Press "Enter" to skip to content

সতীনাথ মুখোপাধ্যায় নজরুলের কাছে গান শিখতে গিয়েছিলেন, ‘র’ আর ‘ড়’ ঠিক করতে বলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এরপর তিনি আর শিখতে যান নি….।

Spread the love

স্মরণ : স তী না থ মু খো পা ধ্যা য়

বাবলু ভট্টাচার্য : পঞ্চাশ আর ষাট দশক ছিল অনেকের মতে বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগ। কথা ও সুর সেই সময়ে একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিল। তেমন সুরকারদের মধ্যে ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।

আধুনিক বাংলা গান, নজরুল সংগীত ও গজল শিল্পী হিসেবে পরিচিত সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। যার কণ্ঠে বেদনা-মধুর গান বাঙালি শ্রোতাদের মন কেড়েছে।

ছোটবেলা থেকেই সতীনাথ সংগীতানুরাগী ছিলেন। সে সূত্রে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ধ্রুপদ-ধামার-টপ্পা শেখেন। তার ঠাকুরদা রামচন্দ্র বেহালা বাজাতেন ও বাবা তারকচন্দ্র গান গাইতেন। তবে কেউ পেশাদারি ছিলেন না।

‘পাষানের বুকে লিখো না আমার নাম’, ‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো’, ‘মরমীয়া তুমি চলে গেলে’ সহ আরও কত কত গান তার।

সতীনাথ কিন্তু মোটেও তার গানের মতো ছিলেন না। বাজার করতে পছন্দ করতেন, রান্নাও করতেন জমিয়ে। মন দিয়ে শিখতেন সব কিছু।

মুসলিম মুরগি বিক্রেতা তাকে ভাবতেন মুসলমান। জিগ্যেস করেছিলেন, “মুসলমান হয়ে কেন ধুতি পরেন?”

নজরুলের কাছে গান শিখতে গিয়েছিলেন, ‘র’ আর ‘ড়’ ঠিক করতে বলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এরপর তিনি আর শিখতে যান নি।

প্রথম দিকে তিনি গান গাইলেই লোকেরা বলতো তালাত মাহমুদ এর নকল। সব সমালোচনাকে উড়িয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন সারা ভারতের নামী সুরকার ও শিল্পী।

সুর মাথায় এলে হতেন দিকশূন্য। গান আসলো তো, সিগারেটের প্যাকেট ছিঁড়ে তাতেই কথা লিখেছেন। নোটেশন করেছেন। চাঁদনি রাতে গাড়িতে যেতে যেতে হঠাৎ লিখে ফেলেছেন, ‘এখনও আকাশে চাঁদ ওই জেগে আছে’, কিংবা ‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো’।

নতুন গানের সুর ভাঁজতে গিয়ে বেখেয়ালে নিয়ম ভেঙে থানাতেও ঢুকে পড়েছেন। ভুল জায়গায় পার্কিং করে ফেলেছিলেন। ট্রাফিক পুলিশ সোজা পার্ক স্ট্রিট থানায় ধরে নিয়ে যান। তাতেও হুঁশ নেই। থানার চেয়ারে বসে বসেই সুর লাগাচ্ছেন। গলা শুনে ওসি ছুটে এসে দেখেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়!

হুগলি মহসিন কলেজে ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে। গোলকিপিং করছে যে ছেলেটি, সে মাঝে মাঝেই গুন গুন করে গান গায়। উপস্থিত দর্শক সতীনাথের কানে গেল। খেলা শেষে ছেলেটিকে ডেকে নিয়ে তিনি কলকাতায় গিয়ে ভালো ওস্তাদের কাছে গান শেখার পরামর্শ দিলেন। সে দিনের সেই গোলকিপার, পরবর্তীকালের শ্যামল মিত্র।

সতীনাথের সুরে ‘এ বার তা হলে আমি যাই’ গানটি তুলতে বসে মোহম্মদ রফি সুরকারকে বলেছিলেন, “আপনার আসল জায়গা হল বোম্বে, এখানেই চলে আসুন।” তিনি কোথাও যান নি। গান গেয়েছেন সুর করেছেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।

খুব ভালো নাকি রান্না করতেন সতীনাথ। তার প্রথম স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হয়েছিল। এরপর তিনি বিয়ে করেন কন্ঠশিল্পী উৎপলা সেনকে। খুব ইচ্ছে ছিল তাদের একটা মেয়ে হোক। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে তারা আর সন্তান নেননি।

একটা পুতুলকেই মেয়ে বানিয়ে খেলতেন ঘরে। থার্ড ওয়েভ নারীবাদীদের ভাবনার চেয়েও তিনি ছিলেন স্ত্রীর প্রতি কেয়ারিং। সবসময় চাইতেন শিল্পী হিসাবে উৎপলা সেনই নাম করুক।

মেহেদি হাসানের খুব ভক্ত ছিলেন। তিনি একমাত্র শিল্পী যিনি উর্দু পারার কারণেই মেহেদি হাসানের সঙ্গে আড্ডা মারতেন কলকাতায় এলে। তিনি মেহেদি হাসানকে দিয়ে গাইয়েছেন বাংলা গান।

সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৯২ সালের আজকের দিনে (১৩ ডিসেম্বর) কলকাতার পিজি হাসপাতালে প্রায়ত হন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.