নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২ অক্টোবর ২০২১। ক’দিনের মধ্যেই মা দুর্গা আসছেন মর্ত্যে। কাশ ফুল, শিউলি ফুল, নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ জানান দিচ্ছে সে কথা। এই উৎসবের মরশুমে আমাদের বাঙালিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল খাওয়া-দাওয়া। তবে বর্তমানে কোভিডের চোখরাঙানিই বলুন, কিংবা ডেঙ্গু অথবা অন্যান্য অসুখ-বিসুখ- যাঁরা এই উৎসবের মরশুমে অসুস্থ রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে উৎসবের রঙ যেন ফিকে হয়ে আসে। ঠিক এই ব্যাপারটা মাথায় রেখেই বেহালার নারায়ন মেমোরিয়াল হসপিটাল এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য হাসপাতালের সকল রোগী তথা কর্মীবৃন্দর কথা মাথায় রেখে তারা নতুন উদ্যোগের ঘোষণা করল আজ।
রোগীদের অসুখের কথা মাথায় রেখে তাদের উপযুক্ত ডায়েট মেনে নারায়ন মেমোরিয়াল হসপিটাল ‘ট্র্যাডিশনাল পুজোর থালি’র ব্যবস্থা করেছে। এই খাবারের তালিকায় থাকছে একেবারে বাঙালি সাবেকি খাবার দাবার, যাতে পুজোর আবহ হাসপাতালে থেকেই রোগীরা উপভোগ করতে পারেন। বিভিন্ন রোগী তথা তাদের অসুখের বিবরণ ডাক্তারের কাছে শুনে আলাদা আলাদা করে ডায়েটিশিয়ান খাবারের তালিকা তৈরী করে দিচ্ছেন। তার মধ্যে থাকছে যেমন নর্মাল ডায়েট, তেমনই থাকছে ডায়াবেটিক ডায়েট, সেমি সফট ডায়েট, লিক্যুইড ডায়েট প্রভৃতি। শুধু এটুকুই নয়, হাসপাতালে থাকছে একটি পুজো কর্নার, যেখানে বিশেষভাবে পুজোর আয়োজনও করা হবে। আরতি, পুষ্পাঞ্জলি, শান্তির জল সব থাকবে। হাসপাতালের প্রতিটি বেডের রোগীদের আরোগ্য কামনায় নিষ্ঠা ভরে পুজো করবেন পুরোহিত মশাই।
পুজোর চারদিন বাঙালিদের বিভিন্ন রকম সাবেক খাবার পরিবেশন করা হবে। মেনুতে থাকছে মুগ ডাল, পটলের দোরমা, পনির পসিন্দা, ভেটকি মাছের কালিয়া, চিকেন বাটার মসালা, নবরত্ন কোর্মা, খিচুড়ি, লাবড়া, পাঁপড় ভাজা, চাটনি প্রভৃতি আরও অনেক কিছু। হাসপাতালের পর্যবেক্ষনে শেফের একটি দল থাকবে সমস্ত রান্না সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরী হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখার জন্য। আলাদা আলাদা রোগীর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মত তাদের কোন খাবার দেওয়া যুক্তিযুক্ত তা মেনেই আলাদা আলাদা ডিশ দেওয়া হবে রোগীদের।
এ বিষয়ে বলতে গিয়ে নারায়ন মেমোরিয়াল হাসপাতালের সিইও মিসেস সুপর্ণা সেনগুপ্ত ‘শুভ শারদীয়ার’ আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “বাঙালিদের বিশেষ করে যাঁরা কলকাতায় রয়েছেন তাঁদের জন্য দুর্গাপুজো সেরা উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই সকলে পুজোর আমেজে, উৎসাহে মেতে ওঠেন। যদিও অতিমারির কারনে একটু হলেও পুজোতে ভিন্ন মাত্রা এসেছে। তাই আমরা এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছি এই কঠিন সময়ে রোগীদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য। খাবারের মধ্যে যেমন থাকছে বাঙালি সাবেকি খাবার, তেমনি থাকছে চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল খাবারও। রীতিমতো ডায়েট চার্ট মেনে রোগীর পথ্য হিসেবে কম তেল, মশলায় অথচ স্বাদের খেয়াল রেখে তৈরী হবে সমস্ত খাবার”। তিনি আরও জানান, “রোগীদের উৎসবের সময় খুশি রাখতে আমরা গত বছরই এমনটা ভেবেছিলাম, কিন্তু করে উঠতে পারিনি, কারন সেই সময় আরও কঠিন পরিস্থিতি ছিল, এ বছর তুলনামূলক একটু ভালো অবস্থা রয়েছে, তাই আমরা এ বছর এমন উদ্যোগ সার্থক করার পরিকল্পনা নিয়েছি”।
এ বিষয়ে চিফ শেফ অনিন্দ্য রায় জানালেন, “এই পুজোর মরশুমে কারোর আনন্দে নিজে সামিল হতে পেরে ধন্য মনে করছি নিজেকে। দুর্গাপুজোর চারদিন বাঙালি খাবার প্রত্যেকের কাছেই আলাদা মাত্রা যোগ করে উৎসব উপভোগ করার জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রোগীদের ডায়েটের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন রকম খাবার তৈরির অনুমতি পেয়েছি আমি। অতি অবশ্যই ডাক্তারদের পরামর্শে, ডায়েটিশিয়ানের তৈরি করে দেওয়া চার্ট অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রতিটি খাবার তৈরি হবে। হাসপাতালের তরফে এই উদ্যোগ যথেষ্ট প্ৰশংসনীয়”।
ডায়েটিশিয়ান হেমন্ত রাউত জানালেন, “প্রত্যেক রোগীর অসুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে অনেক নিয়ম মেনে আলাদা আলাদা ভাবে খাবার তৈরি হবে, পুজোর উৎসবকে সামনে রেখে। আমার সেরাটা দিয়ে প্রত্যেককে যাতে সঠিক এবং সুস্বাদু খাবার পৌঁছে দিতে পারি এবং উৎসবের আনন্দে সামিল করতে পারি তাই চাইব আমি”।
উল্লেখ্য, গ্রেটার কলকাতায় নারায়ন মেমোরিয়াল হসপিটাল একটি মাল্টিস্পেশালিটি টেরিটরি কেয়ার হসপিটাল, যেখানে বিশ্বমানের পরিকাঠামো রয়েছে। ২০০ টি বেড, ২৪x৭ এমার্জেন্সি এন্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার সহ ৪৮টি আইসিইউ বেড, ৫টি নেগেটিভ প্রেসার, ল্যামিনার ফ্লো যুক্ত অপারেশন থিয়েটার সহ অত্যাধুনিক পরিকাঠামো সম্বলিত এই হাসপাতাল কলকাতার মানুষকে উচ্চমানের পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর। এখানে রয়েছে মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, রেসপিরেটরি মেডিসিন, নিউরোলজি, অর্থোপেডিক্স, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি সহ সমস্ত রকম ওপিডির সুযোগ সুবিধা। রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি ডায়াগনস্টিক সার্ভিস এবং ২৪x৭ অপারেশনাল ফার্মাসি।
Be First to Comment