Press "Enter" to skip to content

” বিজ্ঞানের ‘বাইরে’ অন্য ‘কিছু’র খোঁজে”…..।

Spread the love

[[[ প্রদীপের সঙ্গে আলাপ = প্রলাপ  ]]] ( পর্ব ==০৯০ )
******DIRECT FROM THE DESK OF ********
\\\\\\ডঃ প্রদীপ চন্দ্র সরকার M.Sc., Ph.D.///////
\\জাদু-শিল্পী, মঞ্চ-মায়াবী P C Sorcar Junior//
President, “মায়া কুণ্ডলিনী”
Inner Core Circle, Illusion or Reality, ~~~~~MAGIC RESEARCH SOCIETY~~~~

” বিজ্ঞানের ‘বাইরে’ অন্য ‘কিছু’র খোঁজে ”
__________________________________

কলকাতা, ২ নভেম্বর ২০২১। গত শতকের গোড়ার দিকে, স্টিভেনশন-বাবু যখন প্রথম স্টিম ইঞ্জিন বানিয়ে, চালিয়ে লোককে অবাক করে দিয়েছিলেন, তখন অনেক বাঘা-বাঘা শিক্ষিত ব্যক্তি, চৌকস বুদ্ধিজীবী এবং বৈজ্ঞানিকেরা তারিফ করার সঙ্গে সঙ্গে, আক্ষেপ করেও বলেছিলেন, “যাঃ, সব শেষ হয়ে গেলো। বিজ্ঞানে আবিষ্কার করার মতো, আর বাকি নতুন কি-চ্ছু রইলো না । স–ব ফুরিয়ে গেল !”
তার পরে নাকি যখন, ভারতবর্ষে, রেলগাড়ির বিস্তার ঘটলো, তখন আমরা ষ্টিম ইঞ্জিনের হুইসেল, কু ঝিক্-ঝিক্ আওয়াজ, ভেতরের আগুণ, ওপর দিয়ে কালো ধোঁয়া , দুপাশ দিয়ে থেকে থেকে সাদা স্টিমের দীর্ঘশ্বাস, আর সাই-সাই করে চলা দেখে, যেন “লৌহ-দানব” , অপদেবতার আস্ফালন ভেবে, ভয় পেয়ে, দৌড়ে নাকি পালাতাম। তাকে তুষ্ট রাখতেই নাকি, ফুল-বেলপাতা-তুলসী পাতা, চন্দন ধূপ-কাঠি জ্বালিয়ে, শাঁখ বাজিয়ে প্রণাম করে পূজো করতাম। এতোই বোকা, বন্য, জংলি, অশিক্ষিত মানুষ নাকি আমরা।
‘পথের পাচালী’ সিনেমার কাশ ফুল, হোগলা-বনের পাশে যাবার পথে , লম্বা হাটার সময়, ভর আশ্বিন মাসে, জনমানব শূণ্য , চাষী বিহীন অবাস্তব নির্জনতা এবং দূরে দাঁড়িয়ে, কাশ ফুলের জঙ্গল থেকে অপু-দূর্গার রেলগাড়ি দর্শনের অভিজ্ঞতা, সেই ট্রেন-দানবের প্রতি ভীতিরই নাকি এক প্রামান্য চিত্র রূপ। এতই পিছিয়ে আছি আমরা। ইংরেজদের পরিকল্পনা মতো, ওদের পাঠ্য পুস্তকেও এই সব পূজো-টুজোর এবং আতঙ্কের গপ্পো, ছবি ছাপা হয়েছিলো। আমি বিদেশে গিয়ে এই সব ব্যাঙ্গাত্মক ফোড়ন আর বাজে প্রশ্নের সম্মুখীন হতাম। আমাদের এরকম “বোকামী” নিয়ে কতো হাসা হাসি, কতো রসিকতাই না করতো সাহেব আর তাদের মোসাহেবরা। তাতে ঢাকের কাসি বাজাতো আমাদের দিশী বেহিসেবিরা। বাঃ, বোদ্ধা, হীরের টুকরো, রতনে রতন চেনে -সাজতে হবে না?
ওদের অজ্ঞতা আমায় কষ্ট দিতো । এখনও দেয়।

আমি বলতাম, “তোমরা পুরো ব্যাপারটাকে ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছো। কয়লার ইঞ্জিন মানে এটা অনেক বছর আগেকার কথা। তাছাড়া, আমিও কিন্তু বিজ্ঞানের সাধক। বিজ্ঞানের মানুষ হয়েও আমি এতে কিন্তু কোনও হাসা-হাসির ব্যাপার দেখছি না। এটা আমাদের সংস্কৃতি। জীবন ধারার অংশ। আমাদের দেশ, সনাতনী ধর্মের দেশ। তোমরা নাম দিয়েছো, ‘হিন্দু’।
তোমরা যখন নতুন জাহাজ বানিয়ে, জলে ভাসাও বা নতুন ইঞ্জিন বানিয়ে, সেটা কাজে লাগাতে চালু করো, তখন তো দেখেছি তোমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী, শ্যাম্পেনের ভর্তি বোতল ভেঙ্গে সেই ‘পবিত্র’ শ্যাম্পেন চারদিকে ছিটিয়ে সব্বার শুভেচ্ছা, এবং শয়তানকে ভুলিয়ে তুষ্ট করে রাখবার চেষ্টা করো। এখনও করো। তোমাদের এটা, আর আমাদের ওটা, দুটো একই জিনিস।


