Press "Enter" to skip to content

১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সঙ্গীতের সুরমূর্ছনায় সমৃদ্ধি আনয়ণে স্বকীয় ভূমিকা রাখেন পুলক বন্দোপাধ্যায়….।

Spread the love

স্মরণঃ পু ল ক ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

বাবলু ভট্টাচার্য : নামে পুলক। কাজেও পুলক। শ্রোতাদের আনন্দ দেওয়ার ভার তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। বাংলা গানের স্বর্ণযুগের ঔজ্জ্বল্য বেড়েছিল তাঁর মতো কিছু দক্ষ মণিকারের নৈপুণ্যে। হ্যাঁ, তিনি পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সব দিকেই ছিল তাঁর অনায়াস গতি। তাঁর মধ্যে লুকিয়ে ছিল একটি রসিক মন। মাঝে মাঝেই উঁকি দিত কলমে। ‘প্রথম কদম ফুল’ ছবির ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না’, বা ‘বসন্ত বিলাপ’ ছবির ‘লেগেছে লেগেছে আগুন’ তাঁর রসবোধেরই পরিচয়।

আবার এই বহুমুখী প্রতিভার সৃষ্টি কালজয়ী হয়ে আছে ‘কতদিন পরে এলে একটু বোসো’, ‘সেদিন তোমায় দেখেছিলাম’, ‘ওগো কাজলনয়না হরিণী’-র মতো গানে।

তাঁর কথার সঙ্গে যুগলবন্দি হয়েছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অবিনশ্বর কণ্ঠের। মান্না দে-এর জাদু কন্ঠে কালজয়ী হয়ে আছে ‘সেই তো আবার কাছে এলে’, ‘ও ললিতা ওকে আজ চলে যেতে বল না’, ‘জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়’-এর মতো যুগোত্তীর্ণ গান।

কে ভুলতে পারে শ্যামল মিত্রর গলায় ‘আমি তোমার কাছেই ফিরে আসব’– শুধু গায়করাই নন। তাঁর শব্দমালা থেকে বঞ্চিত হননি গায়িকারাও। লতা মঙ্গেশকরের কিন্নরকণ্ঠে ‘আজ মন চেয়েছে’, আশা ভোঁসলের মাদকতাপূর্ণ জাদুতে ‘দ্বীপ জ্বেলে ওই তারা’, ‘একের পর এক রত্নরাজি’ পেয়েছে বাংলা সঙ্গীত মহল।

গীতা দত্ত, সতীনাথ মুখার্জি, আরতি মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকা, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, হৈমন্তী শুক্লা— কার কণ্ঠে নেই পুলক বাবুর গানের কথা!

১৯৩১ সালের ২ মে হাওড়ার এক সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন।

শিল্প নাটক সাহিত্য, সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পরিবারের ছিল অবাধ বিচরণ। তাঁর শৈশবকাল কাটে হাওড়ায়। সেখানেই তিনি বড় হন। তাঁর পরিবার শিল্পধর্মী কর্মকাণ্ডের সাথে নিবীড় সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। নাটক, সাহিত্য ও সঙ্গীতকলায় আত্মিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তিনি।

স্কটিশ চার্চ কলেজের গানপাগল ছেলেটা কলম ধরেছিলেন মূলত ছবির জন্য। পাশাপাশি ছিল অজস্র আধুনিক গান, পুজোর রেকর্ড। পরিচালক, চিত্রনাট্যকারদের বিশেষ পছন্দের ছিলেন তিনি। ছবির গতি, মুড অনুযায়ী মনের মতো গান লেখা ছিল শুধু মুখ থেকে কথা খসার অপেক্ষা।

১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সঙ্গীতের সুরমূর্ছনায় সমৃদ্ধি আনয়ণে স্বকীয় ভূমিকা রাখেন। হেমন্ত মুখার্জি, মান্না দে, গীতা দত্ত, লতা, আশা, হৈমন্তী, শ্যামল, ভূপেন, প্রতিমা, উৎপলা, অরুন্ধতী, সতীনাথ, অনুপ, আরতী মুখোপাধ্যায়সহ অনেক জ্ঞানী-গুণী শিল্পী তাঁর সুরোরোপে গান গেয়েছেন।

১৯৬৬সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শঙ্খবেলা’ চলচ্চিত্রে তাঁর সুরোরোপিত গান আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। লতা ও মান্নাদে’র দ্বৈত গান ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ এবং লতা’র কণ্ঠে ‘আজ মন চেয়েছে’ চলচ্চিত্রটিকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এছাড়াও, ১৯৬৯ সালের ‘প্রথম কদম ফুল’ চলচ্চিত্রের জন্য ‘আমি শ্রী শ্রী ভজ হরি মান্না’ গান রচনা করেন।

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৯সালের আজকের দিনে (৭সেপ্টে) ৬৪ বছর বয়সে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.