শুভ জন্মদিন নচিকেতা (চক্রবর্তী)
বাবলু ভট্টাচার্য : নব্বই দশকের গোড়ার দিকে তিনি ছিলেন, দীর্ঘদিনের না ছাঁটা চুল, মুখ ভর্তি দাড়ি, ধনুকের ছিলার মতো ছিপছিপে গড়ন আর আশ্চর্য তীক্ষ্ণ কিন্তু মায়াময় একজোড়া চোখ। পরনে ঢিলেঢালা শার্ট আর স্কিন টাইট জিন্স আর বেপরোয়া যুবক। বুকের মাঝে তাজা বারুদ নিয়ে তিনি গেয়ে উঠলেন— ‘এই বেশ ভাল আছি’! পুরো দেশ যেন কেঁপে উঠলো এটমিক বোমার তান্ডবে! তার মুখনিঃসৃত প্রত্যেকটি শব্দ যেন এক একটি মিসাইল হয়ে উঠলো অন্যায় অবিচার ও শাসনের নামে শোষণের বিরুদ্ধে। খেঁটে খাওয়া, বঞ্চিত জনতা তাদের মেরুদন্ডে পেল শক্তি !
বেকার যুবকের হতাশা তার গানে পেল নতুন ভাষা। সভ্যতার ফাঁপা বেলুন ফাটিয়ে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো সে— নচিকেতা চক্রবর্তী। সৃষ্টি হল নতুন একটি যুগের। ‘নচিকেতা চক্রবর্তী’ একটি আদর্শের নাম হয়ে উঠল। যে আদর্শ সততা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিপ্লবের সমন্বয়ে গড়া।
নচিকেতা পড়াশোনা করেছেন উত্তর কলকাতার মণীন্দ্র কলেজে। ছোটবেলা থেকেই গান লেখা শুরু, সেই সঙ্গে নিজের মতো করে গান চর্চা। প্রথম অ্যালবাম ‘এই বেশ ভালো আছি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে এবং প্রকাশ পাওয়া মাত্র অভাবনীয় সাড়া পড়ে যায়। নচিকেতা চক্রবর্তী মুহূর্তে হয়ে যান ‘নচিকেতা’। এরপর শুধু সাফল্যের ইতিহাস। পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কখনও।
সংগীত জীবনে নচিকেতার রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। জীবনমুখী বাংলা গানে তিনি সেরা। এছাড়াও তিনি হিন্দি ও অন্যান্য ভাষায়ও বেশ কয়েকটি গান গেয়েছেন। একক অ্যালবাম ছাড়াও তিনি যৌথ অ্যালবাম এবং সিনেমার গান গেয়ে থাকেন এবং বেশ খ্যাতিও অর্জন করেছেন। যেমনঃ ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ (১৯৯৮) ছবিটিতে তিনি সংগীত পরিচালক হিসেবে এবং সংগীত শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। আর এই ছবির প্রতিটি গানই বেশ জনপ্রিয় হয়ে আছে।
তিনি বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছেন। যেমনঃ ‘কাটাকুটি’, ‘খেলাঘর’, ‘এই বেশ ভালো আছি’, ‘কে যায়’ ও ‘কুয়াশা যখন’ ইত্যাদি।
নচিকেত বঙ্গভূষণ, সঙ্গীতভূষণ ইত্যাদি সরকারি-বেসরকারি অনেক সম্মান পেয়েছেন।
জ্যাক লন্ডন-এর লেখা পড়ে নচিকেতা লেখালিখি করতে প্রথম অনুপ্রাণিত হন। এ ছাড়া মহাভারতের কৃষ্ণ চরিত্র তাকে প্রভাবিত করে।
নচিকেতা চক্রবর্তী ১৯৬৪ সালের আজকের দিনে (১ সেপ্টে) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment