জন্মদিনে স্মরণঃ অশোক কুমার
পুরো বাঙালি সমাজে যে ক’টি এলেমদার রাজবংশ আছে, যেখানে বিধাতাপুরুষ সকাল-বিকেল রূপ, জ্ঞান, বহুমুখী প্রতিভার হরির লুট ছোড়েন, সেই ভাগ্যবানদের অন্যতম হল ভাগলপুরের গঙ্গোপাধ্যায়রা! অশোককুমার মা-বাবা দু’দিক দিয়ে নীল রক্তের অধিকারী। তিনি সত্যি সত্যিই খোদ রঘু ডাকাতের নাতির নাতি। রবিন হুড ধাঁচে জমিদারি সামলানোর পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় আইন পড়েছেন তারা। তার মায়ের দিকের দাদু হলেন শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সহপাঠী, দু’জনে একসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন।বঙ্কিম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরিটা নিলেন, তবে শিবচন্দ্রের রকমসকম অন্য ছিল কি-না, তাই তিনি সে দিকে গেলেন না। লোকাল বারে প্র্যাকটিস করে কোটিপতি হলেন। সেই টাকায় ভাগলপুরে ঘাট বসিয়ে, মন্দির গড়ে, স্কুল বানিয়ে মানুষের লোকের মনমুকুরে প্রায় আকবর বাদশা হয়ে উঠলেন।
শিবচন্দ্রের কিন্তু মেজাজ ছিল দরিয়া। বাড়িতে নাটক গান সংস্কৃতি চর্চার আবহ ছিল বেশ। ছোটবেলায় এই মামাবাড়িতেই থাকতেন অশোক। তখন তার নাম ‘কুমুদ’। অশোক কুমারের আসল নাম কুমুদলাল কাঞ্জিলাল গঙ্গোপাধ্যায়৷ পিতা কুঞ্জলাল ছিলেন আইনজীবী৷ মা গৌরী দেবী গৃহবধূ৷ ছোট ভাই বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার৷ অশোক কুমার ছিলেন পরিবারের সকলের ‘দাদামণি’৷ তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন৷ তবে পড়াশোনায় মন ছিল না৷ মন পড়ে থাকত সিনেমার দিকে৷ ১৯৩০ সালে বোম্বে টকিজের ল্যাবরেটরি সহকারীরূপে কর্মজীবন শুরু করেন৷ শোভা দেবীর সঙ্গে অশোক কুমারের বিয়ে হয় ৷ দৈবক্রমে অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৩৬ সালে ‘জীবন নাইয়া’ ছবিতে দেবীকা রানীর বিপরীতে৷ সেই বছরেই অভিনয় করেন ‘অচ্ছুৎকন্যা’ চলচ্চিত্রে৷ ছবিটি সাফল্য লাভ করে৷ এরপর লীলা চিটনিসের সঙ্গে ‘কঙ্গন’, ‘বন্ধন’ ও ‘আজাদ’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন৷ অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার, পদ্মভূষণ সম্মান। ১৯৪৩ সালে ‘কিসমত’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ প্রথম খলনায়ক হিসেবে সেইসময় এক কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে সুপারস্টারের মর্যাদা পান৷ ১৯৬২ সালে ‘রাখী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান৷ ১৯৬৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান৷ টেলিভিশনে প্রথম ভারতীয় সোপ অপেরা ‘হামলোগ’-এ অভিনয় করেছেন তিনি৷ অবিস্মরণীয় বাহাদুর শাহ্ জাফর ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন৷ বাংলা ছায়াছবিতেও অভিনয় করেছেন৷ তার মধ্যে ‘আনন্দ আশ্রম’ উল্লেখযোগ্য৷ ১৯৯৭ সালে শেষ অভিনয় করেন ‘আঁখো মে তুম হো’ ছবিতে৷
অশোক কুমার ২৭৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
সিনেমা স্টার হয়েও অশোক কুমার সাধারণ জীবনযাপন করতেন৷ মধ্যবিত্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন৷ অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি আঁকা ও হোমিওপ্যাথি চর্চা করতেন৷
২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর ৯০বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অশোক কুমারের মৃত্যু হয়।
অশোক কুমার ১৯১১ সালের আজকের দিনে (১৩ অক্টোবর) ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment