স্মরণঃ সৈ য় দ মু স্ত ফা সি রা জ
বাবলু ভট্টাচার্য : ষাটের দশকে বাংলা সাহিত্যে একঝাঁক নতুন গদ্যকারের সঙ্গেই উঠে এসেছিলেন সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ।
বহুমাত্রিক বিন্যাসের মাধ্যমে গল্পের বিচিত্রতায় ভর করে তাঁর সাহিত্য নির্মিত হয়েছে। সেই সাথে বিচিত্র জীবন ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর নানা লেখায়।
তাঁর গল্প ও একাধিক গ্রন্থ ভারতের প্রায় সমস্ত স্বীকৃত ভাষায় অনূদিত হয়েছে, ইংরেজিসহ বিশ্বের বহু ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মোট ১৫০টি উপন্যাস ও ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন।
তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুশির্দাবাদের খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালে ১৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন৷ ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির হাত ধরে পৌঁছেছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের আঙিনায়।
একসময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নাম লেখান আলকাপের দলে। ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে। জীবন দিয়ে চেনা বাংলার গ্রামের সেই গন্ধকে এক আলো-আধারি ভাষায় নাগরিক পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।
পদ্য থেকে গদ্য লেখায় পৌঁছন পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। ১৯৬৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নীলঘরের নটী’ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর ‘তৃণভূমি’, ‘অলীক মানুষ’, ‘মায়ামৃদঙ্গ’, ‘উত্তর জাহ্নবী’-এর মতো একের পর এক উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেন সিরাজ।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছোটদের জন্য সৃষ্টি করেন কর্ণেল নীলাদ্রি সরকারের চরিত্র। রহস্যরোমাঞ্চ সেই সব গল্পের হাত ধরে প্রতিটি বাঙালি ঘরেই পৌঁছে যান বাঙালির প্রিয় কর্ণেল নীলাদ্রি সরকার আর সাংবাদিক জয়ন্ত।
বরাবরই তাঁর লেখার কেন্দ্রে চলে এসেছে প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপন আর ধর্মের সহজিয়া প্রবণতার কথা। যেমন একসময় আলকাপের সঙ্গে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে ‘মায়া মৃদঙ্গ’ উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে। আর বাংলার সুফি, পীরদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস একাকার হয়ে যায় চতুরঙ্গ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে বেরোন ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসে।
অলীক মানুষের হাত ধরেই ১৯৯৪ সালে আসে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। ২০০৫ সালে তাঁর ছোটগল্প ‘রানীঘাটের বৃত্তান্ত’ অবলম্বনে ‘ফালতু’ ছবিটি তৈরি করেন অঞ্জন দাস।
সেইসব না বলা কথা আর বলা হল না সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের। তাঁর আগেই বিদায় নিলেন বাংলা সাহিত্যের অলীক মানুষের স্রষ্টা।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ২০১২ সালের আজকের দিনে (৪ সেপ্টেম্বর) ৮২ বছর বয়সে কলকাতায় পরলোকগমন করেন।
Be First to Comment