Press "Enter" to skip to content

১৯৭৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘সোনার কেল্লা’……।

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য :  “… একটা চমৎকার বই থেকেও সিনেমা করার সময় সত্যজিতের মাথায় ঝকঝক করত : দুটো আলাদা মাধ্যম, সিনেমায় বইটা কাঁচামাল মাত্র। চিত্রনাট্যে যত খুশি ওলটপালট চলবে, এর সংলাপ ওর মুখে, এর বৈশিষ্ট্য ওর চরিত্রেও বসিয়ে দেওয়া যাবে কেয়ার না করেই, যদি তাতে সিনেমাটা আরও নিটোল হয়ে ওঠে, চরিত্রগুলো ত্রিমাত্রিক হয়ে নড়াচড়া করে, ঘটনাগুলো সত্যের রং পায়।

এই কাজের জন্য কাটা-ছেঁড়া, জোড়া- আঁটা, যা দরকার সব প্রয়োগ করতে হবে।

সত্যজিতের অসামান্য কিছু বাক্য উদ্ধার করি : ‘… ভাষার গুণে পড়বার সময় এসব খটকা মনে লাগে না; কিন্তু চিত্রনাট্য রচনাকালে যখন মূল কাহিনির নির্মম বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়, যখন চরিত্রগুলোকে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে কল্পনা করতে হয়, গল্পের পরিবেশ চোখের সামনে মূর্ত করে তুলতে হয়, সময়ের পরিস্কার সূত্র ধরে ঘটনাবলির একটা ধারাবাহিকতা রচনা করতে হয়- তখনই এ জাতীয় ত্রুটি চোখে পড়তে থাকে। কাহিনির অদলবদল যে হয়, তা এই কারণেই।’

‘মূল কাহিনির নির্মম বিশ্লেষণ’ কথাটা খেয়াল করুন, সবচেয়ে লক্ষণীয় ‘নির্মম বিশ্লেষণ’টা। সত্যজিতের ছবির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই নির্মমতা।

অধিকাংশ ভারতীয় চলচ্চিত্রকারের মতো আবেগে লেবড়েজুবড়ে না গিয়ে, নিজের সৃষ্টির প্রতি সম্পূর্ণ নির্মোহ থেকে, শাণিত, সর্বজ্ঞ শলাকা দিয়ে তিনি সমস্ত উপাদান ব্যবচ্ছেদ করে দেখেন, নিখুঁত নিক্তিতে ঊন ন্যূন ওজন করেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেন। সে সিদ্ধান্ত একশোর মধ্যে নিরানব্বই বার তাঁকে ‘বুলস আই’ প্রদান করে ।

‘সোনার কেল্লা’ বই যেমন ছিল, একটুও পরিবর্তন না করে, তেমনটিই সিনেমা বানালে কি হিট হত? সম্ভবত, হত। কিন্তু এক-একজন বাঙালি জীবদ্দশায় যে ষাটবার-আশিবার ছবিটা দেখেন, সব সংলাপ মুখস্থ থাকা সত্ত্বেও আবার, আবার সমান মজায় উথলে ওঠেন, এই ম্যাজিক কি সম্ভব হত ? কক্ষণও না ।

অনেক খেলা সত্যজিতের ছবিতে থাকে, যা আমরা খেয়ালও করি না, কিন্তু সারি সারি নকশা-ফোঁড় মিলে তারা ছবিটাকে আশ্চর্য পোক্তভিত দেয়, যা আমাদের এসে হয়তো অচেতনে, কিন্তু অবধারিত ছুঁয়ে যায়।…

এগুলোই সত্যজিতের টাচ, তাঁর সূক্ষ্ম তরবারি, যা কখন ছেদ করে যায়, দর্শক টেরও পান না । এই সব সোনার কারুকাজ, স্বর্ণ-সরঞ্জাম কণা কণা জড়ো করে সত্যজিৎ গড়ে তোলেন তাঁর কেল্লা। তাতে যেমনি নির্ভুল জ্যামিতি, তেমনি অবাধ আনন্দস্রোত। তার আনোখা উজ্জ্বলতার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে ‘সো-না-র কেল্লা’ না উচ্চারণ করে উপায় কি? “

More from BooksMore posts in Books »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *