স্মরণঃ কু ন্দ ন লা ল (কে এল) সা য় গ ল
বাবলু ভট্টাচার্য : প্রথাগত সংগীত শিক্ষার তালিম তিনি নেননি কোনদিন, ছিলনা কোন সঙ্গীত গুরু। সেই তিনিই তার অননুকরণীয় কন্ঠ ও গায়নশৈলীতে ১৯৩০ এর দশকে বাংলা ও হিন্দি গানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন হিন্দি ছায়াছবির প্রথম ‘মহাতারকা’। কুন্দনলাল সায়গল।
১৯০৪ সালের ১১ এপ্রিল জম্মু প্রদেশের নয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন কুন্দনলাল সায়গল।
পিতা অমরচাঁদ ছিলেন জম্মুর এক তহশীলদার। ধর্মপ্রাণ মা কেশর কাউরের হাত ধরে কুন্দনলাল নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতেন, শুনতেন ভজন, কীর্তন। পিতার সঙ্গে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে রাখাল বালকদের মুখে শুনতেন পাঞ্জাব ও কাশ্মিরের লোক সুর। বালক কুন্দন নিজেও রামলীলায় গান গাইতেন।
কম বয়স থেকেই কুন্দন স্কুল ছেড়ে দিয়ে রোজগারের সন্ধানে নানান কাজ করেছেন। প্রথমে রেলওয়ের টাইম কিপারের কাজ, পরে রেমিংটন টাইপরাইটারের সেলসম্যানের কাজের সুবাদে ঘুরেছেন ভারতের নানান প্রান্ত। গান গাওয়ার প্রবল টান অবশেষে কুন্দনকে নিয়ে আসে কলকাতায় তার ভাগ্যান্বেষণে।
কলকাতায় কুন্দন নজরে পড়েন প্রবাদপ্রতীম সঙ্গীত পরিচালক রাইচাঁদ বড়াল মহাশয়ের। তিনি কুন্দনকে নিয়োগ করেন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের পথিকৃত সংস্থা ‘নিউ থিয়েটার্স’-এ। সেখানে তখন পঙ্কজকুমার মল্লিক, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পাহাড়ী সান্যালের মতো বড় মাপের মানুষ নিউ থিয়েটার্স আলোকিত করছেন।
সায়গল অভিনীত প্রথম ছায়াছবি ‘মহব্বত কি আঁসু’ মুক্তি পায় ১৯৩২ সালে। এরপর ‘পুরাণ ভগত’, ‘ইহুদি কি লড়কি’, ‘চন্ডীদাস’, ‘রূপলেখা’ ছবিতে তার অভিনয় ও গানে সায়গলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
সায়গল খ্যাতির শীর্ষ স্পর্শ করেন ১৯৩৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবির অভিনয়ের সূত্রে। তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘সাথী’ (হিন্দি- ‘স্ট্রীট সিঙ্গার’) ছবিতে রাগাশ্রয়ী ‘বাবুল মোরা নৈহর ছুটল যায়’ গানটি তো এখনো অমর হয়ে আছে। কিংবা প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘শেষ উত্তর’ ছবিতে গাওয়া সায়গল কন্ঠের দুটি রবীন্দ্র সংগীত ‘আমি তোমায় যত’ ও ‘তোমার বীণায় সুর ছিল’ শুনে মুগ্ধতার সীমা থাকে না। সায়গলই ছিলেন রবীন্দ্রগানের প্রথম অ-বাঙালি কন্ঠশিল্পী।
রবীন্দ্রনাথ নিজে সায়গলের গান শুনে সিনেমায় তার গান গাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।
কুন্দনলাল সায়গল ১৯৪৭সালের আজকের দিনে (১৮জানু) ৪২ বছর বয়সে পাঞ্জাবের জলন্ধরে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment