Press "Enter" to skip to content

সব চরিত্র কাল্পনিক…….।

Spread the love

[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ] (পর্ব – ৫৫ )

মঞ্চ-মায়াবী, জাদু শিল্পী প্রদীপ চন্দ্র সরকার,
[Dr. P.C.Sorcar Junior, M.Sc., Ph.D.] কলকাতা, ২২ মার্চ ২০২১। আমার বাবাকে, কে ম্যাজিক শিখিয়ে ছিলেন, তা নিয়ে নানা পাগোলের নানা মত। এতে অবশ্য আমি দোষ ধরি না। কারণ 'প্রলাপ' বকার অধিকারটা কি একমাত্র আমার? এই দুনিয়ার পাগলা-খানায় এই 'প্রদীপ চন্দ্র'ই কি একমাত্র একজন প্রদীপ্ত, 'চন্দ্রাহত' পেশেন্ট ? কস্টিং-এই পোষাবে না। পাগলা গারদ চালাতে প্রচুর পাগোল চাই। তাদের চালাতে প্রচুর খরচ, প্রচুর ঝক্কি । শুধু একটা পেশেণ্ট-এর ঘাড়ে সব খরচের বিল মেটাবার দায়-দায়িত্ব বর্তালে, এই গারদের ব্যাবসা লাটে উঠবে। তাঁর পাগোল-সাড়াই-এর ব্যবসাটা সামলাতে , ওই সেয়ানা মালিক নিজেই পাগোল হয়ে 'পেশেণ্ট' হয়ে যাবেন। বাবাকে আমি নিজের মুখে জিজ্ঞেস করে ছিলাম কথাটা। আর আমি নিজের কানেই পরিস্কার শুনেছিলাম তাঁর জবাবটা। কোনও শব্দ-দুষণ ছিলো না । আমার স্মৃতিও লোপ হয়নি। বেশ টনটনে মনে আছে স-বকিছু। তাছাড়া, সাক্ষ্য দিতে বাবার লেখা ডাইরিটাও তো রয়েছে

সুতরাং মাঝখানকার কোনোও সংবাদ সৃষ্টির কুটীর শিল্পের দালাল, ফেরিওয়ালা বা পেইড নিউজের 'সেলাম-সাহেব'রা , ভাগাড়ের মাংস দিয়ে 'ঢপের চপ্' বানিয়ে, 'সংবাদের পত্র', 'সত্যের ঠিকাদার' বলে নিজেকে সাজালেও, তাতে অক্ষয়, অব্যয় 'অতীত' বা 'সত্য'-র কিছু যায় আসে না । কারুর ক্ষমতা নেই সেটা পাল্টাবে । মাঝখান থেকে ওই সব পত্রিকা বা প্রকাশনীরই হয় বদনাম। বিকৃত 'ইতিহাস' বর্তমানে পরিবেশিত হলে লোকে তাকে ভবিষ্যতে 'অসত্যের প্রচারক ' বলেই চিনবে । হয়তো একটু সময় নেবে, কিন্তু 'সত্য'টা প্রকাশ পাবেই। তাতে তাঁদের 'ভবিষ্যৎ' , অবধারিত ভাবে হবে অন্ধকার । হারাবে বিশ্বাসযোগ্যতা। লোকে বলবে,খরচ করে কাগজ কিনবো আমরা, আর তাতে নকল জিনিসের বিজ্ঞাপণ, আর ওদের 'মনের বমি' ছেপে মোটা পয়সা কামাবেন ওনারা, আমরা সেটা চেটে 'খাবো', তা হয় না। অজান্তে কিছু পেটে হয়তো গেছে, কিন্তু জেনেশুনে কারুর 'বমি' চাটা !! ওয়াক থুঃ । বেচারা মালিকের দোকানটা, ওই বদনামের চোটে বন্ধ না হয়ে যায় !! যাচ্ছেও । যাকগে, ওসব 'প্রলাপে' কান না দিলেই হলো। বাবা, কাকা, ঠাকুমা, দিদিমা,দাদা মশাই , এমন কি বাংলাদেশের বিতর্কিত নেতা, আমাদের পারিবারিক অভিভাবক-সম মৌলানা ভাসানী মহোদয় ; দাদা-মশাই-এর সহপাঠি, ভারতের প্রাক্ রাষ্ট্রপতি ড. জাকির হুসেন মহোদয়, প্রায় সবার মুখেই শুনেছি, আমরা নাকি বংশ-পরম্পরায় জাদু 'চর্চা' করে আসছি। বাবা, তাঁর ডাইরীতে তো বটেই, অনেক পত্রিকায়, প্রবন্ধে, বই-তেও লিখেছেন, যে, তিনি ম্যাজিক শিখেছিলেন তাঁর বাবা, মানে , আমার ঠাকুরদার কাছ থেকে। তিনি আবার শিখে ছিলেন , তাঁর বাবার কাছ থেকে। কিন্তু বাবার আগের তাঁরা কেউই সেটা সমাজে প্রকাশ করেন নি । তখনকার সমাজে , ম্যাজিকের সঙ্গে তুকতাক, ভুত-প্রেতের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে দৃঢ়, অন্ধ-বিশ্বাস ছিলো। জাদুকরদের অচ্ছুত্ বলে ভাবা হতো। এমন কি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও জাদুকরদের 'অলৌকিক' শক্তিধর বলে ভাবতেন। স্বামীজীর ভাই মহেন্দ্রনাথও জাদুকরেরা 'পিশাচ সিদ্ধ' বলে লিখে গেছেন। বুঝুন ঠ্যালা। আপনি-আমি, রাম-শ্যাম, যদু-মধূতো কোনো ছাড়। সমাজের মাথারাই যদি এরকম এলেবেলে কথা বলেন, তো আমরা কোথায় যাই ! কোথায় আর যাবো, কেরামতি প্রকাশ না করলেই হলো ।

