গোপাল দেবনাথ/সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা,৮মার্চ ২০২০ হিরো সাইকেল শিল্পগোষ্ঠীর ডাকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আমরা হাজির হয়েছিলাম দক্ষিণ পূর্ব কলকাতার বাইপাসের ধরে এক সাত তারা খচিত হোটেলে।সাইকেল শব্দটির সঙ্গে মনে পড়ে গেলো বেশ কয়েক জন বাঙালির কথা। বিশ্বখ্যাত বাঙালি অমর্ত্য সেন। যিনি শান্তিনিকেতনে ক্লাস করাতে যেতেন সাইকেলে চড়ে।
আজও সেই সাইকেল নোবেল মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। মনে পড়ছে সাঁতরাগাছির আর এক বাঙালি প্রসন্ন কুমার ঘোষের কথা। যিনি প্রথম ভারতে তথা কলকাতায় সাইকেল তৈরি করেন। তার আগে কলকাতার উচ্চ আয়ের লোকেরা বিলেত থেকে আমদানি করা ভেলোসিপেড সাইকেল চড়তেন।
সেই সাইকেলে প্যাডেল ছিল না। পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে চালাতে হতো। প্যাডেল সাইকেল চালু হওয়ার পর সস্ত্রীক জগদীশ বোস, বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ড,নীলরতন সরকার আর তাঁর স্ত্রী নির্মলা দেবী সান্ধ্য ভ্রমণে বড়বাজার ,মেছুয়াতে সাইকেলের সওয়ার হতেন। জগদীশচন্দ্র তো সাইকেলের নাম দেন পুষ্পক রথ। আজও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। পেশাগতভাবে আজও খবরের কাগজ বিক্রেতাদের অমরসঙ্গী সেই সাইকেল।
বিশ্বজোড়া খ্যাতিপ্রাপ্ত সাইকেল নির্মাণসংস্থা হিরো গ্রুপের পারিবারিক সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা ড. ব্রিজমোহনলাল মুঞ্জলের কনিষ্ঠ পুত্র সুনীল কান্ত মুঞ্জাল হিরো কর্পোরেট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান লিখেছেন একটি বই। বইটির নাম মেকিং অফ হিরো, ফোর ব্রাদার্স টু হুইলস। ইংরেজিতে প্রকাশিত এই বইটির প্রকাশক হারপার কলিন্স ইন্ডিয়া। সুনীল কান্ত তাঁর বইতে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন হিরো ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর নেপথ্য ইতিহাস। দেশ বিভাজনের বলি বাস্তুচ্যুত চার ভাই এর ছিল ছোট সাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবসা। গভীর নিষ্ঠা, সততা এবং দূরদর্শিতা এনে দেয় চরম সাফল্য।
বিশ্বের দরবারে হিরোগোষ্ঠী শুধু নিজেদের খ্যাতি প্রতিষ্ঠিত করেন তাই নয়, ভারতের নামও উজ্জ্বল করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সুনীল কান্ত বলেন, হিরো গোষ্ঠীর কর্মী, গ্রাহক, চ্যানেল পার্টনার, সরবরাহকারী ও স্থানীয় মানুষদের পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তা সাফল্যের চাবিকাঠি। এই বইটি নতুন প্রজন্মের উদ্যোগীদের আশা করি সঠিক পথে চলতে দিশা দেখাবে। এই অনুষ্ঠানেই এই রাজ্য ও রাজ্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনেকদিন পর কলকাতায় এলাম এত সুন্দর হয়েছে শহরটা মন ভরে গেল। এই রাজ্যের কৃষি, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুমুখী কাজের প্রশংসা করেন। অনেক রাজ্যের চেয়ে অনেক বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ অনেক এগিয়ে আছে সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন সুনীল কান্ত মুঞ্জাল। হোটেলের আর এক প্রান্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সি আই আই এর একটি সেমিনার।
বিষয় প্রবীণদের অভিজ্ঞতালব্ধ পাণ্ডিত্য কিভাবে সাফল্যের রূপ দেয়। আলোচনায় অংশ নেন সুনীল কান্ত মুঞ্জাল এবং অ্যাপেলো গ্রুপের নির্বাহী ভাইস চেয়ারপারসন শবানা কাম নেনিও। সঞ্চালনা করেন ড: জন্মেঞ্জয় সিনহা।
বঙ্কিম চন্দ্র বলেছিলেন,ইংরেজ পাখি শিকারেরও ইতিহাস লিখে রাখে।
বাঙালি লেখে না। এই অপবাদ শুধু বাঙালির প্রাপ্য নয়, ভারতবাসীরও প্রাপ্য। সেই অপবাদ হয়ত কিছুটা ঘোচালেন হিরো এন্টারপ্রাইজ এর সুনীল কান্ত মুঞ্জাল।
Be First to Comment