Press "Enter" to skip to content

শীতে শরীর ঠিক রাখতে কি কি খাবার খাবেন…..!! 

Spread the love

*বিশিষ্ট খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ জয়শ্রী বনিক এই সময় কি কি খাওয়ার দিকে নজর দিতে বলছেন একবার পড়ে নিন।*

সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১ ডিসেম্বর, ২০২২। পুজোর মরশুম শেষ হতে না হতেই শীতের হালকা স্পর্শ আমাদের মনে আরেক উৎসবের বার্তা বয়ে আনে, সেই উৎসব হল খাদ্যের উৎসব। শীত মানেই নানান খাদ্য সম্ভার ও বিভিন্ন উৎসবের আনাগোনা। রসনা তৃপ্তির এক বিশেষ সময় শীতকাল। খাদ্যরসিকদের বড় আনন্দের দিন। তবে এক উৎসবের রেশ কাটিয়ে আরেক উৎসবের মধ্যে ঢোকার আগে আমাদের একটু স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজন আছে। কারন দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে ভাইফোঁটা অবধি আমাদের রোজকার খাদ্যাভ্যাসের একটা পরিবর্তন আসে, তাই অনেকেই পেটের নানান সমস্যায় ভুগতে থাকেন। আবার বছরের অন্য সময়ের থেকে শীত একটু অন্যরকম। বিশেষ করে শীত পড়ার মুখে আবহাওয়াজনিত কারনে অনেকের  সর্দি , কাশি ও জ্বরের সমস্যা লেগেই থাকে। যদিও এগুলো খুবই সাধারণ সমস্যা, তবু একটা শারীরিক অস্বস্তি থেকে যায়। ফলে শীতের মজা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়। তাই শীতের উৎসব বা নানা পার্বন ভালোভাবে উপভোগ করা যায় না। তবে শীতকালে মানুষের আরো নানা ধরনের অসুখ হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীতকালে খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখলেই সুস্থ শরীরে এই সময়টা অতিবাহিত করা যায়।


শীতকালে আমাদের শরীরে যে সব সমস্যা দেখা যায় তারজন্য প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে একাধিক খাদ্য। শীতকালে মরশুমি ফল – সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে দইকে গ্রীষ্মের মত শীতের খাদ্য তালিকায়ও রাখতে হবে। কারন চিকিৎসা শাস্ত্রে দইকে প্রোবায়োটিকপূর্ণ খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা অনেকেই প্রোবায়োটিক কি সেটাই জানি না। তাই এ ব্যাপারে আমাদের জানা প্রয়োজন যে মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রে খারাপ ও ভালো উভয় ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। পরিপাকতন্ত্রে (গাট হেলথ) খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় ও হজমের নানা সমস্যা দেখা দেয়। স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে পারে। প্রোবায়োটিক হল এমন কিছু জীবন্ত ব্যকটেরিয়া যা পরিপাকতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। যে সব ব্যক্তি হজমের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য টক দই খুবই উপকারী বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তবে তাঁদের মতে, দইয়ে প্রোবায়োটিক ছাড়াও আছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম। হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। এছাড়া অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব নিয়মিত দই খেলে। তাছাড়া দইয়ে আছে ভিটামিন বি১২ এবং ফসফরাস। এই সমস্ত পুষ্টি উপাদানই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জানা যায়, শীতে রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে মূল জাতীয় সবজি দারুণ কার্যকর। যেমন- বিট,মিষ্টি আলু, গাজর, শালগম ইত্যাদি। এই সবজিতে থাকা ভিটামিন ও নানা পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এগুলো ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এ সমস্ত সবজি শীতকালে দেহের উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে এই সময়টায় সঠিক ভাবে কি করে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে অভিজ্ঞ খাদ্য বিশেষজ্ঞ জয়শ্রী বনিক জানিয়েছেন, ” পুজোর সময় অনেকেই খুব জাঙ্ক ফুড, বাইরের খাবার এবং তেলে ভাজা খেয়ে ফেলেন। এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে যেমন- অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয় আবার জল কম খাওয়ার ফলে হয় ডি-হাইড্রেশন। এরজন্য অনেককে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমেই বলব যে শরীরের জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। সারাদিনে পরিমিত জল খেতে হবে, তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার জল। তারমধ্যে ডাবের জল, লেবুর জল, লস্যি ও টক দই রাখলে ভালো হয়। টক দই হল প্রোবায়োটিক যা গাট হেলথের জন্য খুবই উপকারী। সেজন্য দই নিয়মিত আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। বাইরের খাবার জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলাই ভাল।

বর্তমানে এই ঋতু পরিবর্তনের সময়টায় বাড়িতে তৈরি একটি বিশেষ পানীয় খেলে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার প্রবনতা অনেকটাই কমে যাবে। এই পানীয়টি তৈরি করতে হবে জলের সঙ্গে তুলসী পাতা, মধু , আদা, তেজ পাতা, লবঙ্গ ভালো করে ফুটিয়ে। খুব সকালে ‘কারা’ নামক পানীয়টি খেলে শরীরের অনেক ধরনের উপকার হবে।

তাছাড়া শীতকালীন সবজি ও ফল শরীরের জন্য খুবই  জরুরি। সবজির মধ্যে যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, কড়াইশুঁটি, বিট,গাজর, পালংশাক ইত্যাদি। আর ফলের মধ্যে কমলালেবু ,আপেল, ডালিম, সফেদা আমলকি ইত্যাদি। এই সময় খাবারের মেনুতে স্যালাড রাখাটা আবশ্যিক। লাউ ও পেঁপে দুটোই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পেঁপে সেদ্ধ ও পাকা পেঁপে – দুভাবেই পেঁপে খাদ্যগুন যুক্ত। একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে প্রাতরাশ ও মধ্যাহ্নভোজের তুলনায় রাতের খাবারটা একটু হালকা হওয়া দরকার। কারণ তাতে হজমের সুবিধা হবে। রাতের দিকে রুটি ,ওটস বা ডালিয়া খাওয়া যেতে পারে। রোজকার খাবার মেনুতে প্রোটিন রাখা দরকার। তাই মাছ বা মাংস খেতে হবে। তবে ছোট মাছ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। পাঁঠার মাংস না খাওয়াই ভালো । কারন এটা সহজে হজম হয় না, আবার যাদের নানা রকম শারীরিক সমস্যা আছে তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে যারা মাছ- মাংস খান না তাদের রোজকার খাবার মেনুতে  রাজমা, সয়াবিন, পনির – এগুলো রাখতেই হবে। আবার যাদের দুধ সহ্য হয় না তারা দই, ছানা বা পনির নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অ্যালোভেরা জুস এবং আমলকি ভেজানো জল হজমের জন্য খুবই ভালো। সারা রাত আমলকি জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হবে।

তবে আমলকি কেটে রোদে শুকিয়েও খাওয়া যায়। তাছাড়া মেথি ভেজানো জল খুব উপকারী। এটা ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে কার্যকরী। শীতে ত্বকের এবং চুলেরও উপযুক্ত যত্ন নিতে হবে। তবে সর্বোপরি যেটা প্রয়োজন তা হলো বিশ্রাম ও পরিমিত ঘুম কমপক্ষে (৭-৮ ঘন্টা )। ”

তাই শেষে বলতেই হয় শীতের উৎসবে প্রবেশের আগে শরীরকে পুরোপুরি সুস্থ রাখতে না পারলে শীতের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যাবে।

More from HealthMore posts in Health »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.