লোহার যন্ত্র, ইন্জিনকে আমরা ‘দানব’বলে ভাবতাম না, ভাবিও না। কারণ, ‘যণ্ত্র-মাত্রিকা’ নামে এক বিশেষ শিল্প-শিক্ষা , আমরা বহু যুগ ধরে পরিচিত এবং যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মেনে আসছি।এসবের কল্পনায় আমরা অভ্যস্ত ছিলাম। বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ পড়ে দেখো, মহাকাশে ভ্রমনের রুট-ম্যাপ লঙ্ঘনের শাস্তি নিয়ে ‘গল্প’টা গড়া। গ্রহান্তরের অতিথিদের মহাকাশ যানের ‘পার্কিং স্পেশ’ নিয়েও লেখক চিন্তা করেছেন। বইটা অর্দ্ধেক লিখে লেখক মারা যান। সেটা সম্পূর্ণ করেন তাঁর পুত্র ‘বেতালভট্ট’। এসব কথা কি তোমরা জানতে? এটা চৌষট্টি-কলার এক বিশেষ কলা বলে পরিচিত। এই শাস্ত্রে, যণ্ত্র-মানব, রোবো (Robot) তৈরি নিয়েও আলোচনা করা আছে। রাজা ভোজ- এর লেখা ‘রোবো’ তৈরি করার বই।
অর্দ্ধেক বইটা প্রগতিশীলরা ছিঁড়ে ফেলেছেন। বাকিটা তোমাদের লণ্ডনের মিউজিয়ামে আছে। খুঁজে দেখো, পাবে। না জেনে এঁড়ের মতো কথা ব’লো না। সেক্সপীয়র, নিউটনের জন্মের বহু বছর আগের কথা।
একটা বৃহৎ কর্ম যজ্ঞের ফল-কে আমরা , আশীর্বাদ বলে ভাবি। “শুভ কর্ম পথে, ধরো নির্ভয় তান।”—- হচ্ছে আমাদের আদর্শ। সেজন্য বিক্ষিপ্ত মনকে সংযত করে, একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে, শুভকামনা করে ‘পূজো’ দিয়ে কাজ শুরু করি। তোমরা পূজো করোনা, গ্রিটিংস কার্ড পাঠাও। তাই এসব বুঝবে-টুঝবে না। ইচ্ছে- মাফিক আমরা, মাটি-খড়-বাঁশের ঠেকো দিয়ে তৈরি, বড়ো পুতুলের মতো প্রতিমা বানিয়ে, অথবা বাজার থেকে কিনে, সেটাকে জেনে-শুনেই ঈশ্বরের প্রতীক বলে ভেবে , সাজিয়ে , শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজো করি। শিল্পীরা প্রাণ ভরে Theme পাল্টে ঈশ্বরের নতুন নতুন রূপ দেন। আমরা তাঁর রূপ নিয়ে গর্ব করি। প্রতিদ্বন্দীতা করি। তাঁর কাছে মনের কথা বলি। তারপর আবার কেঁদে সেটা জলে ভাসান দিয়ে দিই । বলি “আসছে বছর আবার হবে।” এরকম ভাবেই আমরা অজানা চেহারার সৃষ্টিকর্তাকে কল্পনা করে নিয়ে সুখে আছি হাজার হাজার বছর ধরে। আত্মীয়তা গড়েছি, সম্পর্ক গড়েছি ঈশ্বরের সাথে, মুখে সন্দেশ গুঁজে দিয়েছি আনন্দের সঙ্গে। তোমরা উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের আবেগের সুখ-শান্তিকে ঘেঁটে দেবার কে হে? পছন্দ হয়না তো এখানে মাথা গুঁজতে এসেছো কেন? যাও, যাও, নিজেদের জগতে ফিরে শ্যম্পেনের বোতল ভাঙ্গো গিয়ে, যাও। গায়ে ছেটাও, খাও কুলকুচি করো , আমি কিচ্ছু মনে করবো না। বরঞ্চ শ্রদ্ধায় আমিও সেই ছেটানোর উদ্দেশ্যটাকে সমর্থন করবো। হাসা হাসি বা ভাঙ্গচূর , নষ্ট করবো না। ….ইত্যাদি। আমি জেনে বুঝে আমাদের ধর্ম, দর্শনকে শ্রদ্ধা করি। কাটমানির লোভে নয়। বেশ করেছি, আমার মতো আমি হয়েছি।                             ******************************************
সময় গড়িয়েছে। বিজ্ঞানের সব ফুরিয়ে গেছে কি? মোটেই না। বরঞ্চ বেড়েছে। আরও ভালো করে জেনেছি যে আমরা কত্তো কম জানি। ওদিকে, জানবার জন্য কতো জিনিষ যে বাকি আছে ,তা আমরা আগে জানতাম না । এখনও জানিনা । বৈজ্ঞানিকরা হিসেব করে দেখেছেন, ‘শক্তি’ যদি ‘বস্তু’রই অন্য এক রূপে অবস্থিতি করে থাকে, তাহলে তারা সম্মিলিত ভাবে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাত্র 4% জায়গা দখল করে আছে। তবে, বাকি 96% জায়গাটা কিন্তু ফাঁপা বা ফাঁকা নয়; সেটা একটা অচেনা কিছু দিয়ে হয়ে আছে ভরাট । কী সেই জিনিষ? জবাব কেউ দিতে পারেন নি। এখনও জানা যায় নি। তবে “একটা কিছু যে আছে, যা সব কিছুকে আঁকড়ে ধরে, আচ্ছন্ন করে বুকে জড়িয়ে, বা ডুবিয়ে, বা পায়েসের চালের মতো একাত্ম করে রেখেছে”, সেটা বুঝেছেন। ‘অচেনা জিনিস’ হিসেবে তাঁরা এর নাম দিয়েছেন- ‘ডার্ক ম্যাটার’। আইনস্টাইন বলেছেন, প্রচণ্ড আকর্ষণ-শক্তি এই অজানা, অচেনা ‘ডার্ক ম্যাটারের’। মানে, জ্ঞানের অন্ধকারে পাওয়া সেই অচেনা বস্তু বা উপাদানের। একটা কিছু শক্তিতে সে নিজেদেরকে টেনে ‘কাঠাইলের আঠা’র মতো সেঁটে রয়েছে, বুঝতে পারছি, কিন্তু চিনতে পারছি না, সেটা কী শক্তি !? সেই শক্তিটার নাম দেওয়া হয়েছে–“ডার্ক এনার্জি “। আইনস্টাইন-ই বলছেন, “এই শক্তি, যে কোনও ব্ল্যাকহোলের শক্তির চেয়ে কম নয়। বরঞ্চ অনেক, অনেকগুণ বেশি। ”

