Press "Enter" to skip to content

১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয় মায়া ডেরেনের চলচ্চিত্র বিষয়ক বই ‘অ্যান অ্যানাগ্রাম অব আইডিয়াস অন আর্ট, ফর্ম এ্যান্ড ফিল্ম’….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মা য়া ডে রে ন

বাবলু ভট্টাচার্য : সে সময়ের ইতালির প্রখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী এলিয়ানোরা ডুসের নামে নাম মিলিয়ে রাখা হলো— এলিয়ানোরা ডেরেনকোস্কি। পরবর্তিতে তিনি হয়ে উঠলেন মায়া ডেরেন।

মা মারিয়া ডেরেনকোস্কি ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী, বাবা সোলমোন ডেরেনকোস্কি একজন মনঃচিকিৎসক। রাশিয়া বিপ্লবের পরে, ইউক্রেনের কিয়েভ শহর ত্যাগ করে একেবারে আমেরিকার নিউইয়র্কে চলে যান।

ইতিমধ্যে পরিবারে ভাঙন নেমে এসেছে, মা-বাবার মাঝে বিচ্ছেদ এসে দাঁড়াল। পরবর্তীতে কিশোরী মায়াকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় লিগ অব নেশনের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়তে পাঠানো হলো, সেখানে তিনি ১৯৩০-৩৩ পর্যন্ত অবস্থান করেন।

বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার ও নৃতত্ত্ববিদ ক্যাথরিন ডানহ্যামের আফ্রো-আমেরিকান নাচের কোম্পানিতে মায়া ডেরেন ১৯৪১ সালে ব্যক্তিগত সচিব হয়ে যোগদান করেন। মায়ার সাথে পরিচয় হয় চেকোস্লোভাকিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ফটোগ্রাফার আলেকজান্ডার হ্যাকেন স্মিথের সঙ্গে। তিনিও মায়া ডেরেনের জীবনে বিশেষ প্রভাব রেখেছেন। ১৯৪২ তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বাবা সোলমোন ডেরেনের মৃত্যুর পর সম্পত্তির কিছু প্রাপ্তি থেকে একটি ১৬ মিমি-এর বোলেক্স ক্যামেরা কেনেন মায়া। তাই দিয়ে ১৯৪৩ সালে তৈরি করেন তার প্রথম এবং সবচাইতে আলোচিত চলচ্চিত্র, চৌদ্দ মিনিটের সাদাকালো ‘মিসেস অব দ্য আফটারন্যুন’।

আমেরিকার অ্যাভা গার্ড ফিল্মের ইতিহাসে এই ছবিকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক চলচ্চিত্র হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ছবির দুটি মূল চরিত্রে মায়া ও হাম্মিদ নিজেরাই অভিনয় করেছেন। মূলত এটি একটি নির্বাক চলচ্চিত্র।

তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘এ্যাট ল্যান্ড’— যা তিনি নির্মাণ করেন ১৯৪৪ সালে। পনেরো মিনিটের এই নির্বাক এবং সাদাকালো ছবিতে মায়া ডেরেন নিজেকে বিভিন্ন ল্যান্ডস্কেপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন। সচেতনভাবে সমুদ্রের জোয়ারে ভেসেছেন। পাথরের পাহাড়ে ক্রলিং করেছেন। একাকী পথ হেঁটেছেন। নারীর আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম ও কঠিনতাকে তুলে এনেছেন এই ছবিতে।

১৯৪৫-এ তৈরি করেন তিন মিনিটের ছবি ‘এ স্টাডি ইন কোরিওগ্রাফি ফর সিনেমা’। এতে সহ-পরিচালক হিসাবে মায়া’র সঙ্গে কাজ করেন আমেরিকার বিখ্যাত আফ্রো- আমেরিকান কোরিওগ্রাফার, কম্পোজার, নৃত্য-পরিচালক ও শিল্পী টালি বিটি।

