Press "Enter" to skip to content

১৯৩৮ সালে জগন্ময় মিত্র এইচএমভিতে গান রেকর্ড করার সুযোগ পান ও সেই সাথে শুরু হয় তাঁর জয়যাত্রা। ভারতের হিন্দি সঙ্গীত জগতে তিনি “জগমোহন” নামে পরিচিত………..

Spread the love

————-জন্মদিনে স্মরণঃ জগন্ময় মিত্র———-

বাবলু ভট্টাচার্য : জগন্ময় মিত্র ছিলেন বাংলা কাব্য সঙ্গীতের শিল্পী। বাংলা আধুনিক ও নজরুল গীতির পাশাপাশি, ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুংরি, টপ্পা সহ সঙ্গীতের প্রায় সব প্রচলিত ধারায় তাঁর ছিল স্বচ্ছন্দ পদচারনা। অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গানের শিল্পী ছিলেন তিনি, তবে ১৯৪৮ সালে রেকর্ড করা “চিঠি– তুমি আজ কত দূরে” গানটি তাঁকে অমরত্ব এনে দেয়। লক্ষ কোটি শ্রোতা, রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে গানটিকে যেন নিজেরই প্রেমপত্র হিসেবে গ্রহণ করে নেন। ফলে বাংলা আধুনিক/কাব্য সঙ্গীতের ইতিহাসে এটিই সর্বাধিক শ্রুত ও বিক্রীত একক সঙ্গীত হিসেবে অদ্যাবধি পরিগণিত (এইচ এম ভি’র হিসাবে, ৭৮ আরপিএম রেকর্ড থেকে ক্যাসেট যুগ পর্যন্ত গানটির ২৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে)। কলকাতার এক সঙ্গীতমনস্ক পরিবারে জগন্ময় মিত্রের জন্ম। পরিবারটির জন্য সময়টি ছিল শোকের, কারণ তার মাত্র মাসাধিক কাল আগেই জগন্ময়ের বাবা, যতীন্দ্র নাথ মিত্র, মাত্র ২৫ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পিতৃহারা, ভাই-বোনহীন জগন্ময়, এক শোকাবহ পরিবেশে জীবনযাত্রা শুরু করেন।প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় বাড়ীতেই, তারপর এন্ট্রান্স পাস করেন ১৯৩৪ সালে। তবে এর মাঝেই শুরু হয় তাঁর সঙ্গীত সাধনা। জগন্ময় মিত্রের পিতামহ বিধুভূষণ মিত্র এবং কাকা পঞ্চানন মিত্র সংগীতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। কাকা চমৎকার হারমোনিয়াম বাজাতেন, ওস্তাদের কাছে রাগ-রাগিনীর তালিম নিতেন। সেই সময় জগন্ময় মিত্র পাশে বসে তা শুনতেন। ১০/১১ বছর বয়সে তিনি প্রথম কেশব মুখোপাধ্যায়ের কাছে ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুংরি, টপ্পা ইত্যাদির তালিম নেন। ১৯৩৮ সালে বেঙ্গল মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ধ্রুপদ, টপ্পা, ঠুংরি, রাগ প্রধান বাউল ও কীর্তনের প্রতিটি বিভাগে প্রথম হন। তবে কাব্য সঙ্গীতে তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালেই জগন্ময় মিত্র এইচএমভিতে গান রেকর্ড করার সুযোগ পান ও সেই সাথে শুরু হয় তাঁর জয়যাত্রা। প্রণব রায়ের কথায় কমল দাশগুপ্তের সুরে ‘প্রিয় হতে প্রিয়তর’ এবং ‘তোমার মতন কত না নয়ন’ গান দুটি তাঁকে প্রথম খ্যাতি এনে দেয়।এইচএমভি-তেই ‘যদি বাসনা মনে দিবে দহন জ্বালা’ গানটি জগন্ময় মিত্রের কণ্ঠে শুনে কাজী নজরুল ইসলাম মুগ্ধ হয়ে খুব তারিফ করেছিলেন। সে থেকেই কাজী দা’র সাথে জগন্ময় মিত্রের আজীবনের হৃদ্যতা শুরু। অনেক নজরুল গীতি রেকর্ড করার পাশাপাশি, ১৯৪১ সালে কয়েকটি রবীন্দ্র সঙ্গীতও গান জগন্ময় মিত্র।১৯৪২-এর পুজোর রেকর্ড ‘চিঠি’ গেয়েই গানের জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন জগন্ময় মিত্র। তাঁর সাড়া জাগানো পুজোর আরেকটি রেকর্ড ১৯৪৮-এ প্রকাশিত ‘সাতটি বছর আগে পরে’। রেকর্ড করেন দুটি অসামান্য কাব্য গীতি– ‘সাতটি বছর আগে’ ও ‘সাতটি বছর পরে’। গান দুটি, পরবর্তীকালে গীত ‘চিঠি – তুমি আজ কত দূরে’ গানটির সাথে গড়ে তোলে এক অবিস্মরণীয় মরমী ট্রিলজি। এরপর ১৯৪০, ১৯৫০ এর দশক জুড়ে ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে’, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’, ‘যাদের জীবন ভরা শুধু আঁখিজল’, ‘তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন’, ‘ভুলি নাই ভুলি নাই’, ‘মেনেছি গো হার’, ‘আমি স্বপন দেখেছি’, ‘স্বপন সুরভী মাখা’, ‘গভীর নিশিথে ঘুম’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘হৃদয় যেন কাহারে চেয়েছিল’, ‘তোমারে তো আজও ভুলি নাই’, ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে’, ‘শাওনও রাতে যদি’ এমন অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গান গেয়ে জগন্ময় মিত্র শ্রোতাদের মনমুকুরে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নেন।

ভারতের হিন্দি সঙ্গীত জগতে তিনি “জগমোহন” নামে পরিচিত।

২০০৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৮৫ বছর বয়সে জগন্ময় মিত্র মুম্বাইয়ের জুহুতে পরলোকগমন করেন।

জগন্ময় মিত্র ১৯১৮ সালের আজকের দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.