসক্ত বাবার সঙ্গে সম্পর্কটা ছিল অনেকটাই শিথিল৷ ব্যক্তি বেটোভেন সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি, তার বেশির ভাগই পাওয়া গেছে তার দিনলিপি ও চিঠিপত্র থেকে৷

প্রচলিত কোনো কাঠামোতেই ফেলা যাবে না নিঃসঙ্গ ও অসাধারণ প্রতিভাবান এই ব্যক্তিত্বকে৷ চিঠিতে তিনি মানুষের মন্দ দিক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ নিজেকে খুব পরিশীলিত বলে দাবি করেননি কখনও৷ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না এই শিল্পী৷

বেটোভেনের চিঠি ও দিনলিপি থেকে যার যখন যা প্রয়োজন, সেই টুকুই বেছে নিয়েছেন৷ সেজন্য বেটোভেনের কোনো কোনো উক্তিকে হয়তো রাজনীতিগন্ধী বলে মনে হবে, যাতে রয়েছে প্রচ্ছন্ন বিদ্রোহের আভাস৷ আবার কোনো মন্তব্যে ফুটে ওঠে আভিজাত্যের দাম্ভিকতা৷ তাই পরবর্তীকালে একনায়ক শাসকেরা বেটোভেনের সংগীতের মাধুর্যকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করার সুকৌশলী প্রচেষ্টাও চালিয়েছে৷

বেটোভেনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, মাত্রাধিক অতিরঞ্জন বা তার সংগীতের ভুল ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই বলা যায় না৷ সংগীতে একটা দিক নির্দেশনা দেওয়াই ছিল তার লক্ষ্য৷ সংগীতেই সঁপে দিয়েছিলেন তিনি তার মনপ্রাণ৷

জীবনের অনেকটা বছর কাটিয়েছেন তিনি ভিয়েনায়৷ সেখানেই পেয়েছেন প্রভূত খ্যাতি ও সম্মান৷ সেই সাথে আর্থিক স্বাচ্ছল্যও৷ কিন্তু বিলাসের স্রোতে ভেসে যাবার মানুষ ছিলেন না প্রচলিত প্রথা বিরোধী এই সংগীতকার৷ বসবাস করতেন ভিয়েনা শহরের অদূরে সাদামাটা এক বাড়িতে৷ চেহারা বা পোশাকের পারিপাট্য নিয়ে মাথা ঘামাতেন না৷ ছিলেন চিরকুমার৷ সংগীতের জন্যই যেন ছিল তার বেঁচে থাকা৷ সকালে সংগীত রচনা, দুপুরে ভাল খাওয়া, বিকালে বেড়াতে যাওয়া– এই ছিল তার দৈনন্দিন রুটিন৷

বেটোফেনের অসংখ্য ছবি ও প্রতিকৃতি থেকে মানুষের মনে একটা ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে আছে– এলোমেলো চুল, গভীর দৃষ্টি, বিশাল মাপের এক সংগীত প্রতিভা৷ কিন্তু তার জীবনের নিদারুণ এক ট্র্যাজেডি, তার শ্রুতিহীনতার কথা একবারও কি মানুষের মনে পড়ে?

অল্প বয়সেই শ্রুতিজনিত এক সমস্যা দেখা দেয় তার– যা তাকে সবসময় পীড়িত করত৷ কিন্তু তবু সংগীত রচনা থেকে বিরত থাকেননি তিনি৷ ১৮১০ সালে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছন বেটোভেন৷ অন্যদিকে কানের অসুখটাও বাড়তে থাকে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বধিরত্ব আর রোধ করা যায়নি৷ এর মধ্যেই ১৮২৪ সালে জগদ্বিখ্যাত নবম সিম্ফনি শেষ করেন তিনি৷

মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ১৮২৭ সালের ২৬ মার্চ চিরবিদায় নেন ক্ষণজন্মা এই সংগীতস্রষ্টা৷

লুডভিগ ফান বেটোভেন ১৭৭০ সালের আজকের দিনে (১৭ ডিসেম্বর) জার্মানির বন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.