নিজস্ব প্রতিবেদক : কলকাতা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩। চিত্র সাংবাদিক হিসেবে আমার দেখা অন্যতম সেরা মনের মানুষ সুধীর দা। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে “গুরুজী”, পরোপকারী বন্ধুলোক, আপামর বালবৃদ্ধ সবাইকার কাছে। প্রথম দেখা ১৯৭৭ সালে, তারপরে তো সবসময়েই দেখা হতো। একসঙ্গে অনেক এসাইনমেন্ট করেছি। মনে নেই কতগুলো। গঙ্গাসাগরে ৫০ বছর ধরে যাওয়ার রেকর্ড কলকাতার আর কোনো ফটোগ্রাফারের আছে কি না সন্দেহ। সেখানে তো উনিই রাজা। চলে আসার আগের দিন ফিস্ট হতো। মাছভাজা মাস্ট, সব কিছুর দায়িত্বে আমাদের সকলের প্রিয় সুধীর দা। প্রচন্ড শীতে কম্বল চাই তো জোগার করে দিতেন সুধীর দা। কারোর শরীর খারাপ তো ডাক্তার দেখানোর দায়িত্ব সুধীর দার। স্নানের দিন সবাইকে নিয়ে মন্দিরে ছবি তোলাতে নিয়ে যাওয়া, সেটাও উনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ম্যানেজ করেছেন। একবার প্রেসকার্ড নিয়ে যেতে ভুলে গেছি। তা মন্দিরে উত্তর প্রদেশ থেকে আসা সিকিউরিটি পুলিশ তো ঢুকতে দিলো না আমাকে। একটু পরে দেখি সুধীর দা বড় মহান্তকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিলো। প্রথমে হিন্দি দৈনিক বিশ্বমিত্র আর সন্মার্গে ছবি দিলেও পরবর্তীকালে সম্পূর্ণভাবে সন্মার্গেই নিবেদিতপ্রাণ হয়ে থেকে গেলেন। ৭০ এর শেষ আর আশির দশকে দেখেছি কেউ কোনো অনুষ্ঠানের ছবি মিস করলে সুধীর দা যদি অকুস্থলে উপস্থিত থেকে থাকেন তো ছবি নিশ্চিতভাবেই পাওয়া যাবে। গনেশ টকিজের ক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ ভেঙে পড়েছে। সুধীর দার ফোন, এক্ষুনি চলে আয়। ওই চৌমাথার কোনো বাড়ির ছাদে পুলিশ উঠতে দিচ্ছে না। পরেরদিন একদম ভোরে একটা ভ্যানটেজ পয়েন্টের বাড়ির মাথায় তুলে দিলো ওই বাড়ির মালিককে বলে। ছবিটা বিশ্বজুড়ে হিট হয়ে গেলো।
ক্যালকাটা ফটোজার্নালিস্ট ক্লাব, স্পোর্টস ফটোগ্রাফার্স এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেস ফটোগ্রাফার্স এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার কমিটি মেম্বার, প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য (অ্যাসোসিয়েট) এবং আরও অনেক কিছু। অনেকদিন দেখা হয় নি। ভেবেছিলুম একদিন দেখা করতে যাবো। দেখা হলো না।
দেখা হলেই জিজ্ঞেস করেছে, বৌমা ভালো আছে? চাকরিটা করছে তো? মেয়ে কি করছে এখন? তোর শরীর কেমন?
সেই সুধীর দা গতকাল আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। একটা নির্ভরতা হারিয়ে গেলো। সুধীর দার সাথে প্রতিনিয়ত প্রেসক্লাবের লনে দেখা হতো এক টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া চলতো বহু মজার মজার কথা হতো আজ সবই অতীত। আমি আমার চিত্র সাংবাদিকতা জীবনে ৪৩বছর ধরে চিনি সুধীর দাকে। অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ছে।
মৃত্যকালে সুধীর দার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুধীর উপাধ্যায় এর প্রয়াণে এক্স হ্যান্ডেলে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এই ছবিটি ২০১১ সালে তোলা হয়েছিল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার- চিত্র সাংবাদিক বিকাশ দাস।
Be First to Comment