Press "Enter" to skip to content

সম্মান আর ভালোবাসার অ্যাডভান্স পেমেন্ট….।

Spread the love

[ প্রদীপের সঙ্গে আলাপ = প্রলাপ ] ( পর্ব- ১০৯ )
From the desk of ::–
==== Illusionist P. C. Sorcar Junior ====== ====Dr. প্রদীপ চন্দ্র সরকার M. Sc., Ph. D.====

কলকাতা, ২৭ এপ্রিল, ২০২২। ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় ডাক এবং তার বিভাগ সম্প্রতি আমাকে খুব ঘাবড়ে দিয়েছিলেন। ই–শ্, বাপরে বাপ!! কি ঘাবড়ানিই না ঘাবড়ে ছিলাম!
আপনারা তো জানেন, অতো সহজেই চমকাবার মানুষ আমি নই। সেই আমিই কিনা আনতাব্রি চিন্তায় একাকার হয়েছিলাম!!
এই চৈত্র সংক্রান্তিরই মাঝ রাতের এক ঘটনা। আমার স্ত্রী ‘জয়শ্রী’ কে ঝাঁকিয়ে , জাগিয়ে, ফিসফিস করে ডেকে বলেছিলাম :-
— “লক্ষ্মী, অ্যাই লক্ষ্মী! তুমি তো জানো,আমি হচ্ছি একজন খাঁটি সনাতনী হিন্দু । রামায়ণ-মহাভারতের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস সবই আমার আছে। আমি, ‘রাম’ নামটা পাঁচবার উচ্চারণ করবো, তুমি শুনে বলোতো আমি ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছি কিনা?!!”
জয়শ্রী ঘাবড়ে যায়। হাউ মাউ ক’রে উঠে বলে, “সে আবার কী কথা? আমার নাম ‘লক্ষ্মী’ হ’লো কবের থেকে??!!তোমার শরীর ঠিক আছে তো? জ্বর এসেছে নাকি? অমন ফিসফিস করে আমায় ডেকে কথা ব’লছো কেন ?”
—” আঃ, আস্তে বলো। তোমাকে তোমার নাম ধ’রে ডেকে এই প্রশ্ন করাটা বিপজ্জনক। বিপদে পুলিশ ডাকলেও আসবে না। বরঞ্চ আমায় হ্যারাস্ করতে টানাটানি করবে। একদম ওপর তলা থেকে হুইপ করে ক্রীতদাসদের ওপর চাপকানো অর্ডার।”

জয়শ্রী আমার কপালে হাত দেয়, বলে, ” নাঃ, টেম্পারেচার তো ঠিকই আছে। জল খাবে? গলা শুকিয়েছে?” বলেই জল আনতে যেতে চায়। আমি বাধা দিই। বলি, –” লক্ষ্মী, তুমি এখান থেকে যেও না। আমায় শুধু একটু হেল্প করো। শুধু বলো আমি পাঁচবার রাম-নাম ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছি কি না। “।
—” কী আরম্ভ করেছো, বলোতো!! বাজে স্বপ্ন দেখেছো বোধহয়। ওসব ভুলে যাও।”
—প্লিজ, আমাকে ব’লতে দাও। তুমি জাস্ট শুনে বলো আমি ঠিক উচ্চারণ করতে পারছি কিনা।
—“হায় ভগবান!…বলো। ”

আমি গুণে গুণে, ধীরে ধীরে পাঁচবার ‘রাম’ নাম করি। তারপর নিজের পাল্স্ টিপে দেখি। বলি, ” নাঃ, মরিনি এখনও, বেঁচে আছি। সন্দেহ হচ্ছিলো ম’রে গেছি কিনা! যাক গে, জবাবটা পেয়ে গেছি। বেঁচেই আছি।
— “ব্যাপারটা কি, আমায় খুলে বলো তো।”

আমি একটু দম নিয়ে বলি,
— পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট থেকে কয়েকজন এসে আমায় চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে আমার নামে, আমার ছবি দিয়ে ডাকটিকিট , নববর্ষের উপহার হিসেবে বের করবে। শুধু আমি নই, আরও অনেক বড়ো বড়ো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামেও তার সঙ্গে বের হবে।…কিন্তু, জীবিত মানুষের আবার স্ট্যাম্প বের হয় নাকি?! ম’রে যাবার পর, হা পিত্যেস করতে করতে বের করে। আমি নিজেকে টেস্ট করছিলাম। আমি, অজান্তে, ম’রে ভূত হয়ে যাই নি তো? হয়তো গেছি, কিন্তু কেউ আমাকে সে কথাটা বলছেন না, যদি কষ্ট পাই! যদি ম’রে গিয়ে ভূত হ’য়ে থাকি তাহলে আমার, মানে ভূতের মুখে তো ‘রাম’ নাম উচ্চারণ -ই হবে না। সেজন্য পাঁচবার ব’লে পরীক্ষা করে দেখে নিলাম। তুমি বললে “ঠিক আছে”, অর্থাৎ পাশ করেছি ! দূর্গা , দূর্গা! নাঃ, তার মানে আমি, বেঁচেই আছি, কী বলো..? ”

জয়শ্রী দেখি তেড়ে-ফুড়ে উঠে খাট থেকে নেমে, ঘরের সবকটা লাইট জ্বেলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। ফুঁসতে ফুসতে বলে, ” যথেষ্ট সয়েছি, আর পাগলামী সহ্য করবো না। চার ডজন বছরের ওপর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। চিরটা জীবন একটু শান্তিতে ঘুমোতে দিলে না!…এখন উনি শুরু করেছেন এই নতুন ঢঙ্। ওনার সন্দেহ হচ্ছে, উনি নাকি ভূত হয়ে গেছেন। ভূ–ত! টেষ্ট করার জন্য রামের নাম আওড়াচ্ছেন। আমাকে সেটা শুনতে হবে। তাও কিনা পাঁচ বার! …ঠিক উচ্চারণ করতে পারছেন কি না দেখতে। হ্যাঁ, পরীক্ষা যখন হচ্ছেই, আমি তাহলে ভালো ক’রেই পরীক্ষা নেব।.. এক্ষুনি। সব কিছু। ইন ডিটেইলস।”

বোবার শত্রু নেই।
সেজন্য সংক্ষেপে জবাব দিই:
—“আচ্ছা। ”

জয়শ্রী আরও রেগে যায়। বলে, ” ন্যাকা। পাঁচবার ‘রাম নাম করলে কেন? এক বার করলেই তো হ’তো।
—হ’তো না। তখন মনে হ’তো আমি হলদিরামের মতো কোনও একটা ‘রাম’কে ডাকাডাকি করছি। সে জলদি চলে আসতো।
— ” তাতে কি হতো?
— “গাঙ্গুরাম, ভিখুরাম ওদের গোসা হতো।
— ওদের সঙ্গেও তোমার ভাব আছে নাকি?
— আছে। কি ভেবেছো, রাম রাজ্য বিশাল।
— ওর মধ্যে বাঙালি কেউ আছেন?
—হ্যাঁ আছেন, বাঞ্ছারাম, পুটিরাম, বলরাম, সবাই ভালো, মিষ্টি শিল্পপতি । কিন্তু মাত্র একজনকে ডাকলে বাঙালি- অবাঙালি বিবাদ শুরু হতো।
—” তা’হলে, দু-বার দু-দিকের দুটো ‘রাম’-এর নাম করলেই হ’তো।
—না। দুবার রাম-নাম করাটার মানে হতো- “আরে ‘রাম-রাম’-” ব’লে আমি কোনও কিছুর নিন্দে করছি। তাহলে পাপ হবে। দুবার রাম নাম করা ঠিক নয়”

কথায় যুক্তি আছে। জয়শ্রী মেনে নেয়। বলে, তাহ’লে তিনবার?
—তিনবার , মানে, ‘রাম- ‘রাম’-‘রাম’ বললে, এড়িয়ে যাওয়ার , মানে তাচ্ছিল্য করার ঈঙ্গিত আছে। কিন্ত চার বার বললে মনে হয়, সত্যি-সত্যি জপ করছি । আমি একটু সেফ ডিসট্যান্স রেখে পাঁচ বার বলেছি।
— বেশ করেছো। কিন্তু তোমাকে আমি এইবার প্যাঁচে পেয়েছি। তোমার ওই ‘লক্ষ্মী’ টা কে, শুনি ? আমার নাম জয়শ্রী, লক্ষ্মী নয়। ভুলে গেছো? বুড়ো বয়সে ভীমরতী? মাঝ রাতে ফিস্ ফিস করে ‘লক্ষ্মী’ ‘লক্ষ্মী’ ব’লে ফিসফিস করে ঝাঁকিয়ে গোপনে ডাকা? আমি বুঝি, সব বুঝি!
—ভগবানের দিব্যি দিয়ে বলছি, তুমি একটু ঠাণ্ডা হও, নিশুথী রাত, জোরে কথা বললে পাড়া শুদ্ধ লোক জেনে যাবে যে আমি তোমাকে তোমার নাম ধ’রে ডাকতে ভয় পাচ্ছি। প্লীজ্ মেনে নাও ‘লক্ষ্মী’ নামটা তোমারই নাম। তুমি “জয়শ্রী” কিন্তু তার সঙ্গে ‘রাম’ যোগ করলে (ফিসফিস করে) সবাই ভুল বুঝতে পারে। পাড়াটা “ঘাসেকড়ে” ভর্তি। আমাকে তেড়েও আসতে পারেন। যাকগে বাবা, ভালোয় ভালোয় রাম নামের ওই টেস্ট-টা পার হয়ে গেছে। এখন তুমি আবার “জয়শ্রী” হ’য়ে গেছো।

ওপরের নিবন্ধ, কাব্য -টুকরোটি, পুরোপুরি “গাল্পনিক”। আগামী MAY মাসের বাইশ তারিখে, এক্জাক্টলি আমাদের বিবাহিত জীবনের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তি দিবস, পূরণ হবে। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করছে। ভুল বকছি। জয়শ্রী ভীষণ নিষ্ঠুর। মুচকে মুচকে হাসছে। ওর এই হাসিটাকেই আমি ভীষণ ভয় পাই। ও আমার নাম রেখেছে ‘বীরপুরুষ’। ও জানেনা, আমি আসলে একটা মহাপুরুষ। ওকে আমি মাতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করি। একথা বলতে গেলেই ও অন্যমূর্তী ধারণ করে। বলে, “বুড়ো হাবড়া মিনসে, বিয়ের আগে একথা ভাবিসনি কেন, অ্যা ? এখন মুখ দিয়ে ‘মা’ বেড়ুচ্ছে!? বিয়ের আগে তো ‘রাম’ছাগোলের মতো ” ম্যা” “ম্যা” ধ্বনি বের হ’তো। ”
আমি রাগ করিনা। বুঝি, যতো ভালোবাসা আমার এখন পাওনা, সে-সব ও আমাকে ওই পঞ্চাশ বছর আগেই, জীবন্ত অবস্থায় ডাক টিকিটটার মতো অ্যাডভান্স দিয়ে রেখেছে। এবার শুধু রাম নাম করে বেঁচে থাকার আর জয় লক্ষ্মী-শ্রী ব’লে তাড়া খাওয়ার পালা।

কে বললো, বোবার শত্রু নেই। ও সব বাজে কথা।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.