আমরা সনাতনী হিন্দু “বোকারা”, নিজেদের মতো করে, এই সর্ব- শক্তিময়ীর “ডার্ক এনার্জি’র নাম দিয়েছি ‘মায়া’। না, ‘দয়া-মায়া’র মায়া নয়, অন্য একটা কিছু। এই ‘মায়া’র টানের কাছে, আবেগও হার মেনে যায়। ইনিও ” ডার্ক ম্যাটার”- এর মতো সর্বত্র বিদ্যমান। এনারও সৃষ্টি কোত্থেকে, শেষ কোথায়, কেউ জানে না। তিনিও নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন। স্বয়ং ভূ, ‘শম্ভূ’। এটাই হলো বিজ্ঞানের সর্বাধুনিকতম বিচারের রায়। এই বিচার, কতো হাজার বছর আগে আমাদের দেশের দার্শনিক মুনি-ঋষিরা কল্পনা করে বলে রেখে গেছেন, ভাবতেও অবাক লাগে। তাঁদেরকে হেয় করা খু–ব অন্যায়, পাপ, বোকামি, মাথার ব্যামো!

ওদিকে ওই “অপদেবতা” ষ্টীম ইন্জিন কে “তুষ্ট” রাখার কাজ এবং পরিকল্পনাকে সমর্থন করার শর্টকাট পদ্ধতি কিন্তু এই আজকের যুগে প্রচলিত রয়েছে। সেগুলো রয়েছে অন্য চেহারায়। দুর্জনেরা তাকে বলেন ‘কাট মানি’।

****************************
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কু-সংস্কারাচ্ছন্ন
দেশ হচ্ছে ইংল্যান্ড। দু-হাত অন্তর অন্তর ওখানে ভুতের বাড়ির খবর পাওয়া যায়। এটা আমার বানানো কথা নয়। খোদ ওদের জাতিয় সংবাদপত্র, DAILY MIRROR -এর সমীক্ষার ব্রেকিং নিউজ। সংবাদে প্রকাশ, ইংল্যান্ডে কিলবিল করছে এপাড়া ওপাড়ায় ডাইন-ডাইনির দল। এই তো ক’বছর আগেও ওদেশে ভুতে-ধরা, ডাইনির নজরে গাছে ফুল ফোটা বন্দ্ধ হওয়া, ইত্যাদির চাপা ফিসফিসানির খবর কানে আসতো। আইন করে ওসব বন্ধ করা আছে। কিন্তু আইন দিয়ে কি আর কু-সংস্কারকে রোখা যায়? কাঁটা দিয়ে ধীরে-সুস্থে, কাঁটা তুলে চেতনাকে জাগাতে হয়। মাস্তানি করে নয়। প্রথমে নিজেকে রোগমুক্ত করে নিতে হয়। নিজের হাতের ‘ঘা’-টাকে সাড়াতে হয়। তারপর রুগীর ‘ঘা’-টাকে সাড়ানোর কাজে হাত দিতে হয়।
নাইলে, হীতে হয় বিপরীত।
####################
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। প্রতিটি ধর্মেই গোঁড়ামি আছে। আছে নিষ্ঠুরতা। অন্য ধর্মের মানুষ কে কমবেশি সব ধর্মের মানুষই অপমান করতে ছাড়ে না। কিন্তু সবাই মিলে ওই ‘কাটমানি’র লোভে যদি বিশেষ কোনও ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন, তাহলে প্রকৃতি কিন্তু তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। শুরু হবে শাস্তি দেওয়া। নানারকম রোগ গজাবে। প্রেম ভালোবাসা শ্রদ্ধা উবে যাবে। হাওয়াতে অক্সিজেন কমতে কমতে ফুরিয়ে যাবে। বাতাস বইবে না। খাবার জল ফুরিয়ে যাবে। কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকবে। স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, রঙ্গমঞ্চ সব উঠে যাবে। সংসার হবে একটা বোকার জীবন গাথা। বন্দুক হবে ধর্ম। হালাল নাকি এক কোপ, হবে গল্পের শেষ কথা।

কি? চেনা চেনা লাগছে কি ওপরের বর্ণনাটা? হ্যাঁ, আমরা এসে গেছি আমাদের স্টেশনে। এবার “জয়, কাটমানি’র জয়” বলে ঝাঁপিয়ে পড়লেই হলো।

 

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »
More from ScienceMore posts in Science »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.