স্মরণ : বিজয়া রায় :–
বাবলু ভট্টাচার্য : নিজে একজন অভিনেত্রী এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী ছিলেন বলে সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তবে নিজেকে কখনই প্রচারের আলোয় আনেননি বিজয়া রায়।
বিজয়া দাস বড় হয়েছেন পাটনায়, পড়াশোনা শুরু করেন কনভেন্ট স্কুলে। বাবা চারুচন্দ্র দাস ছিলেন ব্যারিস্টার। মা ছিলেন গৃহবধূ মাধুরী দেবী। চার কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। মাত্র তেরো বছর বয়সে পিতৃহারা হয়ে মায়ের হাত ধরে চলে আসেন কলকাতায় তাঁর নিকট আত্মীয় বাড়ী।
ঠিক সেই মুহূর্তে পারিবারিক ব্যবসা বিক্রি করে পিতৃহারা ছোট্ট সত্যজিৎ রায় তাঁর মা সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে চলে আসেন মামাবাড়িতে। এক সঙ্গে ছোট থেকে বড় হওয়া ভালো-লাগা খারাপ লাগা মিলেমিশে একাকার সত্যজিৎ রায় ও বিজয় দাস। ক্রমে দুজনের মধ্যে বাড়তে থাকে ঘনিষ্টতা। তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন।
বিজয়া রায় ১৯৪৪ সালে ‘শেষ রক্ষা’ এবং ১৯৫০ সালে ‘মশাল’ নামক চলচ্চিত্র দুটিতে অভিনয় করেন। এছাড়া ক্যাথরিন বার্গ পরিচালিত ‘গাছ’ নামক তথ্যচিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয়া রায়।
‘আমাদের কথা’র লেখিকা জীবনের প্রান্তসীমায় এসে হাতে কলম তুলে নিয়েছেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রস্রষ্টা সত্যজিত রায়ের সহধর্মিণী। অন্তরের গভীরে থাকা বহু ঘটনা, বহু জানা-অজানা কাহিনি, বহু মানুষের মুখে তাঁকে এই অনন্য স্মৃতি-ইতিহাস লেখার প্রেরণা দিয়েছে।
‘আমাদের কথা’র পরতে পরতে ব্যাপ্ত হয়ে আছে যে-বহুবর্ণী কাহিনি, তা জানতে না পারলে মানুষ ও স্রষ্টা সত্যজিৎ ও বিজয়া সম্পর্কে অনেক কথা অজানা থেকে যেত। হারিয়ে যেত নানা তথ্য, অনেক মুখ। অবলুপ্ত হত সময়ের অজস্র দিকচিহ্ন। এই গ্রন্থে স্মরণীয় হয়ে রইল সেই অপরূপ অতীত এবং অনতিঅতীত।
১৯৩১ সালে প্রথম সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর। তারপর ১৯৪৮ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেই বিয়ে। ১৯৫৩ তিনি জন্ম দেন তাদের একমাত্র সন্তান সন্দীপ রায়ের। ১৯৯২ সালে প্রয়াত হন সত্যজিৎ রায়।
শ্রীমতী বিজয়া রায় ২০১৫ সালের আজকের দিনে (২ জুন) প্রয়াত হন।
Be First to Comment