এই ভুল ভাবানোর জন্য তৎকালীন জাদুকরেরাই ছিলেন মূখ্যভাবে দায়ী। তখনকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জাদুকর, প্রফেসর গণপতি চক্রবর্তী বাবু, নিজেই প্রচার করতেন যে তাঁর কয়েকটা পোষা ভুত আছে। তাদেরকে দিনে, রাতে, প্রত্যহ পেট পুরে খেতে দিতে হয়। সেটাকে ‘সত্যি’ দেখাবার জন্য তিনি তার দলের সবার খাবার-দাবার নিয়ে, লোক দেখিয়ে, একটা খোলা জায়গায় ঢিবি করে রাখতেন। ভাবাতেন ভুতেদের জন্য ওই অত্তো খাবার রাখা। ইত্যাদি।দূর থেকে লোকেদের দেখানো হতো।
এগুলো আমার বানানো গপ্পো নয়। সমাজকে ব্যাক্ গীয়ারে ফেলে, অনেকেই তখন নানাভাবে, টু-পাইস কামিয়ে নিচ্ছিলেন। এখন কপালে তুলসী পাতা ছোঁয়ালে কি হবে? যা ক্ষতি করার, তা তাঁরা করে গেছেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে, আমাদের হাড়ে, মজ্জায় ওই কুসংস্কার একদম গেঁড়ে বসে আছে।

বাবা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। বলেছিলেন,”মোটেই তা নয়। ভুত-ফুত নয়, সবই বিজ্ঞান ! সত্যি যদি হয়,তাহলে তো আমিও ‘ভুতের রাজা’। আমি বলছি, আমি বিজ্ঞান দিয়ে ম্যাজিক করি। আমি জাদু-সম্রাট। ভুত বলে কিস্যু নেই।”

