Press "Enter" to skip to content

শিশির কুমার ভাদুরী’র অভিনয় বহু শিক্ষিত যুবককে পেশাদার নাট্যাভিনয়ে যোগদানে উৎসাহ জুগিয়েছে………

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী

বাবলু ভট্টাচার্য : শিশির কুমার বাংলা রঙ্গমঞ্চের এক কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। নাট্যমঞ্চে তিনি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তার অভিনয় বহু শিক্ষিত যুবককে পেশাদার নাট্যাভিনয়ে যোগদানে উৎসাহ জুগিয়েছে। তিনি বঙ্গবাসী স্কুল থেকে ১৯০৫ সালে এন্ট্রান্স, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯১০ সালে বিএ এবং ১৯১৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পেশাগত জীবনের প্রথমে শিশির কুমার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ও বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল এবং অধ্যাপনাকালীন শৌখিনতাবশত তিনি অনেক বাংলা ও ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেন। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট মঞ্চ ছিল তার অভিনয় স্থান। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ নাটকে অসাধারণ অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন। ১৯২১ সালে পেশাদার অভিনেতারূপে তিনি ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১০ ডিসেম্বর ‘আলমগীর’ নাটকে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিন্তু ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে মতানৈক্য ঘটায় মঞ্চ ছেড়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’ ও ‘চন্দ্রনাথ’-এর চিত্রায়ণে একই সঙ্গে পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকা পালনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

রঙ্গমঞ্চে শিশির কুমারের প্রত্যাবর্তন ঘটে ১৯২৩ সালে। এ সময় তিনি একটি নাট্যদল গঠন করেন এবং ২৫ ডিসেম্বর ইডেন গার্ডেন্স-ক্যালকাটা এক্সিবিশনে মঞ্চায়িত ডি এল রায়ের ‘সীতা’ নাটকে রামচন্দ্রের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়-প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট নাট্যমন্দিরে মঞ্চায়িত যোগেশ চৌধুরীর সীতা নাটকে শিশির কুমারের অভিনয়ে অভিভূত হয়ে রসরাজ অমৃতলাল বসু তাকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। এ নাটকের প্রয়োগ-নৈপুণ্যে তিনি বিলেতি ভাবধারার পরিবর্তে এক নতুনত্বের সূচনা করেন। তিনি কনসার্টের বদলে রোশনচৌকি, আসন-ব্যবস্থায় বাংলা অক্ষর, প্রবেশপথে আলপনা ও পূর্ণকলস, প্রেক্ষাগৃহে চন্দন-অগরু-ধূপের গন্ধ, পাদপ্রদীপের পরিবর্তে আলোক- সম্পাত এবং সীনের পরিবর্তে বক্স সেট প্রয়োগ করেন। শিশির কুমার কর্নওয়ালিস থিয়েটার (বর্তমান শ্রী সিনেমা) মঞ্চেও কাজ করেছেন। নাট্যমঞ্চে একাধিক নাটকে অভিনয় করে শিশির কুমার যশস্বী হন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হলো : রঘুপতি ও জয়সিংহ (বিসর্জন, ১৯২৬), যোগেশ (প্রফুল্ল, ১৯২৭), জীবনানন্দ (ষোড়শী, ১৯২৭), নাদির শাহ (দিগ্বিজয়ী, ১৯২৮), নিমচাঁদ (সধবার একাদশী, ১৯২৮) এবং চন্দ্রবাবু (চিরকুমার সভা, ১৯২৯)। ১৯৩০ সালে তিনি তপতী নাটকে বিশেষ অভিনয় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেন। আর্থিক অনটনের দরুণ এ বছরই তিনি স্বীয় মঞ্চ নাট্যমন্দির ছেড়ে স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। তিনি অনেক সবাক ও নির্বাক চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় করেন। ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিশির কুমার নিজস্ব নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে আমেরিকা যান। পরের বছর ১২ জানুয়ারি তিনি নিউইয়র্কের ভ্যান্ডারবিল্ট থিয়েটারে ‘সীতা’ মঞ্চায়নের মাধ্যমে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৪২ সালে ‘শ্রীরঙ্গম’ নামে একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বিশ্বরূপা থিয়েটার নামে পরিচিত। শ্রীরঙ্গমে মঞ্চস্থ বিভিন্ন নাটকের মধ্যে ‘মাইকেল’ নাটকের নাম-ভূমিকায় তার অভিনয় সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এখানে তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হলো : ‘বিপ্রদাস’, ‘তখৎ-এ-তাউস’, ‘বিন্দুর ছেলে’ ও ‘দুঃখীর ইমান’।

তার অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন; বরং তার আকাক্ষা ছিল একটি জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করা এবং এতেই তিনি খুশি হতেন।

১৯৫৯ সালের ৩০ জুন বরাহনগরস্থ নিজ বাসভবনে শিশির কুমার ভাদুড়ী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শিশির ভাদুড়ী ১৮৮৯ সালের আজকের দিনে (২ অক্টোবর) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.