বিশেষ প্রতিনিধি: কলকাতা, ৭ই জানুয়ারি, ২০২০, সাহির লুধিয়ানভির স্বর্ণযুগের গান ‘মন রে তু কাহে না ধীর ধরে’ কোভিড সঙ্কটকালে আমাদের জীবনের বাস্তবতাকে প্রতিভাত করেছে। হিন্দী এবং উর্দু দুটি ভাষাতেই পান্ডিত্য ছিল সাহির লুধিয়ানভির। ‘তাঁর বিশেষত্ব ছিল দুর্বোধ্য দার্শনিক তত্ত্বকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করা’ বললেন ইংল্যান্ড নিবাসী টেলিভিশন প্রোডিউসার, ডিরেক্টর তথা লেখিকা নাসরীন মুন্নী কবীর। কলকাতার প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে অনলাইন সেশন টেটে-এ-টি অনুষ্ঠানে নাসরিন মুন্নি কবীর এর সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ফিল্ম সমালোচক নম্রতা যোশী। ২০২১ সালে কবি-গীতিকার সাহির লুধিয়ানভির জন্মশতবর্ষ।
বলিউডের স্বর্ণযুগের আইকনিক গীতিকার, সুরস্রষ্টা সাহির লুধিয়ানভিকে নিয়ে নস্ট্যালজিক ভার্চুয়াল সেশনে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সিনেমা-অনুরাগী ও বই-প্রেমীরা। ১৯২১ সালের ৮ই মার্চ লুধিয়ানায় জন্ম কবি সাহির লুধিয়ানভির। দেশভাগের পর লাহোর থেকে দিল্লিতে চলে আসেন। শুধুমাত্র সেইসময়কার হিন্দী ফিল্মেই জনপ্রিয় হয়নি তাঁর রচিত গান, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁর গানের সুরের জাদু আজও অমলিন।
নাসরিন মুন্নী কবির প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিদেশে ভারতীয় সিনেমার প্রচার করে চলেছেন। ভারতের ফিল্মজগতের কিংবদন্তীদের নিয়ে প্রায় শতাধিক ডকু-ফিচার এর প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন। বলিউড আইকনদের নিয়ে ২০ টিরও বেশী বই লিখেছেন নাসরিন। তাঁর সাম্প্রতিক বইটি হল “ইন দ্য ইয়ার অফ সাহির ২০২১ ডায়রি”। এই ডায়রি কিংবদন্তী কবি-গীতিকারের প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ্য। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৩৫ টি শহরের এহসাস উইমেন সদস্যাদের এই ডায়রি উপহার দেওয়া হয়।
“সাহির লুধিয়ানভিকে আবিষ্কার এবং অনুভব করলেন কিভাবে” নম্রতা যোশীর এই প্রশ্নে নাসরিন বলেন, “লন্ডনে প্রদর্শিত প্যায়াসা চলচ্চিত্র এবং তার প্রতিটি গান আমায় মুগ্ধ করে। সেইসময় উর্দু ভাষা না জানায় আমি সাহিরের প্রতিটি কথার অর্থ বুঝতে পারিনি। সমগ্র অর্থ না বুঝতে পারলেও তাঁর রচনার মধ্যে রোম্যান্টিকতা এবং বিরহের এক অদ্ভুত মিশেল ছিল, যা আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। খুব সাবলীল ভাষায় তিনি মনের আবেগ প্রকাশ করতে পারতেন। তবে তাঁর প্রায় অধিকাংশ সৃষ্টি ছিল বিরহকেন্দ্রিক। সেই গানগুলি আনন্দময় নয়। তাঁর রচিত যে মস্ত রোম্যান্টিক গান আজও আমাদের মন স্পর্শ করে সেগুলি সবকটি বিরহের। আমাদের মন যখন অবসন্ন থাকে তখন ডিস্কো গান নয়, বিরহ ব্যাথার গানই আমাদের ব্যাথিত মনে প্রলেপ দেয়। জীবন ও জগত সম্পর্কে সূক্ষ্ম এবং আবেগী দৃষ্টিভঙ্গী থাকা মানুষজন যাদের কাছে রোম্যান্টিকতা ও বিরহ সমার্থক তাদের সাথে সহজেই মিশে যেতে পারতেন তিনি”।
নাসরিনের মতে, সাহিরের রচনার বিশেষত্ব ছিল, “তৎকালীন যে সমস্ত কবিরা ফিল্মের গান রচনা করতেন তাঁরা শুধুমাত্র উপার্জনের জন্য কাজ করতেন। কারণ কবিতার বই থেকে আশানুরূপ উপার্জন হত না। তিনি আর্নল্ড ব্রাদার্স এবং চেতন আনন্দের সাথে কাজ করেছেন। কেরিয়ারের শুরু থেকেই কখনও সি-গ্রেড সিনেমায় কাজ করতে হয়নি তাঁকে। বরং প্রথম থেকেই পেয়েছিলেন বিখ্যাত মানুষজনের সান্নিধ্য। যেমন, দেব আনন্দ, শচীন দেব বর্মন। তাঁর চারপাশে ছিল শিক্ষা-সংস্কৃতিময় এক পরিবেশ। তবে কখনও তাঁর লেখা রচনা পরিবর্তন করতে হয়নি।
“বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা তৈরী করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কেউ যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন তখন তিনি তা খুব সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারেন। সাহির জানতেন কিভাবে, কোন ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করলে তা শ্রোতার মন ছুঁয়ে যাবে। সিনেমার চরিত্রগুলির ধরণ অনুযায়ী তিনি গান রচনা করতেন” নাসরিন জানান। তিনি বিশ্বাস করেন ফিল্ম তৈরী করা শুধুমাত্র পরিচালকের কাজ নয় এটি হল টিম ওয়ার্ক। হিন্দী সিনেমার ক্ষেত্রেও এটি সত্যি। পরিচালক সুচারু ভাবে নির্বাচন করেন প্রতিটি বিভাগের জন্য উপযুক্ত ব্যাক্তিকে। সাহির লুধিয়ানভি পরিচালকদের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে অভিযোজিত করে নিতে পারদর্শী ছিলেন।


Be First to Comment