শিক্ষিত সমাজ বাবাকে সমর্থন করলেও, এক শ্রেণীর (অ)মানুষ তাতে ক্ষেপে ওঠেন। “কী ! অজ পাড়া-গাঁইয়া বাঙ্গালটার স্পর্ধা তো কম নয় !!! বলে কিনা ভুত-প্রেত-জিন নেই, সব বিজ্ঞান !!! উনি নাকি জাদু-সম্রাট!! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।” বাবা আমাকে ওই সময়কার, এপার বাংলার বাঙালি চরিত্রের একদম সলিড সত্যিকারের চেহাড়াটা বর্ণনা করে ছিলেন । বলেছিলেন, "আমরা পূর্ব বাংলা থেকে এপার বাংলায় আসা 'বাঙাল'রা,তখন স্থানীয়'ঘটী'দের অত্যাচারে ছিলাম জর্জরিত। স্বজাত, হিন্দু হলেও ,উঠতে বসতে ওরা আমাদের অপমান করতো। তখন যদি ওপার বাংলা থেকে আসা নতুন কোনোও প্রতিভাবান কেউ, নিজেকে মেলে ধরবার চেষ্টা করতেন, তখন এরা , তার পেছনে লেগে, মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে, একঘরে করে দেবার চেষ্টা করতো। আর বিলিতি 'সাহেব' হলে, চেটে তাকে আরও ফর্সা বানাতো। এখন তো বলতে গেলে ,সে-সব প্রায় নেই-ই ; কিন্তু তখন যে কি বিভৎস কুৎসিতভাবে ছিলো, তা বিশ্বাসের বাইরে। বাঙালির সঙ্গে বাঙালিরই - এই জঘন্য লড়াইটা এবং 'সাহেব তোষন' হচ্ছে বাঙালির অধঃপতনের আসল কারণ। " আমি বুঝতাম। কারণ ছোটবেলার সে-সব জীবন গড়ার অভিজ্ঞতা এবং মাল-মশলা নিয়েই আমি গড়ে উঠেছি। জীবনেও ভুলবো না। মনে আছে, আমাদের 'ঘটী' পাড়ার এক উকীলবাবুর বাড়ি থেকে ভেসে আসা, নিজেদের আলাদা এবং 'উন্নত' ভাবানোর এক উড়ন্ত বাণীর কবি প্রতিভা:-

(“বাঙাল মনুষ্য নয়, ওরা সব জন্তু,
লাফ দিয়ে গাছে ওঠে, ল্যাজ নাই কিন্তু।”) নিজেই ভাবতাম, এতো 'নিষ্ঠুর' রকমের বোকা কেন আমরা, এই বাঙালিরা!?? কেন??? বুদ্ধিজীবীরা কেন আপত্তি করেন না। নিজেদের মধ্যেই বিভাজন !! বোকা!!!!!ডান হাতের সঙ্গে বাঁ হাতের লড়াই !!! নিজের একটা পা-কে লাথি মেরে ল্যাংড়া করছে নিজেরই অন্য আরেকটা পা ?!! কিন্তু ....কেন !! ? না,না, জবাবটা শুনতে চাইনা। বোকা "বুদ্ধু-জীবী"দের আবার জবাব। শুনবো না ।

ছ্যাঃ !

বাবার যখন কম বয়স, তখনকার সবচেয়ে নাম করা জাদুকর ছিলেন প্রফেসর গণপতি চক্রবর্তী। কলকাতায় আসার পর বাবা এই প্রথম ঘটী-বাঙ্গালের বিকট বিকর্ষণটা, ইংরেজদের হাসিয়ে,সুখী-করণের আত্মঘাতী প্রক্রিয়াটা, তার প্রতিভা-প্রকাশক্ষেত্রে বুঝতে পারেন । বাঙালি যে কতোটা আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে তাও তিনি ঠাহর করেন । গণপতিবাবুর অনুরক্ত, ঘটী জাদুকরদের বাহিনী, উঠতে বসতে তাঁকে ‘বাঙাল’ বলে অপমান করতো। অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানো, বাঙাল ভাষায় চেঁচিয়ে, ফোড়ন কেটে ছন্দপতন করানো, এ ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা প্রত্যেকেই ছিলেন জাদুকর এবং খাঁটী নিটোল ঘটী।
বাবা, এর একটা সমাধান বের করতে চাইলেন।
করতেই হবে।
যে ভাবেই হোক।

হ্যাঁ, একটা উপায় পেলেন !

” হঃ, এইড্যারেই কয় বাঙ্গাইল্যা বুদ্ধি। Wooden Qualityর বাঙ্গাল, অ্যাক্কেবারে কাঠ বাঙ্গাল !” @বাবা সোজা গণপতি বাবুর বাড়ি যান। যদিও তিনি গণপতি বাবুর কাছে একটা ম্যাজিকও শেখেন নি। অন্যেরা সে-সব দেখালেও তিনি কখনও দেখান নি। যদিও দুজনের পরিবেশনের ঘরাণা আলাদা, তবুও তিনি 'বিদ্যাং দদাতি বিণয়ং" কথাটা মাথায় রেখে, আশী বছরের উপর বয়স্ক, বরাহনগর নিবাসী, কট্টর ঘটী-কূল-পতি, জাদু গৌরব, 'পিতৃ-প্রতিম" গণপতি বাবুকে, সশ্রদ্ধভাবে জানাতে , তাঁর বাড়িতে হাজির হন । সদ্য চিন, জাপান,বার্মা,মালয় জয় করে আসা, অঙ্কে অনার্সের মেধাবী ছাত্র, এবং লণ্ডন ম্যাজিক সার্কেলের সম্মানিত সদস্য , তেইশ বসন্তের তরতাজা, নিরহঙ্কার, যুবক প্রতুল, তাঁকে চমকে দিয়ে বলেন,"আপনি আমার আদর্শ। আপনি আমাদের সবার গুরু। আপনি আমার বাবার মতো শ্রদ্ধেয়। আমি বাঙাল। খু--ব গরীব ঘরের ছেলে। আপনার পুত্রের মতো। আমি আপনার প্রতিনিধি । আপনার ছাত্র । আপনাকে প্রণাম করতে এসেছি।

