Press "Enter" to skip to content

সরস্বতী পুজো হলো বাঙালির নিজস্ব প্রেম দিবস…। 

Spread the love

সংগীতা চৌধুরী : কলকাতা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। আজ সরস্বতী পুজো। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথির এই বিশেষ পুজোটি সাধারণত বিদ্যার্থীদের জন্য করা হয়। তাই এই পুজোতে তাদের বিশেষ ভূমিকা থাকাটাই স্বাভাবিক। সে কারনে সরস্বতী পুজো মানেই তাদের ব্যস্ততা। বাড়িতে – শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাল মিলিয়ে দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া। অনেক দিন আগে থেকেই ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে এই দিনটির জন্য বিশেষ ভাবে অপেক্ষা করা।

বাগ্-দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মেয়েদের শাড়ি নির্বাচন একটা বিশেষ ব্যাপার। কেউ হয়তো নতুন শাড়ি কিনে নেয় আবার কেউবা মায়ের শাড়ির ভান্ডার ঘেঁটে বেছে নেয় একান্তভাবে নিজের পছন্দের শাড়ি। এইক্ষেত্রে ছেরেলেরাও কম যায় না। নতুন বা পুরনো পছন্দের পাঞ্জাবি আলাদা করে গুছিয়ে রাখে এই বিশেষ দিনের জন্য। এই দলে কচিকাঁচারাও থাকে। তবে এই দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য কি ? শুধুই কি নিছক বিদ্যার দেবীর আরাধনা করা না কি আরাধনার অছিলায় আরো অন্য কিছু ?

সরস্বতী পুজো মানেই বিদ্যার্থীদের একটা স্বাধীন দিন। সেই দিন তারা কোন বিধি -নিষেধের ঘেরা টোপে বন্দী নয়, শুধুই মুক্তির আনন্দে মাতোয়ারা এক ঝাঁক রঙিন প্রজাপতি। কথিত আছে সরস্বতী পুজোর দিন কোন রকম বিদ্যা চর্চা নৈব নৈব চ। তাই এই দিনটা নিজের মতো কাটাবার একটা বিশেষ দিন। আজ শুধুই সেজেগুজে অঞ্জলি দেওয়া, আড্ডা আর পেটপুরে খিচুড়ি বা লুচি খাওয়ার দিন। তবে একটু উঁচু ক্লাসের ছেলে- মেয়েদের কাছে এই দিনটা অন্য মাত্রা পায়। হঠাৎ করে যেন একটু বড় হয়ে যাওয়া। ঠাকুর বায়না দেওয়া থেকে শুরু করে দেখা যায় পুজোর আনুষঙ্গিক কাজের ছোটাছুটি। আর তারই ফাঁকে চলে একটু আড় চোখে চাওয়া, একটু স্পর্শ করা বা মন দেওয়া- নেওয়া। সরস্বতীর পায়ে অঞ্জলি দেওয়ার অছিলায় কত যে চোখে চোখে মিলন হয়েছে, কত হাত ছুঁয়েছে অন্যের আঙুল তা শুধু বিদ্যার দেবীই জানেন। কত গল্প- উপন্যাসে এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে যে অজস্র রোমান্টিক কাহিনী রচিত হয়েছে তাও হিসেবের বাইরে। বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেও সরস্বতী পুজোর প্রেমের দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে।

তবে বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ভ্যালেন্টাইন ডের দৌলতে প্রেমের দিনের ওপর সরস্বতীর একচ্ছত্র আধিপত্য না থাকলেও প্রেমের মরশুমের শুরু হয় মা সরস্বতীর হাত ধরেই। কিন্তু বাঙালির এই প্রেম দিবসের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন ডে’র তফাৎ হলো ভ্যালেন্টাইন ডে তে যে কেউ তাদের প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে পারে। যেমন- বন্ধু, ভাই- বোন, পরিবারের কোন সদস্য বা বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে। আর বাঙালির এই প্রেম দিবস শুধুই প্রেমিক -প্রেমিকার বিশেষ দিন। হালকা শীতের স্পর্শে ভোরের বেলা স্নানের সময় শরীরে হলুদ মেখে এক অন্য অনুভূতির আমেজে দিনটা শুরু হয়। এরপর পলাশের সুবাসে  অনেক ভালো লাগা ও লুকোচুরি নিয়ে নতুন প্রেম কাহিনী রচিত হয়। এবং পুরনো প্রেম এগিয়ে চলে।

সরস্বতী পুজোর সেই প্রথম ভালো লাগা কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে আবার কখনো ব্যর্থ হয়েছে। তবে পরিনতি যাইহোক না কেন আমরা যতই আধুনিকতার মোড়কে আবদ্ধ হই বাঙালি যেন কোনদিন তার এই নিজস্ব প্রেম দিবসের উদযাপন ভুলে না যায় !   

 

 

 

 

 

 

 

More from CultureMore posts in Culture »
More from EducationMore posts in Education »
More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *