এবারই প্রথম
ভাস্কর ভট্টাচার্য : কলকাতা, ৩, ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ছোট তবু তুচ্ছ নয় এমন কথা বলা যেতেই পারে অন্তত উদ্যোক্তাদের অন্যতম রূপা মজুমদারের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর ঘোষণায় যেন সেই বার্তাই দিল। শুধু দিল না সামনে প্রতিজ্ঞা রাখলেন প্রতিবছর এমন বইমেলা আবার করবেন। তাঁর একটা নিজস্ব পরিচয়ও আছে, তিনি স্বনামধন্য একটি প্রকাশনারও কর্ণধার। কে বলে নারীরা উদ্যোগ নিতে পারে না?

তিনি দেখিয়ে দিলেনএই ডিজিটাল যুগেও বই বিক্রির তথ্য এবং অংশ নেওয়া প্রকাশকদের খুশিই বলে দিচ্ছিল উত্তর কলকাতা লাগোয়া কলকাতার হৃষিকেশ পার্কের বইমেলা জনপ্রিয়তায় শুরুর বছরেই বাজিমাৎ করেছে।
একদিকে লাগোয়া বিদ্যাসাগরের বাড়ি, উল্টো দিকে সিটি কলেজ, রামমোহন কলেজ (একই বাড়িতে) এমন উল্লেখযোগ্য পরিবেশে বইমেলা যেন যথার্থ হয়ে উঠেছিল।

ছোট পরিসরে মাত্র ৪২টা দোকান সহ লিটল ম্যাগাজিন স্টল নিয়ে এবারেই প্রথম সংঘটিত হল এই বইমেলা। নাম না থাকলেও আগামী দিনে ‘মহানগর বইমেলা’ নামেই চিহ্নিত হবে সদ্য জন্ম নেওয়া এই বইমেলা।

মেলার শেষ দিনে নাট্যকার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, রাইস গ্রুপের কর্ণধার ও শিক্ষাবিদ সমিত রায়, উদ্যোগপতি সমর নাগের উপস্থিতিতে এমনই নামকরণের কথা জানালেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। লোগো এবং নাম তিনিই তৈরি করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য এ বছর মহামারি আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক কলিকাতা বইমেলাকেও। তারই সুলভ সংস্করণ বলা যেতে পারে হৃষিকেশ পার্কে র এই বইমেলা। যদিও গিল্ডের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বই নিয়ে আলাপ আলোচনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে বইকেনার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো।

রূপা মজুমদার জানালেন মাত্র কদিনের উদ্যোগে গঠিত এই মেলায় বই বিক্রি হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকার। আরো একটা তথ্য না দিলেই নয়, এখানে ২৫ শতাংশ ছাড়ে ক্রেতারা বই কিনতে পেরেছেন।
এটা ডিজিটালের যুগ। মহামারির কাল। তবু বই, ছাপা বইয়ের আকর্ষণে বার বার বই অনুরাগী মানুষ ছাপা বইয়ের গন্ধ নিতে, ছুটে এসেছিলেন। হাতে তুলে নিয়ে দেখার স্বাদই আলাদা।

অত্যন্ত মূল্যবান কথা বললেন সমিতবাবু, ‘ বই এমন একটা জিনিস যা উপহার দিলে মানুষ অনেক দিন মনে রাখে। পাঠকদের হাতে ভালো বই তুলে দেওয়াটাও প্রকাশকের দায়িত্ব। ‘লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী তাঁর লেখার ঢঙেই রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, নজরুল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে একই ঘরে বাস করার গল্প শোনালেন। সব শেষে উদ্যোক্তাদের কণ্ঠে ঘোষণায় শোনা গেল, যার উদ্যোগ সহযোগিতা ছাড়া এমন বইমেলা সম্ভব হতো না, তিনি লেখক সাংবাদিক একদা সাংসদ, রাজনীতিক কুণাল ঘোষ।

শেষদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শঙ্কর মন্ডল, হিমাদ্রী কিশোর দাসগুপ্ত, স্বতীলেখা সেনগুপ্ত, তাপস রায়, স্মিতা বক্সী সহ বিশিষ্টজন।

শীতের নলেন গুড়, মোয়ার গন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির আরেকটা প্রিয় গন্ধ তা হল শীতকালীন বইমেলার বইয়ের ঘ্রাণ।

সেই ঘ্রাণই মেখে ছিল হৃষিকেশ পার্কের এই ছোট্ট বইমেলা। আজ শেষ হল।


Be First to Comment