জন্মদিনে স্মরণঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলায় আধুনিক সমাজ তৈরির পথিকৃৎ যদি রাজা রামমোহন রায় হয়ে থাকেন, তাহলে এ দেশকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে একই স্থানে আছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
তিনি ছিলেন উপমহাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষা সংস্কারক। হিন্দু শাস্ত্রবিদ হয়েও ধর্মকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নির্বাসিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি বিদ্যাসাগর মহাশয়।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার তিনি ছিলেন একান্ত পক্ষপাতী। এ জন্য বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের অযৌক্তিক নিয়মজাল থেকে মুক্ত করে নির্মেদ ও আধুনিক করে তোলাকে তিনি বিশেষ প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন। বর্ণপরিচয় গ্রন্থে তার লিপিসংস্কারই পরবর্তী সময়ে বাংলা লিপির আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। আজ পর্যন্ত এই লিপিই বাংলায় প্রচলিত।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতের প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।
তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মে মাসের মধ্যে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা আমাদের আধুনিকতার চূড়োর মানুষ রূপে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রায় ১ হাজার ৩০০ ছাত্রী এই স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করত।
ধর্মীয় শিক্ষার খোলস থেকে এ দেশের শিক্ষাকে টেনে বের করে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে তার মতদান, এক উদার ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাদর্শের সূচনা ঘটায়।
বিদ্যাসাগর অধ্যাপক পদে থাকার সময়ই বাংলায় উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তকের অভাব অনুভব করেন। এই অভাব পূরণ করার জন্যই গদ্যসাহিত্য রচনা শুরু করেন। তিনি স্বীয় প্রতিভাবলে বাংলা গদ্যের আড়ষ্টতা দূর করে তাতে একটি সাবলীলতা আনতে সক্ষম হন। এ সময় তিনি বহু বাংলা গদ্যগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর হাতে পড়েই বাংলা গদ্যরীতি তার আপন পথ খুঁজে পায়। তিনি শিল্পসম্মত বাংলা গদ্যের স্রষ্টা। এ জন্যই তাঁকে বাংলা গদ্যের ‘জনক’ বলা হয়।
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ কর্মযোগী মানুষটি পরলোকগমন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের আজকের দিনে (২৬ সেপ্টেম্বর) মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment