স্মরণ : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বাবলু ভট্টাচার্য : উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ,এবং সংস্কৃত শাস্ত্রের বিরাট পণ্ডিত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি আমাদের কাছে দয়ার সাগর নামে পরিচিত। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরাজি ভাষাতেও তাঁর বিশেষ দখল ছিল।
বিধবা বিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ রোধ করা এবং সমাজ সংস্কার মূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা এই মহান মানুষটি ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বাবা ঠাকুরদাস বন্দোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী।
হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাদের প্রতি অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল সংস্কৃত শাস্ত্রের বিরাট পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে প্রমাণ করেছেন, যে লোকাচার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত, আসলে তা ধর্মবহির্ভূত স্থবিরতার আচারমাত্র। তার আন্দোলন সফল হয়েছিল।
১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন। তার উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। তিনি তার পুত্রের সঙ্গেও ভাগ্যহীনা এক বিধবার বিবাহ দেন।
এজন্য সে যুগের রক্ষণশীল সমাজ ও সমাজপতিদের কঠোর বিদ্রুপ ও অপমানও সহ্য করতে হয় তাকে। বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিবাহের মতো একটি কু-প্রথাকে নির্মূল করতেও আজীবন সংগ্রাম করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রচার করেন বাল্যবিবাহ রোধের সপক্ষেও। এর সঙ্গে সঙ্গে নারীশিক্ষার প্রচারেও যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
শুধু কলকাতায় নয়, নারীমুক্তির বার্তা বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে, বিভিন্ন জেলাতেও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে নারীশিক্ষার সপক্ষে জোর প্রচার চালান তিনি।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
এটিই ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। এটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মে মাসের মধ্যে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ১৩০০ ছাত্রী এই স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করত।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলার প্রথম সার্থক গদ্যকার তিনিই। ১৮৩৯ সালে জ্ঞানচর্চায় তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন। পরে তিনি দু-বছর ওই কলেজে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ছাত্র জীবনে প্রতি বছরই তিনি বৃত্তি এবং গ্রন্থ লাভ করেন। ১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে সংস্কৃৃত কলেজ ত্যাগ করে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা ভাষার প্রধান শিক্ষকের পদ লাভ করেন।
১৮৪৯ সালে মার্শম্যানের ‘হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘বাংলার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ’ গ্রন্থখানি।
মহামতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের আজকের দিনে (২৯ জুলাই) ৭১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।
Be First to Comment