Press "Enter" to skip to content

তরুণ সান্যাল ছিলেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আলোড়িত করেছিল ‘তোমার জন্যই বাংলাদেশ’ নামের কাব্যগ্রন্থের জনককে……।।

Spread the love

স্মরণঃ তরুণ সান্যাল

“আমার অপার বাংলা
দেবী প্রতিমার দীর্ঘ চোখের আলস্যে ঘুম ভেঙে যায়
মুখগুলি দৃশ্যহীন, মধ্যরাতে
একা পানসী ভাসানো বৈরাগ্যে
কোন অশ্রুময়তায়
অন্ধতায়
লাবণ্যনীহার ভার একা অঙ্গে ধরা যায় না বলে
পাকাধান ভেজা পাটে
দূরের বাঁশির সুরে
মনে হয়
অশ্রুত বিষাদ, শ্যামলিমা, এই
বিধ্বস্ত প্রতিমা বাংলাদেশ।”

—– ‘আমার অপার বাংলা’/ তরুণ সান্যাল

বাবলু ভট্টাচার্য : বাঙালি যে মানুষদের ভুলে গেলে অন্যায় করবে তাদের একজন তিনি। ১৯৭১-এ রচিত ও প্রকাশিত সেই কবির কাব্যগ্রন্থের ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামের কবিতায় বেজে উঠেছিল নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্মজয়ঢাক। অপার ভালোবাসায় সেসময়ের হানাদার-আক্রান্ত পূর্ববাংলার মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি।

নিভৃত, প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে থাকা এ কবির নাম তরুণ সান্যাল। একান্ত সাধনায়, পরম অভিনিবেশে যারা উজ্জ্বল করে গেছেন বাংলা কবিতার ভাণ্ডার তিনি তাদেরই একজন।

বাংলাদেশের পাবনার পোরজনা গ্রামে কবি তরুণ সান্যালের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৯ অক্টোবর। প্রাথমিক পড়ালেখা নওগাঁতে। দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে পাড়ি জমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।

১৯৭১ সালে, বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তরুণ সান্যাল তখন ছিলেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আলোড়িত করেছিল ‘তোমার জন্যই বাংলাদেশ’ নামের কাব্যগ্রন্থের জনককে।

মার্চের মাঝামাঝি (১৯৭১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হলে ভারতের কম্যুনিষ্ট পার্টি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ার জন্য একটি বিশেষ সভার আয়োজন করে। সেই সভায় তরুণ সান্যাল এবং অন্য নেতারা প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শুধু নিজের লেখনিতে নয়, তরুণ সান্যাল সেসময় ছুটে বেড়িয়েছেন এক শরণার্থী শিবির থেকে অন্য শরণার্থী শিবিরে। সেসময় প্রখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘পরিচয়’-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন শান্তি পরিষদের রাজ্য সম্পাদক ও ভারত-সোভিয়েত সংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। মূলত একক নেতৃত্বেই গঠন করেছিলেন ‘বাংলাদেশ সহায়ক কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’।

১২টি কাব্যগ্রন্থ, সাতটি প্রবন্ধগ্রন্থ, তিনটি কবিতার অনুবাদগ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো ‘মাটির বেহালা’, ‘অন্ধকার উদ্যানে যে নদী’, ‘রণক্ষেত্রে দীর্ঘবেলা একা’, ‘তোমার জন্যই বাংলাদেশ’।

তরুণ সান্যাল রবীন্দ্র পুরস্কার, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা পেয়েছেন। তিনিই একাত্তরে কলকাতায় চলে যাওয়া বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা করেন। আর ছাত্রদের রাখেন কলেজের কমনরুমে।

তরুণ সান্যাল ২০১৭ সালের আজকের দিনে (২৯ আগস্ট) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from CultureMore posts in Culture »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.