আমাকে আশীর্বাদ করুন, আমি যেন আপনার সম্মান, বাঙালির ইজ্জতকে, আরও উঁচু করে ধরে রাখতে পারি ।”

ব্যাস্!!!

হোমাগ্নিতে ঘি নয়, পেট্রল পড়লো। নিমেষে, হঠাৎ করে ঝলক দিয়ে অন্ধকারে জ্বলে উঠলো তাঁর অন্তস্থ সুপ্ত-পিতৃত্ব ! সন্তানহীন, ছিন্ন মূল,বাঁধন ছাড়া, সংসার-বিমুখ ,বাড়ি থেকে পালানো, ভালোবাসার ভিখারী, গণপতি বাবুর আবেগের বাঁধ ভেঙ্গে সব অহঙ্কার ধুয়ে, ভেসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। নতুন একটা মানুষ হয়ে, দাঁড়িয়ে উঠে স্নেহের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন তাঁর ‘নতুন জীবনের দূত’ , প্রতুলকে। কোথায় গেলো জেনারেশন গ্যাপের বা ঘটী-বাঙ্গালের চিরন্তন ঝগড়া, ভুল-বোঝার দূরত্ব আর অভিমান ? কোথায় তলিয়ে গেলো “দু-দিনের ফচকে বাঙাল ছোকড়া”র প্রতি আক্রোশ আর তাচ্ছিল্য !! বললেন, (পরে লিখে জানালেন), “আমার ছাত্র সমূহের মধ্যে, তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তুমি সত্যি- সত্যিই জন্মগত জাদুসম্রাট।”
ব্যাস্, জাদুকর মহলে বাঙাল-ঘটী মিলে মিশে ধীরে ধীরে একাকার হয়ে গেলো ।
এই হলো বাংলার জাদুর নবজন্মের ইতিহাস। রেণেশাঁ। একদম সত্যিকারের ম্যাজিকের কাহিনী। ‌” “তাতঃ, অব্রাহ্মণ নও তুমি, সত্যকূলজাত।” (((((((((((((((((+)))))))))))))))))) বাংলার ম্যাজিক, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ! তবে, পরাজিত দূর্জনেরা বলে, একদম উল্টো, তাবেদারী কথা। তাঁরা বলেন---"সে কি !! মিথ্যে কথা। সাহেবরা হচ্ছে সেরা।" আমরা নাকি ওদের নকল করে খাই। পাণ্ডিত্য ফলিয়ে বলে,-- "পি সি সরকারের সব পাবলিসিটি। হেঃ হেঃ, ওই যে আনন্দবাজারে, যুগান্তরে ফুল পেজ সংবর্ধনার বিজ্ঞাপণটায়‌ ওনার কথা ভর্তি করে দিয়েছিলেন , সেটা পড়েই তো নিউজিল্যান্ডে, রাশিয়াতে,জাপানে হাউজ ফুল হয়েছিলো। মাসের পর মাস । প্রতিভা-ট্রতিভা নয়, সব পাবলিসিটি ।"

আমি ওদের দোষ ধরি না। বরঞ্চ সম্মান করি। এঁরা ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে হেরে গেছেন। এঁরা এটুকুও বোঝেন না যে বাংলার বাইরে বাংলা পত্রিকার তেমন কদর নেই। কেউই তাঁর মাতৃভাষা ছেড়ে বাংলায় পড়তে যাবেন কেন ?
বয়ঃজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে ঝগড়া করতে ভালো লাগে না। কিন্তু তাঁরা যদি ইতিহাসকে বিকৃত করতে চান, তাহলে আমিও ছেড়ে কথা বলবো না। এঁনারা চিরটা জীবন হেরে, বিপথগামী হয়ে আছেন। ফ্রাস্ট্রেশনের ফলশ্রুতি। ওঁরা বলেন,”সব ম্যাজিকের কৌশলই -তো সাহেবদের আবিষ্কার ! কোনটা আমাদের ?” আমি বলি, “অ-নে-ক গুলো। অ—নে—ক। আমি নিজেই তো ডজন তিনেক নতুন ইলিউশন তৈরি করেছি। আর তাছাড়া আর্ট হিসেবে, ম্যাজিকের কনসেপ্ট বা কল্পনাটাই হচ্ছে আমাদের ভারতীয়দের ভাবনার ফসল। নাট্য শাস্ত্রের অঙ্গ। যন্ত্রপাতিগুলো ওরা হয়তো বেশ‌ ভালো বানায়। কিন্তু সেটা দেখাই আমরা ওদের চেয়ে ভালো ভাবে। ওরা সেটা স্বীকার করে। হিংসুটে জাদুকরেরা তো নিন্দা করবেই, কিন্তু যাঁর জন্য ম্যাজিকটা দেখানো, সেই জনগণের রায় হচ্ছে –ভারতীয়রা শ্রেষ্ঠ ! ব্যাপারটা ঠিক ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস ইত্যাদি খেলার মতো। ব্যাটটা, বলটা হয়তো বিলিতি, কিন্তু খেলি আমরা ভালো। সেটাই তো বড় কথা। কোথায় সৃষ্টি, দরকার নেই। দরকার হচ্ছে খেলায় জেতার ব্যাপারটায়।
তুলি, রঙ ক্যানভাস ওদের ভালো, কিন্তু আমরা আঁকি ভালো। বিলিতি ছেনী হাতুড়ী হয়তো ভালো, কিন্তু পাথর কেটে মূর্তি বা মন্দির আমরা বানাই ভালো।


সব্বাই তো একই বই পড়ে পরীক্ষায় বসে, কিন্তু
ফার্স্ট হয় একজন। ওরা এখন ক্যামেরা-ট্রিক করে ভিডিও-তে ম্যাজিক দেখায়। কোনো থিয়েটার হলেই ওদের পূর্ণাঙ্গ আড়াই ঘণ্টার ম্যাজিক শো হয়না। আমাদের হয়। আমরা দেখাই লাইভ শো, থিয়েটার হলে। ওদের জনগণ আমাদের দেখতে ভীড় করেন। ওদের শো তে মাছি মারে।
সিনেমার‌ ক্যামেরাটা বিদেশী, কিন্তু তা দিয়ে ভারতীয় সিনেমা তুলে, প্রাইজ পাই। তৈরি হয়‌ ভারতীয় সিনেমা ।” বাবা আমায় বলতেন, ” মনে রাখবে, সব্বাই তোমার গুরু। প্রত্যেকের কাছে কিছু না কিছু শেখবার আছে। ভালোর কাছ থেকে ভালোটা শিখবে, আর খারাপের কাছ থেকে শিখবে,’কি করবো না’, সেটা। আর কি দেখাবে, সেই কনসেপ্টটা যদি জানতে চাও, তো বাচ্চাদের কাছে জিজ্ঞেস করবে। ওরা আইডিয়া দেবে, সেটাকে তোমায় ভেবে, বুদ্ধি খাটিয়ে, বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে, রেওয়াজ করে তারপর ম্যজিক হিসেবে উপস্থাপন করবে। তবেই আসবে সাফল্য। যন্ত্র যারা তৈরি‌ করেন, তারা তৈরি করেন ডজনে ডজনে। পয়সা থাকলে, যে কেউই সেটা কিনতে পারেন। যোগ্যতা তার থাকুক বা না থাকুক, সে কৌশলটা শিখে নিলো। কিন্তু দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে পারবে ক’জন? সেখানেই আসে প্রতিভার প্রশ্ন। জাদুকর তো আর সত্যিকারের ‘যাদুকর’ নন। তিনি কাল্পনিক, ‘যাদুকর’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন। জাদুর সব চরিত্র, কাল্পনিক।” আজ এই পর্যন্ত থাক। পরে আবার লিখবো।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *