মোল্লা জসিমউদ্দিন – সোমবার দুপুরে বিধাননগরে স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনালে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলার শুনানি চলে। কোন নির্দেশজারী না হলেও স্যাটের বেঞ্চ জানিয়ে দেয় – একাধারে গত ২৬ জুলাইয়ের এই বেঞ্চের রায়ের উপর রাজ্যের পুনঃ বিবেচনার আবেদন (আপিল) চলবে। ঠিক তেমনি স্যাটের রায় কার্যকর না করার জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননারও শুনানি চলবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৮ জানুয়ারি রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই স্যাটের ডিএ মামলার রায়দানে একমাসের মধ্যে রাজ্য কে পদক্ষেপ নিতে বলেছিল স্যাটের এই বেঞ্চ। তা কার্যকর করেনি রাজ্য সরকার। তাই রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা করে মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন।২০১১ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। রাজ্যে পালাবদল হলেও সেই বঞ্চনা যেন দিন কে দিন বেড়েই চলছিল। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের কর্মী সংগঠনের তরফে ডিএ নিয়ে মামলা দাখিল হয়। স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্ট, আবার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত। এইসবের মাঝেই এগারো মাসের শুনানির পর গত ২৬ জুলাই বিধাননগরে অবস্থিত স্যাট ( স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত) ডিএ মামলার নিস্পত্তি ঘটেছিল। সেই রায়ে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় হারে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ডিএ পাবেন। আগামী তিনমাসের মধ্যে ডিএ এর বর্ধিত অর্থ পাওয়া নিয়ে আইন করতে হবে এবং সেটা আগামী ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। সেইসাথে কর্মীদের নগদে কিংবা পিএফ একাউন্টে জমা করতে হবে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা। ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্ট আগে হলে সেটা আগে কার্যকর করতে হবে। রিপোর্ট না এলে আগামী একবছরের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে। সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য মেনে এই নির্দেশ। এইমুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ডিএ পান বেশি আর এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা পান কম। অর্থাৎ ফারাক রয়েছে বেতন পরিকাঠামোয়। বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা এক বছরের মধ্যেই মিটিয়ে দিতে বলেছিলেন স্যাটের বিচারবিষয়ক বিচারক রঞ্জিত বাগ এবং প্রশাসনিক বিষয়ক বিচারক সুবেশ কুমার দাসের ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও স্যাটের রায় ঘোষণা পরবর্তী মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন – সব দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি এই রাজ্যের বিভিন্ন পরিষেবামূলক কর বৃদ্ধি না করার সাথে ডিএ এর বর্ধিত অর্থ না বাড়ানোর যুক্তি দেখিয়েছেন। রাজ্যের পক্ষে সরকারি আইনজীবীদের মধ্যে বিশ্বপ্রিয় রায় বলেন – “সরকারের বকেয়া মহার্ঘভাতা দেওয়া সদিচ্ছা আছে, তবে অর্থাভাবে সবটা দেওয়া সম্ভব নয়”। উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল অবধি বিগত বাম সরকার রাজ্য সরকারের কর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা মুদ্রাস্ফীতি হারে সামঞ্জস্য রেখে বাড়িয়ে ছিল। এর পরে তৃণমূল জমানায় রাজ্য সরকারের কর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা কেন্দ্রীয় হারে বাড়েনি তবে দিল্লী -চেন্নাইতে কর্মরত সরকারি কর্মীদের ডিএ কেন্দ্রীয় অনুপাতে বাড়ছিল। একাধারে সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য মেনে সরকারি কর্মীদের বেতনের মহার্ঘ্য ভাতা যেমন বাড়েনি, ঠিক তেমনি দিল্লি – চেন্নাইতে কর্মরত সরকারি কর্মীদের বেতন পরিকাঠামোয় এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বেতন বৈষম্য কেন? কেননা রাজ্য সরকার তো একটায় উভয় সরকারি কর্মীদের। কংগ্রেস প্রভাবিত রাজ্য সরকারের কর্মী সংগঠনের তরফে ডিএ নিয়ে মামলা দাখিল করেন মলয় মুখোপাধ্যায়। মামলাকারীর আইনজীবী হিসাবে অন্যতম আইনজীবী রয়েছেন সর্দার আমজাদ আলী। স্যাটে মামলা গ্রহণের প্রথম পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয় – কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা রাজ্যের সরকারি কর্মীদের অধিকার নয়, রাজ্যের দয়ার দান হল মহার্ঘভাতা। এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যান মামলাকারীরা। তখন ডিভিশন বেঞ্চ জানায় – বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা পাওয়া রাজ্য সরকারের কর্মীদের আইনসিদ্ধ অধিকার। তাই পুনরায় বিবেচনার জন্য স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালতে মূল মামলাটি পাঠায়। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন আদেশনামার বিরুদ্ধে রাজ্যের পক্ষে সরকারি আইনজীবীরা স্থগিতাদেশ চাইলে তা খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ২৬ জুলাই স্যাট জানিয়েছিল – কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা পাবেন এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। আগামী এক বছরের মধ্যেই মিটিয়ে দিতে হবে। তবে এর আগে ষষ্ঠ পে কমিশন লাগু হলে সেটায় গ্রাহ্য হবে। যদি পে কমিশন লাগু না হয় তাহলে প্রথম তিনমাসের মধ্যে ডিএ নিয়ে আইন গঠন,পরের তিন মাসে তা কার্যকর করা। বকেয়া মহার্ঘ্যভাতাটি নগদে কিংবা পিএফ একাউন্টে জমা করতে হবে। মামলায় আবেদনকারীর দের বক্তব্য – “অল ইন্ডিয়া কনজুমার প্রাইস ইন্ডেক্স মেনে স্যাটের এই নির্দেশজারি হয়েছিল। রাজ্য সরকার তাদের একই কর্মীদের দু ধরনের বেতন বৈষম্য রেখেছে। যারা ভিন রাজ্যে কর্মরত তাদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা আর এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের জন্য নেই কোন মহার্ঘভাতা, এটা তো বেআইনি। ” । উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অধীনে থাকা কর্মীদের জন্য বছরে দুবার মহার্ঘভাতা দেয়। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা বেশি পান মহার্ঘভাতা। সেখানে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা পান কম। বেতন পরিকাঠামোয় তা কম। এখন দেখার রাজ্য সরকার স্যাটের নির্দেশ অনুযায়ী একবছরের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা দেয় কিনা। নাকি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্যের তরফে স্যাটের ডিএ মামলার রায় আপিল করার আবেদন জমা পড়েছিল। তা আদালত গ্রহণ করে থাকে। আবার তিনমাসের মধ্যে এই রায় কার্যকর না করার জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলাও গ্রহণ করা হয়। আগামী ৮ জানুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
স্যাটে ডিএ মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ জানুয়ারি
More from GeneralMore posts in General »
- ইংরেজি দৈনিক ইকো অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন…।
- Cycling is Faster than Perceived – Beats Cars in Congested Corridors….
- দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব হল শেষ, বাংলাদেশে এই দিনটার গুরুত্ব অশেষ…।
- সুবীর কুমার সাহা গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন….।
- Dish TV Launches Dish Smart+ for Android TV’s – A Game-Changer Offering Seamless Entertainment experience across TV and OTT…
- মহাবোধি সোসাইটি হলে বীর সাভারকরের ১৪৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হলো…।
Be First to Comment