Press "Enter" to skip to content

হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ১০৮ সংখ্যা….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৭ জুলাই, ২০২৫

” ১০৮ সংখ্যাটি সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ কেন? ”
———————————————————

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৭ জুলাই, ২০২৫। “ওঁ” কার যেমন হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মাহাত্ম্যপূর্ণ “১০৮ সংখ্যাটি” ! আমরা হিন্দুরা এই সংখ্যা দিয়ে পরমব্রহ্মকে প্রকাশ করে থাকি ৷
ব্রহ্ম = ব+র+হ+ম = ২৩+ ২৭+ +৩৩ +২৫=১০৮
সংস্কৃত বর্ণমালার অক্ষর সংখ্যা ৫৪ আবার প্রতিটি বর্ণের রয়েছে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বা পরমশিব ও আদ্যাশক্তি ৷ তাই ৫৪x২=১০৮ ৷ ১’০,৮: এর ১কে ঈশ্বরের প্রতীক , ০ কে আধ্যাত্মিক অভ্যাসের পরিপূর্ণতা এবং ৮ কে অসীমের প্রতীক কল্পনা করা হয় ৷প্রাচীন ঋষিরা সময়কে ১০৮ টি উপলব্ধিতে ভাগ করেছিলেন ৷
অতীত=৩৬ ,বর্তমান=৩৬ এবং ভবিষ্যত =৩৬ তিন মিলে ১০৮ ৷ ভারতবর্ষে উৎপন্ন সব ধর্মে হিন্দু , বৌদ্ধ , শিখ ও জৈন ধর্মে বৈচিত্র্য থাকলেও জপমালার সংখ্যা একই অর্থাৎ ১০৮ ! জৈনরা মনে করেন আমাদের দেহে ৫ প্রকার গুণ ( ১২+৮+৩৬+২৫+২৭ ) এভাবে থাকে ৷চীনের তাও ধর্মাবল্বীরা ‘শু – চু’ নামের পুঁতির মালা জপ করেন ৷এদের মালা ৩৬x৩ হিসাবে তিন ভাগে বিভক্ত ৷ চীনা জ্যোর্তিবিদগণ মহাকাশে ১০৮ টি তারা আছে বলে ভাবতেন ৷ বৌদ্ধরা অনেকে আখরোটের উপর ১০৮টি ছোট বুদ্ধদেবের মূর্তি খোদাই করে জপ করেন ৷সনাতনী ধর্মী শৈবরা ১০৮টি রুদ্রাক্ষের এবং বৈষ্ণব গণ ১০৮টি তুলসী কাঠির মালা জপ করেন ৷নারায়ণ পূজায় ১০৮টি তুলসী পাতা , শিব পূজায় ১০৮টি বেলপাতা আবার দুর্গাপূজায় ১০৮ টি পদ্ম দেওয়া উচিত ৷ সনাতনী পঞ্চোপাসকগণ গণেশ , শ্রীকৃষ্ণ , মহাদেব , চন্ডী বা দুর্গা, সূর্য বা আদিত্যকে নিজেদের ইষ্ট মেনে পুজো করেন ৷ এঁদের প্রত্যেকের রয়েছে ১০৮টি নাম ৷ যা পাঠ করা পুণ্যের কাজ মনে করি ৷ ভগবানকে পাওয়ার ১০৮টি পথ বা মার্গের কথা জানা যায় ৷হিন্দু ধর্মে তন্ত্র পীঠের সংখ্যা ১০৮টি ৷সনাতন ধর্মীদের প্রধান তীর্থস্থান ১০৮টি ৷চারটি বেদ সমেত মোট উপনিষদের সংখ্যা ১০৮টি ৷ শ্রীকৃষ্ণ ১০৮জন গোপিনীর সঙ্গে তাঁর লীলা করেছেন ৷ আয়ুর্বেদ ও যোগশাস্ত্র অনুসারে মানুষের দেহের ১০৮টি পথ ধরে চালিকা শক্তি এসে আমৃত্যু হৃদপিন্ডকে সচল রাখে ৷ আয়ুর্বেদে শরীরে ১০৮টি মর্মস্থানের কথা আছে যা সবগুলি সন্ধি বা জয়েন্টের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ৷সূর্যপ্রণাম মন্ত্র বা মালা জপের দ্বারা এদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায় ৷ একসময় ভাবা হয়েছিল মানব শরীরের পার্থিব শরীরের বাইরের অংশ আর অন্তরাত্মার দূরত্ব ১০৮ একক ৷ ভারতবর্ষে ১০৮ রকম নৃত্যকলা আছে ৷ আর নটরাজ শিব হলেন নৃত্যগুরু ৷ তাঁর তান্ডব থেকে সৃষ্ট ভারতনাট্যম নৃত্যে রয়েছে ১০৮টি হস্ত ও পদ্মমুদ্রা ৷মানব শরীরের ৬ টি ইন্দ্রিয় – চোখ , কান ,নাক , জিভ , ত্বক ও চিন্তা , আর ৩ হল ত্রিকাল অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত , আমাদের হৃদয়ের দুরকম অবস্থা নির্মল ও কলুষিত এবং মানুষের মনের তিনটি স্তর ইচ্ছা , অনিচ্ছা ও উদাসীনতা ৷ তাহলে সূত্রটি দাঁড়ায় ৬x৩x২x৩ =১০৮৷ আমাদের ধ্যান ও জপের মূল লক্ষ্য হল ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করে মনকে চালনা করা এবং কালের উপরে উঠে মনকে চালনা করা ৷ আমরা যদি দিনের অর্ধেক সময় ভগবানের জন্য রাখি তাহলে মিনিটে ১৫ শ্বাসক্রিয়া হিসাবে ১২ ঘন্টায় সর্বাধিক ১০,৮০০ বার ইষ্টনাম জপ বা আরাধনা করতে পারি ৷ তাই মনেহয় বৈদিক ঋষিরা জপমালায় ১০৮টি পুঁতির প্রচলন করেছিলন ৷ প্রশান্ত মনে ১০৮ বার প্রাণায়াম আমাদের দেহে ও মনে নতুন শক্তি এনে দেয় ৷ ব্রহ্মার প্রতীক ৯ সংখ্যা এবং সূর্যের প্রতীক ১২ সংখ্যা গুণ করলে হয় ৯x১২=১০৮ বৈদিক দেবতা সূর্যের সঙ্গে যজুর্বেদে ব্রহ্মার তুলনা করা হয়েছে ৷সূর্যের ১২টি রাশিচক্র আছে ৷ ১২টি রাশি x ব্রহ্মার প্রতীক ৯ =১০৮(১+০+৮+৯) খুব পবিত্র সংখ্যা ৷ তাই তুলসীদাসের ‘রাম চরিতমানস’ ৯ দিনে পড়া সম্পূর্ণ করতে হয় ৷ যাকে ‘নরাহ্ন পরায়ণ’ বলে ৷ মহাভারতের প্রত্যেকটিতেই ১৮-টি অধ্যায় আছে ৷মনে করা হয় পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব হল সূর্যের ব্যাসের ১০৮গুণ ৷ আবার সূর্যের ব্যাস মোটামুটি পৃথিবীর ব্যাসের ১০৮ গুণ ৷আবার একসময় মনে করা হত পৃথিবী থেকে চাঁদ ও সূর্যের যা দূরত্ব তা পৃথিবীর ব্যাসের ১০৮ গুন ৷ হিন্দুরা সত্য , ত্রেতা , দ্বাপর ও কলি এই চার যুগে বিশ্বাসী ৷ সবারই ব্যাপ্তির যোগফল নয় ৷একটি পঞ্চভুজের দুটি পাশাপাশি রেখা মিলিত হয়ে ১০৮ ডিগ্রীর কোণ উৎপন্ন হয় ৷ আমাদের ছায়াপথের ২৭টি নক্ষত্রপুঞ্জের সবার ৪ টি করে দিক আছে ৷তাই বলা যায় ২৭x৪=১০৮ সংখ্যাটি সম্পূর্ণ ছায়াপথকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে বলে প্রাচীন জ্যোতিষ ধারণা ৷ আমাদের পবিত্রতম নদী মা গঙ্গার দ্রাঘিমা বিস্তার ১২ ডিগ্রী এবং এর অক্ষাংশ ৯ ডিগ্রী মানে ১২x৯=১০৮ ৷ প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশে পাড়ি দিতে ১০৮ মিনিট সময় লেগেছিল ৷ বিভিন্ন মন্দিরের মহামন্ডলেশ্বর বা প্রধানদের নামের আগে ‘শ্রী শ্রী ১০৮’ লেখা বা বলা হয় ৷
১০৮ হল সংস্কৃতে ‘হর্ষদ সংখ্যা’ ৷ যার অর্থ এই সংখ্যাকে তার সমষ্টি দিয়ে ভাগ করা যায় ৷ ১+০+৮ =৯ , আবার ১০৮÷৯=১২ ৷ ১০৮ সংখ্যাটি ২, ৩,,৪,১২ দিয়ে বিভাজ্য৷ এজন্য অনেক মালায় পুঁতির সংখ্যা ৫৪ , ৩৬, ২৭ এবং ৯ ৷ আধ্যাত্মিক মতে মানুষের ১০৮ ধরণের পার্থিব আকাঙ্খা থাকে ,তারা ১০৮ রকম মিথ্যা বলে , যা থেকে ১০৮ প্রকার বিভ্রান্তি তৈরী হয় ৷ বিষয়গুলি সবাই মেনে না নিলেও আসলে এভাবে আমরা একমাত্র সত্য ভগবানকে মহাবিশ্বের প্রতীক রূপে ১০৮ সংখ্যায় প্রকাশ করেছি ৷কোন মন্ত্র ১০৮ বার শুদ্ধভাবে ও শুদ্ধাচারে উচ্চারণ করলে তা বিশ্বব্রহ্মান্ডের মধ্যে প্রবাহিত তরঙ্গের সাথে মিলে যায় ৷ আমাদের হৃদয় চক্রকে ঘিরে থাকা এনার্জি লাইনে সুষুম্না ক্রাউন চক্রের সৃষ্টি করে আত্মপোলব্ধি বিকশিত হয় ৷

More from CultureMore posts in Culture »
More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.