শু ভ জ ন্ম দি ন সা বি ত্রী চ ট্টো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : পর্দায় তাঁর ডাগর চোখের দিকে তাকিয়ে বাঙালির অদ্বিতীয় ম্যাটিনি আইডল গেয়ে উঠেছিলেন- ‘এবার মলে সুতো হব, তাঁতীর ঘরে জন্ম লব..৷’ বাংলা সিনেমার ভান্ডারে নায়িকা অনেকেই আছেন, কিন্তু তাঁর অনবদ্য আকর্ষণের ‘কুহক’ই তো মহানায়ককে দিয়ে গাইয়ে নিয়েছে ‘আরও কাছে এসো… যায় যে বয়ে রাত৷’ সারাটি দিন ধরে চেয়ে থেকেও তাঁর মনের কথা তবু জানা যায় না৷ তিনি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়৷
অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই অভিনয়ের দুনিয়ায় পা রাখা তার৷ বাংলা ছবির তখনও ‘উত্তম’ পর্ব শুরু হয়নি৷ মঞ্চে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই আসেন সিনেমাতে৷
‘বসু পরিবার’-এ প্রথম উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন জুটি তৈরি হয়৷ যে জুটি বাংলা সিনেমাকে উপহার দেবে অভিনয়-রসায়নে এক ‘অবাক পৃথিবী’৷ বাংলা সিনেমায় বেশ কয়েকটি কমেডি ছবিও তৈরি হবে এই জুটিতে৷ ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘ভ্রান্তিবিলাশ’, ‘মৌচাক’- ছবিগুলোতে তাঁর অনাড়ম্বর অথচ আশ্চর্য অভিনয় বাঙালিকে হাসিয়েছে, ভালোলাগায় ভরিয়ে রেখেছে আজও৷
বাংলা সিনেমা বহু নায়িকারই রূপমুগ্ধ হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু এমন স্নেহপ্রবণ বড়বউদি- দাদাকে লুকিয়ে যিনি ভাইয়ের জন্য সিগারেট ম্যানেজ করে দেন- তা এর আগে সিনেমার ঘর সংসারে বাঙালির তেমন ছিল না৷ তাঁর মতো করে শাসন-সোহাগের বাঁধন এমন করে বোধহয় আগে কেউ বাঁধতে পারেননি৷
এমন বাড়ির বড় বউ-যিনি গোঁসাঘরে খিল দিয়ে অনশনে বসেন, আবার দরকার হলে বাড়ির কর্তার অন্যায্য হুকুমের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারেন- এরকম স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসা মেশানো গেরস্থ ঋজু বাঙালির ঘরের মেয়েকে একমাত্র তিনিই পর্দায় তুলে আনতে পেরেছিলেন তাঁর অনবদ্য অভিনয়গুণে৷
অভিনয়ের গলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই তাঁর অনায়াস পথচলা৷ ‘নিশিপদ্ম’ এর পুষ্প যে শেষমেশ দেবী দুর্গার উপমায় মিশে যেতে পারেন, সে কি তাঁর চরিত্রায়ণ ছাড়া সম্তব হত! আবার তাঁর অনবদ্য স্ক্রিন প্রেজেন্সের সামনেই এক হয়ে মিলে যায় বিবাদমান ‘দুই ভাই’৷ এমনটাই তাঁর অভিনয় জাদু৷
প্রতিভার দ্যুতি তিনি এমন এক আটপৌরে মোড়কে ঢেকে রাখেন যে, বাঙালি দর্শক তাঁকে নায়িকার দূরত্বে নয়, বরং গ্রহণ করে আপনজনের আদরে৷ মঞ্চেও ‘কাজরী’, ‘শ্যামলী’র মতো নাটকে একদা থিয়েটার- প্রেমীদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন তিনি৷
পেয়েছেন পদ্মশ্রী, বঙ্গ বিভূষণ, বিএফজেএ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাদেমি সম্মান৷ বাংলা সিনেমার সেরা দুই অভিনেতা তাঁকেই দিয়েছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্বীকৃতি৷ উত্তমকুমার তাঁর লেখায় যেমন এ কথা জানিয়েছিলেন, তেমনই এ কথা সোচ্চারে জানিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷
আর বাঙালি দর্শক তাঁকে সেই পাঁচ-ছয় দশকের মতো আজও মনে রেখেছে রূপোলি মোহাবেশে নয়, আত্মীয়ের মতো করেই৷ সময়ের নিরিখে পর্দায় তাঁর চরিত্রের বয়সই যা বেড়েছে, তাঁর জন্য দর্শকের ভালোবাসার বয়স বাড়ে না৷
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment