Press "Enter" to skip to content

“যখন ইনকাম করবে তখন থেকে নাটকের শো আর ফ্রিতে দেখবে না” – সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়…..।

Spread the love

গাজী আবদুন নূর : অভিনেতা, ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৫ নভেম্বর, ২০২১।  ক্লাসে বরাবর আমি এবং আমার বন্ধুরা অমনোযোগী। তবে ব্যতিক্রম হত কয়েকজন শিক্ষকের ক্লাসে। নাটক বিভাগের সবথেকে অমনোযোগী গ্রুপটার ক্লাসে উপস্থিতির হার সবথেকে বেশি! আমরা তো চাইতাম শনিবার এবং রবিবার ইউনিভার্সিটি খুলে দেওয়া হোক!
বিটি রোড এর ক্যাম্পাসের পর আমাদের আবেগের জায়গা ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর দালান, কুটি ঘাট, নন্দন চত্বর, গিরিশ মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন, অ্যাকাডেমী,
সিঁথির মোড় থেকে কুটিঘাট সাত টাকা অটো ভাড়া,
সেটিও পকেট না থাকার দরুন পায়ে হেঁটেই পৌঁছতাম সেখানে। বিভিন্ন ধরনের থিয়েটার দল এর শো দেখা আমাদের নেশার মত ছিল।
সেই নেশা মেটাতে কখনো যাওয়ার ভাড়া পকেট থাকলেও ফিরে আসা অথবা শো দেখার টিকিটের টাকা থাকতো না।
নাটকের শো দেখার ব্যবস্থা হত সেই দলে কাজ করা বন্ধুদের মাধ্যমে, সেই দলের পরিচিত কেউ না থাকলে উপায় হত নানা ফন্দি-ফিকিরে! কখনো সিকিউরিটি কে ম্যানেজ করে! কখনো সেই দলের লোক সেজে! আর এই কাজে মাস্টারমাইন্ড ছিল সম্রাট এবং ভাস্কর কানে ফোন নিয়ে এমন একটা ভাব করে গ্রিনরুমে ঢুকতো, তারপরে বেরিয়ে এসে আমাদের সবাইকে ধরে ঢুকিয়ে নিত, যেন সে সেই দলেরই লোক! কোন কোন দিন তাতেও লাভ হতো না ।
তেমনই একটা দিন সবকিছু এপ্লাই করে কোন লাভ হয়নি।
একাডেমিতে শো দেখার আপ্রাণ চেষ্টায় সর্বশেষ সম্রাট এবং ভাস্করের বুদ্ধিতে প্লান হলো একাডেমী তে যেদিক থেকে নাটকের সেট ঢোকে সেই শাটার তুলে আমরা ভেতরে ঢুকব!!
অনেকটা সাহস করেই আমি, সম্রাট, ভাস্কর সেই শাটার তোলার কাজ শুরু করলাম।
পেছনে তখন দাঁড়িয়ে ত্বিষা, সূর্যকন্যা, তনুশ্রী,
অনেকটা নিঃশব্দে কিছুটা তুলে দেখি আমার স্বপ্নের অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্যার!
তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধপ করে শাটার নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে এলাম নন্দনে। অপরাধবোধ কাজ করছিল, কিন্তু বন্ধু সম্রাট সহ কয়েকজন বড় কয়েকটা নাটকের দলে কাজ করার দরুন তারা পরিচিত ছিল। তাই ফিরে গিয়ে শো এর পর গ্রিনরুমে তাকে সরি বলতে যাওয়ার সাহস ছিল না।
একমাত্র আমি অপরিচিত মুখ, কোন নাটকের দলে তখনও জয়েন করিনি।
অপরাধবোধ এবং ভয় নিয়ে শো এরপর আমি গ্রিন রুমে গিয়েছিলাম।
শো এর পর গ্রিনরুমে অনেকেই দেখা করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবে ভির থাকে, আমি অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছিলাম।
দূর থেকেই চিনতে পারলেন!
হাতের ইশারায় ডাকলেন, আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানালাম ।
বুঝলেন, ভয় পাচ্ছিলাম!
হেসে দিয়ে বললেন, “দেখতে পেরেছ”?
মাথা নেড়ে আস্তে করে বললাম ‘ না’।
প্রশ্ন করলেন… “তোমার সাথে বাকিরা কোথায়”?
আমি বললাম, স্যার ভুল হয়ে গেছে এরম আর হবে না।
হেসে দিয়ে কাছে ডাকলেন
” এদিকে এসো”
কাছে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিলাম।
গড় গড় করে বলে ফেললাম বাংলাদেশ থেকে এসেছি, রবীন্দ্রভারতীতে পড়ছি…
আরো অনেক কথা যা আজ মনে নেই!
কিন্তু একটা কথা আজও মনে আছে থাকবে আজীবন।
স্যার বলেছিলেন
“যখন ইনকাম করবে তখন থেকে নাটকের শো আর ফ্রিতে দেখবে না”
স্কলারশিপ পাওয়ার পর থেকে আর কখনো নাটকের শো, হলে গিয়ে মুভি, ফ্রিতে দেখিনি। এবং কোন লেখক এর থেকে ফ্রিতে বই নেইনি।
আপনার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আমার পূরণ হলো না স্যার। কিন্তু আপনার ইচ্ছে আমি পূরণ করেছি স্যার।❤️??

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.