Press "Enter" to skip to content

১০ জুলাই ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চালু হয়…..।

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য : আজ ১০ জুলাই। বাংলাদেশের প্রাচীনতম মেডিকেল কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৩৬ সালের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের প্রায় একশ বছর পর ১৮৫৩ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠারও একশ’ বছরে এ অঞ্চলে কোন মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়নি। মধ্যবর্তী এ দীর্ঘ সময়ে কিছু মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল (যা বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ), ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল স্কুল।

তবে পূর্ববঙ্গে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে চলে আসে ১৯৩৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের কাছে ঢাকায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করে। কিন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে প্রস্তাবটি হারিয়ে যেতে থাকে তবে যুদ্ধের ডামাডোলে হারিয়ে যাওয়া প্রস্তাবটি ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে আলোর মুখ দেখে।

ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের ঢাকা, করাচী ও মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) তিনটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উপলক্ষে ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ মেজর ডব্লিউ জে ভারজিন এবং অত্র অঞ্চলের প্রথিতযশা নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৩৬ সালের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যায়াতটির সরকারি আনুষ্ঠানিকতা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার দরুণ প্রতিষ্ঠানটি শুরু করতে প্রায় দশ বছর লেগে যায়। সর্বশেষ ১০ জুলাই ১৯৪৬ তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চালু হয়।

বঙ্গভঙ্গের কারণে নবগঠিত বাংলা ও আসাম প্রদেশের সচিবালয়ের জন্য ১৯০৪ সালে নির্মিত ভবনটি ১৯২১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং এ ভবনের একাংশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র, আরেকটি অংশে ডরমিটরি এবং অবশিষ্টাংশে কলা অনুষদের শিক্ষা ভবন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সম্পূর্ণ ভবনটি আমেরিকান বেস হাসপাতালরূপে ব্যবহৃত হয় এবং যুদ্ধ শেষে আমেরিকানরা চলে গেলে ওখানে একটি একশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এভবনটিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চালু হয়।

প্রথম অবস্থায় এ হাসপাতালে মাত্র চারটি বিভাগ ছিল, যেমন : মেডিকেল, সার্জারি, স্ত্রীরোগবিদ্যা (গাইনিকলজি) এবং ইএনটি (নাক, কান, গলা)। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জন্য কোনো হোস্টেল বা আবাসিক ব্যবস্থা ছিল না। ছাত্রদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহে থাকার অনুমতি দেওয়া হত কিন্তু ছাত্রীদের নিজ নিজ বাসা থেকে এসে ক্লাস করতে হত।

১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এক বিরাট সংখ্যক ছাত্র চলে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। একইভাবে অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছেড়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে চলে যায়। কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে সাময়িক ছাউনি বানিয়ে সেগুলির কয়েকটিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও কয়েকটিতে ছাত্রদের হোস্টেল খোলা হয়।

পর্যায়ক্রমে ছাত্রাবাস, কলেজ ও হাসপাতালের জন্য নতুন নতুন ভবন নির্মিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালে ছাত্রীনিবাস, ১৯৫৪-৫৫ সালে ছাত্রাবাস, ১৯৫৫ সালে অনেকগুলি শিক্ষাভবন, ১৯৭৪-৭৫ সালে ইন্টার্নি ডাক্তারদের হোস্টেল নির্মাণ করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একই প্রশাসনের আওতায় থাকার পর দুটিকে বিভক্ত করে কলেজের প্রধান হিসেবে একজন প্রিন্সিপাল এবং হাসপাতালের প্রধান প্রশাসক হিসেবে একজন পরিচালক নিয়োগ করা হয়। যদিও দুটি প্রতিষ্ঠানই পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে।

মেডিকেল কলেজসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ভবন ও সংস্থা এখন প্রায় ২৫ একর জমির উপর ছড়িয়ে আছে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *