মধুমিতা শাস্ত্রী : ১৬, নভেম্বর, ২০২০। আমরা বাঙালিরা উৎসবের অজুহাত খুঁজি বলতে পারেন। তবে কোন উৎসবের কবে সূচনা আর কার মাধ্যমেই বা শুরু হল অনেক সময় তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রবাহমান কাল ধরে সেই সব রীতি একইরকম ভাবে চলে আসছে। ঠিক এমনই একটি উৎসব বা রীতি হলো ভাইফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়া। যাইহোক ভাতৃদ্বিতীয়া যে ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের ভীত মজবুত করে এ কথা বলাই বাহুল্য।
বঙ্গবাসীরকাছে অতি পরিচিতি ভাইফোঁটা ভারতের অন্য জাগায় আবার অন্য নামে পরিচিত। যেমন পশ্চিম ভারতে ‘ভাইদুজা’ নামে উৎসবটি পালিত হয়। আবার পাহাড়ে অর্থাৎ নেপাল ও দার্জিলিংয়ে ‘ভাইটিকা’ নামে পালিত হয়। এটি ‘ভাইবিজ’ নমে পালিত হয় মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং কর্ণাটকে।

কথিত আছে সূর্যদেবের পুত্র যম এবং কন্যা যমুনা বিস্তর দূরত্বে থাকার ফলে একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনওরকম সাক্ষাৎ হয় না। এমন অবস্থায় যমের মন অস্থির হয়ে উঠল দিদি যমুনাকে দেখার জন্য। তাই তিনি দূত মারফত বার্তা পাঠালেন দিদির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে। কালীপূজার দু-দিন পর অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন দিদির বাড়ি যাবেন। ভাইয়ের আসার সংবাদে খুশিতে আত্মহারা যমুনা নানান খাবার দাবারের সম্ভার সাজিয়ে রাখেন। ভাই এলে তার কপালে চন্দনের টিকা লাগিয়ে খাবার পসরা সাজিয়ে দেন দিদি। দিদির আতিথ্যে মুগ্ধ হয়ে যম উপহার হিসেবে নিজের খুশি মতো বর প্রার্থনা করতে বলেন।

যমুনা দিদি হিসেবে যা প্রার্থনা করেছিল তা চিরকালীন সমস্ত দিদি বা বোনের প্রার্থনা। যমুনা তার ভাইয়ের অমরত্ব প্রার্থনা করেন। ফলে যম অমরত্ব লাভ করেন। ধারণা করা হয় ভাইয়ের অমরত্ব লাভে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারপর থেকেই বোনেরা এই প্রথা পালন করে আসছে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়।
অন্য একটি গল্প কথায় শোনা যায় নরকাসুর নামে এক পরাক্রমশালী দানবকে কৃষ্ণ বধ করে বিজয়ী হয়ে ফেরার পর বোন সুভদ্রা দাদা কৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা পালিত হয়ে আসছে।

অপর একটি কাহিনী থেকে জানা যায় প্রবল পরাক্রমশালী রাজা বলির হাতে ভগবান বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। সমস্ত দেবতারা যখন পরাভূত তখন স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী এগিয়ে আসেন। তিনি বলিকে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। লক্ষ্মী বলিকে ভাই বলে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। রাজা বলি ভাই -বোনের বন্ধন স্বীকার করে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে দেবী বিষ্ণুকে চেয়ে নেন। ফলে বিষ্ণু বলির কবল থেকে মুক্তি পান। মনে করা হয় সেই থেকে ভাইফোঁটা পালিত হয়ে আসছে।

এই উৎসবের মাধ্যমে ভাই -বোনের মধ্যেকার নানা খুনসুটি ধরাপড়ে। আধুনিক কালে ভাই-বোনেরা তাদের এই সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি মুঠোফোনে বন্দি করে রাখে। এটা মিথ বা রীতি যাই হোক ভাই-বোনের চিরকালীন খুনসুটি এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসার মহান উৎসব বলা যায়।

Be First to Comment