গোপাল দেবনাথ
শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিন কলকাতা কলাকুশলী প্রযোজিত মঞ্চ নাটক সুন্দর। প্রত্যেক মানুষ বা প্রতিটি জিনিষের মধ্যেই একটা নিজস্ব রূপ রয়েছে,কখনো সেটা বাইরে প্রকাশ পায় অথবা নিমজ্জিত থাকে অসুন্দরের আড়ালে। সেটা যদি আমরা খুঁজে বের করে প্রকাশ ঘটাই তাহলে সেই মানুষ বা জিনিষটি আর অসুন্দর থাকে না। প্রজাপতি সুন্দর সবাই জানি,কিন্তু ফুলের ওপর বসে তার মধু খাওয়ার যে গর্বিত ভঙ্গী সেটা আমাদের নজর এড়িয়ে যায় । যে অসুন্দর ছেলেটি কারখানায় হাতুড়ি চালায়,তার ছন্দোময় দেহভঙ্গী আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। এই অপ্রকাশিত সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়ে সকলের মুখে হাসি ফোটাবার মন্ত্র রয়েছে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের এই সুবিদিত ও বহুল পরিচিত নাটক সুন্দর এ।
এই নাটক বহুবার বহু নাট্যদল অভিনয় করেছে। রাজশ্রীর নির্দেশনায় দক্ষিন কলকাতা কলাকুশলী নতুন আঙ্গিকে অনবদ্য উপস্থাপনায় এই নাটকের সারমর্ম পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করলো। এই নাটকের মূল চরিত্র মল্লিকা,যিনি অসুন্দরের মধ্যে সুন্দরের বীজ বপন করে সবাইকে আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। নির্দেশিকা রাজশ্রীর সুচারু ও নিখুঁত অভিনয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল নাটকের দৃশ্যগুলি। প্রতিটি চরিত্রের বলিষ্ঠ অভিনয়ে নাটকটি দর্শকদের মন জয় করেছিল। সৌরভের চরিত্রে সুদর্শন দাসের সুঅভিনয় সকলকে আপ্লুত করে। রিসেপশনিস্টের চরিত্রে পাপড়ি দাসের অভিনয় ও বাচনভঙ্গী দর্শকদের মনে দাগ কাটে। ডিরেক্টরের চরিত্রে ডক্টর সৌরভ চন্দ্র ও ডেপুটি ডিরেক্টরের চরিত্রে নীলাঞ্জন পালের সাবলীল অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে। চন্দ্রার চরিত্রে অনন্যা চন্দ্র বেশ সপ্রতিভ ছিল।
নাটকে আলোর ব্যবহার মন্দ নয়। তবে আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে । নাটকের সেট বেশ জাঁকজমকপূর্ণ,এই নাটককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পূর্ণমাত্রায় সহায়তা করেছে নান্টু দত্তের এই মঞ্চ ভাবনা। ছোটো মঞ্চের ক্ষেত্রে আসবাবের ব্যবহার কম হলে ভালো হতো।এই নাটকে দর্শকদের মনোসংযোগ বেশ অটুট ছিল। এক কথায় বলতে গেলে রাজশ্রী নির্দেশিত দক্ষিন কলকাতা কলাকুশলীর নাটক সুন্দর বেশ বলিষ্ঠ প্রযোজনা।
Be First to Comment