স্মরণঃ ও স্তা দ বি স মি ল্লা হ খা ন
বাবলু ভট্টাচার্য : সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার একক কৃতিত্ব ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের।
১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে ‘সানাই’কে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে খান সাহেব তাঁর অন্তরের মাধুরী ঢেলে ‘রাগ কাফি’ বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সারা ভারতবর্ষকে।
ভারতীয় দূরদর্শনের ১৫ অগাষ্টের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর সানাই বাদন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লীর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর পরই ভারতীয় দূরদর্শন সানাই গুরুর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতো। পন্ডিত নেহেরুর সময় থেকেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।
আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং-সহ পৃথিবীর প্রায় সকল রাজধানী শহরেই ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব তাঁর সঙ্গীত প্রভা ছড়িয়েছেন।
এতো অর্জন সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন খান সাহেব। সবসময়ই ছিলেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। সাইকেল রিকশাই ছিল তাঁর চলাচলের মূল বাহন। অত্যন্ত অন্তর্মুখী বিনম্র এই সঙ্গীতগুরু বিশ্বাস করতেন যে, সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি তৃতীয়— যাঁরা ‘ভারতরত্ন’ পদক পেয়েছেন। তিনি ছিলেন অল্পসংখ্যক গুণীদের মধ্যে একজন যিনি ভারতের চারটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে সম্মানিত হয়েছেন।
বাবা পয়গম্বর খান ও মা মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ বিহারের বক্সারে জন্ম নেন। তাঁকে প্রথমে ‘কামরুদ্দিন’ বলে ডাকা হতো। কিন্তু তাঁর পিতামহ জন্মের পর নবজাতককে দেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার পর থেকেই তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বিসমিল্লাহ খান’।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গীত গুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। তিনি ছিলেন বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক।
ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার, তানসেন পুরস্কার, মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত, তালার মৌসিকী, ইরান প্রজাতন্ত্র, সঙ্গীত নাটক একাডেমীর ফেলো, সম্মানসূচক ডক্টরেট, বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মানসূচক ডক্টরেট, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মানসূচক ডক্টরেট, শান্তিনিকেতন প্রভৃতি সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব ২০০৬ সালের আজকের দিনে (২১ অগাষ্ট) বারাণসীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Be First to Comment