মাত্র তিন মিনিটের নির্বাক ও সাদাকালো এই চলচ্চিত্রে নৃত্যশিল্পী টালি বিটির অনিন্দ্য সুন্দর কোরিওগ্রাফি ও শৈল্পিক মুদ্রাগুলো প্রকৃতির সংস্পর্শে যে সুনিপুণ মোহময় ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে তা অনবদ্য শিল্পরূপ থেকে চিরন্তন হয়ে বেঁচে আছে।

১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয় মায়া ডেরেনের চলচ্চিত্র বিষয়ক বই ‘অ্যান অ্যানাগ্রাম অব আইডিয়াস অন আর্ট, ফর্ম এ্যান্ড ফিল্ম’। এই প্রকাশনার জন্য (মায়া ডেরেন) প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে ‘ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক ইন দ্য ফিল্ড অব মোশন পিকচার’ সম্মানে সম্মানিত ‘গুগেনহেইম’ ফেলোশিপ অর্জন করেন।

পনেরো মিনিটের সাদা-কালো নির্বাক চলচ্চিত্র ‘রিচ্যুয়াল ইন ট্রান্সফিগার্ড টাইম’ তৈরি করেন ১৯৪৬ এ। নারীর মনোজগৎ ও যৌনতার গভীর প্রকাশ এই ছবির অন্তর্গত চেতনা। এখানে চল্লিশ দশকের প্রসিদ্ধ হলিউড নৃত্যশিল্পী রিটা ক্রেস্টিনি ও লেখিকা অ্যানিস নিন অভিনয় করেছেন।

১৯৪৭ সালে কানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘মিসেস অব দ্য আফটারন্যুন’ ছবির জন্য তিনি প্রথম নারী পরিচালক ও এক্সপেরিমেন্টাল চলচ্চিত্র হিসাবে ‘গ্র্যান্ড প্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল ফর এমেচার ফিল্ম’ পুরস্কার লাভ করেন। ওই বছরেই মায়া ও হাম্মিদের বিয়ে ভেঙ্গে যায়।

‘মেডিটেশন অব ভায়োলেন্স’ নির্মাণ করেন ১৯৪৮ সালে। চিনা-আমেরিকান অভিনেতা চিয়াও-লি চি’র অনবদ্য কোরিওগ্রাফি পারফরমেন্সের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ভায়োলেন্স ও বিউটির মাঝে মূল পার্থক্যকে।

এরই মাঝে প্রেমে পড়লেন আমেরিকায় বসবাসরত ষোল বছর বয়সী জাপানিজ মিউজিসিয়ান তেইজি ইতো’র, তখন মায়া’র বয়স চৌত্রিশ। মায়া ডেরেন ক্রমশ তেইজির মেনটর ও প্রেম হয়ে উঠলেন। তারা নিউ ইয়র্কে একত্রে বসবাস শুরু করলেন এবং নিয়মিত হাইতিতে আসা-যাওয়া। পঞ্চাশ দশকের শেষাশেষি তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন— ক্রিয়েটিভ ফিল্ম ফাউন্ডেশন।

তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘দ্য ভেরি আই অব নাইট’। ১৯৫৫ সালে নিউ ইয়র্কের ম্যনহাটনের বিখ্যাত মেট্রোপলিটন অপেরা ব্যালেট স্কুল ও প্রখ্যাত ইংলিশ ব্যালেট কোরিওগ্রাফার অ্যান্টনি টুডোরের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করেন। যেখানে মায়া ফটোগ্রাফিক পরিকল্পনা, পারফরমেন্স ও গাঁথুনি সবই নেগেটিভ মুডে ধারণ করেছেন।

তিনি মনে করেছেন এই চলচ্চিত্রের মূল ভাব নেগেটিভ ইফেক্ট দাবি করে। ১৫ মিনিটের সাদাকালো চলচ্চিত্রটির মিউজিক করেছেন তেইজি ইতো।

১৯৬১ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মারা যান মায়া ডেরেন। চূড়ান্ত ম্যাল-নিউট্রেশনের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মায়া ডেরেন ১৯১৭ সালের আজকের দিনে (২৯ এপ্রিল) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে’তে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *