Press "Enter" to skip to content

স্পিলবার্গ তার কর্মজীবন শুরু করেন ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও’তে ইন্টার্ন হিসেবে এডিটিং বিভাগে। এই স্টুডিও থেকে স্পিলবার্গ থিয়েটারে মুক্তির জন্য নির্মাণ করেন ২৬ মিনিটের একটি মুভি, যার নাম ‘Amblin’।

Spread the love

শুভ জন্মদিন স্টিভেন স্পিলবার্গ

“সব ভালো ধারণার জন্ম হয় খারাপগুলো থেকেই , তাই ভালো ধারণার জন্ম হতে দেরি হয়।” ------- স্টিভেন স্পিলবার্গ

বাবলু ভট্টাচার্য : তখন তিনি ছয় বছরের বালক। একদিন বাবা তাকে সার্কাস দেখতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিউ জার্সি থেকে ফিলাডেলফিয়ায় নিয়ে যান। শীতকালের সেই সময়টায় অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বাবা-ছেলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা যেখানটায় প্রবেশ করেন জায়গাটি ছিল ধোঁয়াটে, মৃদু আলোকিত এবং গম্বুজাকার একটি ঘর। বালকটি বুঝতে পারছিলেন না তার বাবা তাকে সার্কাসের কথা বলে কোথায় নিয়ে এসেছেন। যখন সামনের পর্দাটি উঠে যায় তখন তিনি বুঝতে পারেন তার বাবা তাকে সার্কাস নিয়ে বানানো একটি সিনেমা দেখতে নিয়ে এসেছেন। এই হলো বালক স্পিলবার্গের সাথে সিনেমার পরিচয়।

স্পিলবার্গ, বাবার সাথে যে সিনেমাটি দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন তাতে একটি ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্য ছিল। সেই দৃশ্যটিই মনের মধ্যে গেথে রইলো স্পিলবার্গের। ছোট্ট স্পিলবার্গ পরে জানতে পারেন যে ট্রেনটি ছিল একটি খেলনা ট্রেন এবং এটি একটি স্পেশাল ইফেক্টের কাজ। কিন্তু তার কাছে এই দৃশ্যটি সবচেয়ে বাস্তব দৃশ্য বলে মনে হলো।

ক্যালিফোর্নিয়ার Saratoga High School থেকে ডিগ্রি অর্জন করার পর ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় নাটক, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য তিনবার আবেদন করে তিনবারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। পরবর্তীতে California State University তে পড়াশোনা শুরু করেন।

স্পিলবার্গ তার কর্মজীবন শুরু করেন ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও’তে ইন্টার্ন হিসেবে এডিটিং বিভাগে। এই স্টুডিও থেকে স্পিলবার্গ থিয়েটারে মুক্তির জন্য নির্মাণ করেন ২৬ মিনিটের একটি মুভি, যার নাম ‘Amblin’। স্টুডিওর ভাইস প্রেসিডেন্ট মুভিটি দেখে মুগ্ধ হন। এই মুভিটির সুবাদে ‘মেজর হলিউড স্টুডিও’ স্পিলবার্গের সাথে দীর্ঘ সময়ের একটি চুক্তি করেন।

১৯৬৯ সালে পেশাদার চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পথচলা শুরু করা স্পিলবার্গ প্রথম দিকে টেলিভিশনে প্রচারের জন্য মুভি তৈরি করলেও ধীরে ধীরে বড়পর্দায় নিজের মুন্সিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে থাকেন। ‘মেজর হলিউড স্টুডিও’-এর দুই প্রযোজক Richard D Zanuck এবং David Brown স্পিলবার্গকে ‘Jaw’ মুভি পরিচালনার প্রস্তাব দেন। বক্স অফিস কাঁপানো এই মুভিটি আয় করে লক্ষ লক্ষ ডলার। একই সাথে স্পিলবার্গ হয়ে ওঠেন সবচেয়ে কম বয়সীয় মাল্টি মিলিওনিয়ার।

এর পরের মুভিতে স্পিলবার্গ মনোযোগ দেন সাইন্স ফিকশন ধর্মী ছবির দিকে। স্পিলবার্গের প্রথম সাইন্স ফিকশনধর্মী মুভিটি হলো ‘E.T. the Extra-Terrestrial’। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয় করা মুভি হিসেবে এটি স্থান করে নেয়। এরপর স্পিলবার্গ আরও দুটি ব্যবসা সফল মুভি নির্মাণ করেন। সেগুলো হলো- Poltergeist, The Twilight Zones।

সাইন্স ফিকশন মুভি থেকে স্পিলবার্গ আবার ফিরে যান Indiana Jones এর পরবর্তী ছবি Indiana Jones and The Temple of Doom। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় স্পিলবার্গের পরবর্তী ছবি The Colour Purple। ১৯৯৩ সালে স্পিলবার্গ আবারো ফিরে আসেন এডভেঞ্চার মুভিতে। তৈরী করেন বিখ্যাত মুভি Jurassic Park— আরো একটি ব্যবসা সফল ছবি। তাঁর পরবর্তী ছবি ছিল সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত ছবি Schindler’s List। ছবিটির জন্য স্পিলবার্গ অর্জন করেন প্রথম সেরা পরিচালক হিসেবে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড।

স্পিলবার্গ গড়ে তোলেন ‘DreamWorks’ নামে নিজস্ব একটি স্টুডিও। দীর্ঘ তিন বছর পর ১৯৯৭ সালে আবার ফিরে আসেন মুভির জগতে এবং হাল ধরেন জুরাসিক পার্ক-এর। ১৯৯৭ সালে নির্মাণ করেন জুরাসিক পার্কের পরবর্তী মুভি ‘The Lost World: Jurassic Park’। এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর স্পিলবার্গ যে মুভিটি নির্মাণ করেছিলেন সেটি সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৯৮ সালে এসে আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর মুভি নির্মাণ করেন স্পিলবার্গ। মুভিটির নাম ‘Saving Private Ryan’।

এবার কিন্তু নিজের জাত চেনাতে ভুল করেন নি স্পিলবার্গ। এই মুভিটির মাধ্যমে নিজের ঝুলিতে ভরেন দ্বিতীয় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড। এরপর টম ক্রুজকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘Minority Report’। ২০০২ সালে তিনি কাজ করেন Leonardo DiCaprio এর সাথে Catch Me if You Can। ২০০৪ সালে Tom Hanks আর Catherine Zeta-Jones এর সাথে নির্মান করেন The Terminal। ২০০৮ এ মুক্তি পায় স্পিলবার্গের ইন্ডিয়ানা মুভি Indiana Jones and the Kingdom of the Crystal Skull। ২০০৯ সালে এসে ভিন্ন পথে হাটা শুরু করেন স্পিলবার্গ। এবার তিনি নির্মাণে হাত দেন ট্রিলোজি মুভি ‘The Adventure of Tintin’। ২০১১ সালে এই মুভিটি মুক্তি পায়।

২০১২ সালের ৮ নভেম্বর স্পিলবার্গের সর্বশেষ ছবি ‘লিংকন’ মুক্তি পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এর উপর এই মুভিটি নির্মাণ করেন অস্কারে ১২ টি বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া এই ছবিটি ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যবসা করে। এই আয়ের এক-তৃতীয়ায়শই এসেছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত ১২ টি বিভাগের মধ্যে ২টি বিভাগে অস্কার জিতে এই মুভিটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফোর্বস’ সাময়িকীতে ২০১৪ সালে প্রকাশিত জরিপ মতে আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী সেলিব্রেটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন স্পিলবার্গ। সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী সেলিব্রেটির তালিকায় প্রথম স্থানে উঠে আসেন স্পিলবার্গ।

স্টিভেন স্পিলবার্গ ১৯৪৬ সালের আজকের দিনে (১৮ ডিসেম্বর) আমেরিকার ওহায়ো শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *