Press "Enter" to skip to content

কমল মিত্র মানেই বাঙালির পরিবারের কড়া ধাঁচের কর্তা মশাই, যার বকুনি মানেই হাড় হিম পরিস্থিতি……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ক ম ল মি ত্র

বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা ছায়াছবির রাশভারী দাপুটে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন দাম্ভিক চরিত্রের একমাত্র চরিত্রভিনেতা কমল মিত্র।

পরিবারে বরাবরই বনেদিয়ানার ছাপ ছিল, আর হবে নাই বা কেন পিতামহ জগবন্ধু মিত্র ছিলেন তখনকার নামকরা চিকিৎসক। যিনি স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আমন্ত্রণে চাঁদরা থেকে বর্ধমানে এসে ডাক্তারি শুরু করেছিলেন এবং পঞ্চম জর্জ কতৃক সাম্মানিক দরবারি মেডেলও পেয়েছিলেন।

কমল মিত্র মানেই বাঙালির পরিবারের কড়া ধাঁচের কর্তা মশাই, যার বকুনি মানেই হাড় হিম পরিস্থিতি। মন্ত্রশক্তি ও ভেষজের অদ্ভুত দৈব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।

রাজ কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুলশিক্ষা ও রাজ কলেজ গ্র্যাজুয়েশন উত্তীর্ণ হন। তাঁর ঠিক পর পিতার দৃষ্টিহীনতার জন্য চাকরি খুঁজতে খুঁজতে সবার অজান্তে সামরিক বাহিনীতে নাম লেখান। যদিও সেখানে কাজ করা হয়নি তাঁর। পরবর্তীকালে কালেক্টর হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি তাঁর অমোঘ টান তাঁকে নিয়ে হাজির করে রঙ্গালয়ের আঙিনায়।

সহজাত অভিনয় ক্ষমতা থাকলেও তাঁর নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায়ের জন্য তিনি পরিচিত, যা তাঁকে বিভিন্ন কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে সহায়তা করে। সে রাজা “কংস” হোক বা “মহিষাসুর”।

কালেক্টরের চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে অভিনয়ের জন্য কলকাতায় থাকতে শুরু করেন ‘টিপু সুলতান’ নাটকে ব্রেথওয়েট চরিত্রে বিপুল খ্যাতি অর্জন করে। জীবনের এই পর্ব কমলের কাছে ছিল সবচেয়ে কঠিন। খেয়ে, না-খেয়ে, বা একবেলা খেয়ে দিন কাটতো তাঁর। এইসব দিনগুলো তাঁকে করে তোলে “লৌহ কঠিন”।

‘কমল মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে আছেঃ ‘কংস’, ‘বিদ্যাসাগর’, ‘দেয়ানেয়া’, ‘আনন্দমঠ’, ‘জিঘাংসা’, ‘সব্যসাচী’, ‘লৌহকপাট’, ‘আশিতে আসিও না’, ‘সবার উপরে’, ‘বন্ধু’, ভানু পেল লটারী’, ‘শেষ অঙ্ক’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘চৌরঙ্গী’, ‘তিন ভুবনের পারে’, ‘হারমোনিয়াম’, ‘পিতাপুত্র’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘বর্ণালী’ ইত্যাদি।

দেবকীকুমার বসু থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমার আদি যুগের বহু খ্যাতিমান পরিচালকের ছবিতে যেমন কাজ করেছেন, তেমনই পরবর্তী কালে অজয় কর, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, রাজেন তরফদার এমনকী সত্যজিৎ রায়ের ‘পরশপাথর’ ছবিতে ছোট একটি পার্টির দৃশ্যেও তিনি ছিলেন স্ব-মহিমায়।

নাট্যচার্য শিশিরকুমার তাঁকে বলেছিলেন, “কমল নোট মুখস্ত করে এম এ পাশ করা যায়, কিন্তু যে লাইনে তুমি ঢুকেছ, এখানে শেখার শেষ কোনও দিন হবে না, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তোমাকে শিখতে হবে।” কথাটা কমল মিত্র আজীবন মনে রেখেছিলেন।

দেশ বিদেশের নানা বই জোগাড় করে অভিনয়কলাকে তিনি আয়ত্ত করেছিলেন আশ্চর্য নিষ্ঠায়। চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতা। শেষ বয়সে তাঁর সারা জীবনে সংগৃহীত বহু দুষ্প্রাপ্য বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার কলকাতার নন্দনের লাইব্রেরিতে দান করে দেন, কেবল চ্যাপলিনের আত্মজীবনীটি ছাড়া।

কাউকে কিছু না জানিয়েই কমল মিত্র সরে দাঁড়িয়েছিলেন অভিনয় জগৎ থেকে। যেমন অনাহুতের মতো তাঁর আগমন ঘটেছিল বাংলার চলচ্চিত্র ও রঙ্গালয়ে, তেমনই অনাড়ম্বর ছিল তাঁর প্রস্থান। বাংলা সিনেমার ‘রাগী পিতা’ বড় অভিমানে ক্যামেরার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

নিজের মৃত্যুর মুহূর্তকে কমল মিত্র আশ্চর্য ক্ষমতায় বুঝতে পেরেছিলেন। নিজের শ্রাদ্ধশান্তির যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। ছেলেমেয়েদের উপর কড়া নির্দেশ ছিল, কোনও ভাবেই যেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া না হয়।

তাঁর মৃত্যুশয্যার পাশে উপস্থিত স্ত্রী, মেয়ে, জামাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে, শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে উপস্থিত সকলের কাছে জীবনে স্বকৃত কোনও অজানা অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে, মৃত্যুর কোলে যেন সজ্ঞানেই ঢলে পড়েছিলেন। ঠিক যেমনটি বাংলা সিনেমায় হয়!

২ অগস্ট ১৯৯৩ সালে মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর ৮ মাস।

কমল মিত্র ১৯১২ সালের আজকের দিনে (৯ ডিসেম্বর) হুগলি জেলার চাঁদরার প্রখ্যাত মিত্র বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.