Press "Enter" to skip to content

১৯২৪ সালে দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য শিক্ষার আলো নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি, অন্ধ ব্যক্তি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণ ও সহায়তায় এই পদ্ধতির সূত্রপাত করেন ফরাসি আবিষ্কারক ও শিক্ষক লুই ব্রেইল……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ লু ই ব্রে ই ল

বাবলু ভট্টাচার্য : সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা আমাদের পৃথিবীতে বঞ্চিত অনেক মানুষ আছেন, ভাগ্য যাদের চোখে দেখার ক্ষমতা দেয়নি অথবা দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছেন কোনো দুর্ঘটনায়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সেসব মানুষেরা বেঁচে থাকত অন্যের অনুগ্রহে, পরনির্ভরশীল হয়ে।

১৯২৪ সালে দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য শিক্ষার আলো নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি, যা স্রষ্টার সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। অন্ধ ব্যক্তি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণ ও সহায়তায় এই পদ্ধতির সূত্রপাত করেন ফরাসি আবিষ্কারক ও শিক্ষক লুই ব্রেইল।

পিতা সাইমন রেনে ছিলেন একজন চামড়া ব্যবসায়ী। ছোট থেকেই লুইস ব্রেইল পিতার কারখানায় যেতেন, সেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিই ছিল তার খেলনা। আকস্মিকভাবে একদিন তুরপুন (মুচিদের জুতো সেলাইয়ে ব্যবহৃত সূঁচ) নিয়ে খেলার সময় দুর্ভাগ্যবশত সেটা তার চোখে ঢুকে যায়। তখন এন্টিবায়োটিকের প্রচলন না থাকায়, ব্রেইলের অন্য চোখেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাত্র ৩ বছর বয়সে দুই চোখই পুরোপুরিভাবে অন্ধ হয়ে যায় তার।

ছোট থেকেই ব্রেইল প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। তাই দৃষ্টিহীনতা তার জীবনে যাতে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় এই উদ্দেশ্যে তার বাবা-মা ও জ্যাকুস পলি নামক সেখানকার গীর্জার একজন যাজক তাকে কুপভ্রের একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে তিনি তার অসামান্য মেধার পরিচয় দেন। কানে শুনে শুনেই তিনি অনেক কিছু শিখে ফেলতেন।

কিন্তু অন্ধত্ব তার জন্য সেখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, সেখানকার শিক্ষাপদ্ধতি ছিল সাধারণ শিশুদের জন্য। দশ বছর তিনি সেখানেই পড়াশোনা করেন। তার মেধা ও সৃজনশীলতা বিদ্যালয়ের পাদ্রীদের মুগ্ধ করে। তাই ১৮১৯ সালে তাকে ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড ইয়ুথ‘ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এটি ছিল তৎকালীন দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য বিদ্যালয়গুলোর একটি।

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, ভ্যালেনটিন হোয়, অন্ধ ব্যক্তিদের সহায়তা ও পড়াশোনায় তার জীবন অতিবাহিত করেন। দৃষ্টিহীন ব্যক্তি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত- সমাজের এই ধারণা বদলাতে তিনি সেখানে তাদের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন। কিন্তু পদ্ধতিটি খুব সহায়ক না হলেও তার প্রচেষ্টার ফলে পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করেই উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়েছিল।

ভ্যালেনটিনের তৈরি বইগুলো ছিল রোমান অক্ষরে লেখা। ব্রেইল লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করে সেসব বইয়ের সাহায্যে শিখতে শুরু করেন। অচিরেই তিনি অনুধাবন করেন, অক্ষরগুলো পড়তে অসুবিধা না হলেও লেখার জন্য ততটা সহায়ক নয়। তাছাড়া এভাবে শিখতে সময়ও লাগবে অনেক। শীঘ্রই ব্রেইলের একাগ্রতা ও অধ্যবসায় তাকে ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড ইয়ুথ‘ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ এনে দেয়।

শিক্ষকতা জীবনে দৃষ্টিহীন মানুষের পড়তে ও লিখতে তিনি আরো সহজ উপায় খুঁজে বের করায় বদ্ধপরিকর ছিলেন। অবশেষে তার কাজ আরো সহজ হয়ে যায় ১৮২১ সালে, যখন চার্লস বার্বিয়া নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ওই প্রতিষ্ঠানে আসেন। চার্লস বার্বিয়া একটি পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানান যেটা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়েছিল।

সাংকেতিক চিহ্নের সাহায্যে পড়ার এই অভিনব পদ্ধতি ব্রেইল সহ প্রতিষ্ঠানের সকলেরই খুব পছন্দ হয়েছিল। ব্রেইল অতি উৎসাহে পদ্ধতিটি আয়ত্ত করেন এবং আরো দুই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি সহজ ও সুন্দর সাংকেতিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।

১৮২৪ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ‘ব্রেইল‘ পদ্ধতি অবিষ্কার করেন এবং শীঘ্রই রয়্যাল ইনস্টিটিউটে তার প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে শিক্ষাদান শুরু করেন। ১৮২৯ সালে তিনি তার প্রথম বই ছাপান। তার নামানুসারে দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার এই অভিনব পদ্ধতি ‘ব্রেইল‘ পদ্ধতি নামেই প্রচলিত ও সমাদৃত হয়।

শৈশব থেকেই ব্রেইল সর্বদা অসুস্থতায় দিন অতিবাহিত করতেন। ৪০ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়লে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় তাকে কুপভ্রে নিয়ে আসা হয়। অবশেষে ১৮৫৩ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে প্যারিসে নিজ বাসভবনেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

লুইস ব্রেইল ১৮০৯ সালের আজকের দিনে (৪ জানুয়ারি) ফ্রান্সের কুপভ্রে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EducationMore posts in Education »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.