Press "Enter" to skip to content

সাধনা বসু বাংলা মঞ্চের ও সবাক চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ সা ধ না ব সু

বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলায় নবজাগরণের অন্যতম হোতা, সমাজ সংস্কারক ও ভারতীয় ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেনের নাতনি সাধনা বসু। বাবা ব্যারিস্টার সরলচন্দ্র সেন ও মা নির্মলা সেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সাধনার জন্ম হয় কলকাতার সমবায় ম্যানসন (পুরনো হিন্দুস্থান ভবন)-এ। পরে বসবাস লিলি কটেজে।

সাধনা বসুর বিয়ে হয় ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে। তাঁর স্বামী প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসুর ছেলে, স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্দেশক মধু বসু। প্রমথনাথ বসু ছিলেন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার প্রথম ভারতীয় স্নাতক।

অসমে প্রথম পেট্রোলিয়াম আবিষ্কার, ভারতে প্রথম সাবান তৈরির কারখানা নির্মাণ, এমনকী প্রথম গরুমহিসিনী লৌহ আকরিকের সন্ধান পাওয়া, যার ফলে জামশেদপুরে গড়ে উঠল ‘টাটা স্টিল ফ্যাক্টরি’, স্টিল-নগরীর সেই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের নাম প্রমথনাথ বসু।

সাধনা বসু বাংলা মঞ্চের ও সবাক চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী। উদয় শঙ্করের সমসাময়িক এই অভিনেত্রী তাঁর পরিচালনায় মঞ্চস্থ ব্যালে ভুখ ও ওমর খৈয়াম, এবং সিনেমার পর্দায় তাঁর স্বামী প্রখ্যাত পরিচালক শ্রী মধু বসুর পরিচালনায় ‘আলিবাবা’, ‘কুমকুম’, ‘রাজনর্তকী’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

খুবই কম বয়সে সাধনা মধু বসুর প্রতিষ্ঠিত কলকাতা আর্ট প্লেয়ার নামক থিয়েটার-গোষ্ঠীতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের সাহায্যকল্পে এমপায়ার থিয়েটারে কলকাতা আর্ট প্লেয়ার প্রযোজিত ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ-এর ‘আলিবাবা’ নাটকে গৌণ ভূমিকায় অভিনয় করেন।

মধু বসু পরিচালিত ‘দালিয়া’ নাটকে তাঁর প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় ১৯৩০ সালে৷ সেই বছরেরই ১৫ ডিসেম্বর মধু বসুর সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৯৩৪ সালে ‘আলিবাবা’ নাটকের পুনরাভিনয়ে মুখ্য ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেন। এই নাটকটিরই চলচ্চিত্র রূপ দেন মধু বসু ১৯৩৭ সালে৷ যার প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাধনা। ভারতলক্ষী স্টুডিও প্রযোজিত বাণিজ্য সফল এই ছবিটিকে আজও দর্শক মনে রেখেছেন।

মঞ্চ ও চলচ্চিত্র, উভয় মাধ্যমেই সাধনা বসুর প্রধান পরিচয় নর্তকী হিসাবে। শৈশবকাল থেকে নাচ শিখেছেন গুরু তারানাথ বাগচী (কত্থক), সেনারিক রাজকুমার (মণিপুরী) ব্যক্তিত্বদের কাছে৷

গান-বাজনা শিখেছেন ওস্তাদ ইনায়েত খাঁ, তিমির বরণ এবং শচীনদেব বর্মণের কাছে ৷ পিয়ানো শিখেছেন ফ্রাংকো পোলোর কাছে।

নবজাগ্রত ধ্রুপদী নাচগুলির বিভিন্ন শৈলীগুলিকে একত্রিত করে ব্যালের অনুপ্রেরণায় তিনি যে আধুনিক ডান্স ফর্মের জন্ম দেন, তাঁর অসামান্য উদাহরণ ভুখ, ওমর খৈয়াম ইত্যাদি নাটিকা। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে নাচকে একটি সম্মাননীয় আর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সাধনা বসুর অবদান অনস্বীকার্য।

‘আলিবাবা’ ছবিটির বাণিজ্যিক সাফল্যের পরে মধু বসু-সাধনা বসু জুটি একাধিক সফল বাংলা ও দ্বিভাষিক (বাংলা ও হিন্দী) ছবি উপহার দেন। এই সব ছবির মধ্যে– ‘অভিনয়’, ‘কুমকুম’, ‘রাজনর্তকী’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ‘রাজনর্তকী’ ছবিটির একটি ইংরাজি সংস্করণ ‘দ্য কোর্ট ডান্সার’ নামে মুক্তি পায়।

সাধনা বসু অভিনীত শেষ ছবি ‘বিক্রমোর্বশী’। মধু বসু ছাড়াও হিন্দী ভাষায় তিনি চতুর্ভুজ যোশী, কিদার শর্মা প্রভৃতি পরিচালকদের সাথে কাজ করেন।

সাধনা বসু অভিনীত চলচ্চিত্র : আলিবাবা, অভিনয়, কুমকুম, কুমকুম দ্য ডান্সার (হিন্দি), রাজনর্তকী (বাংলা ও হিন্দি), দ্য কোর্ট ডান্সার (ইংরাজি), মীণাক্ষি (বাংলা ও হিন্দি), পয়গম (হিন্দি), শঙ্কর-পার্বতী (হিন্দি), বিষকন্যা (হিন্দি), ভোলাশঙ্কর (হিন্দি), নন্দকিশোর (হিন্দি), শিনশিনাকি বুবলাবু (হিন্দি), তিতলি (হিন্দি), শেষের কবিতা, বিক্রমোর্বশী, মা ও ছেলে।

অভিনীত মঞ্চনাটক : শ্রীকৃষ্ণ, আলিবাবা, দালিয়া, জেরিনা, মন্দির, ওমরের স্বপ্নকথা, সাবিত্রী, বিদ্যুৎপর্ণা, রাজনটী, রূপকথা।

ব্যালে : হিন্দু নৃত্যনাট্য, ভুখ, ডিভাইন সোর্স, রিদম অফ্ ভিকট্রি, বার্থ অফ্ ফ্রিডম, উইদার নাও, সমর্পণ, দ্রৌপদী, অজন্তা।

গীত গ্রামাফোন রেকর্ড : বিদ্যুৎপর্ণা, ওমরের স্বপ্নকথা, আলিবাবার তিনটি গান (ছড়ায়ে রূপের ফাঁদ, অধরে বেণু দিয়া, ওরে ভ্রমরা)।

১৯৭৩ সালের ৩ অক্টোবর মাত্র ৫৯ বছর বয়সে সাধনা বসু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন৷

সাধনা বসু ১৯১৪ সালের আজকের দিনে (২১ এপ্রিল) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

 

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from Theater/DramaMore posts in Theater/Drama »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.